এস.এম.রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: সরস্বতী পূজা ঘিরে চলছে প্রতিমা তৈরি ও প্রস্তুতি। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মৃৎ শিল্পীরা। কাঁদামাটি, বাঁশ ও খড় দিয়ে সরস্বতী প্রতিমার কাঠামো ও মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন কারিগররা সরস্বতী প্রতিমার রূপ ফুটিয়ে তুলতে রং-তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত। রং-তুলির কাজ শেষে প্রতিমা পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বিক্রয় হবে। তবে গত কয়েক বছরের চেয়ে এবছর সরস্বতী পূজার আয়োজন কমে যাওয়ায় প্রতিমা কেনার চাহিদার সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন মৃৎ শিল্পীরা।
সরেজমিনে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার উপজেলার পাকেরহাট ধানহাটি রোড ও হাসপাতাল রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিল্পীরা সরস্বতী প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের সুনিপুণ হাতে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন আকারের প্রতিমা। পছন্দ অনুযায়ী প্রতিমার অর্ডার ও ক্রয় করতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। সেই সাথে খানসামা সেন পাড়া, পাকেরহাট আদর্শগ্রাম ও কাচিনীয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা তৈরী হচ্ছে।
মৃৎশিল্পী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সনাতন ধর্ম মতে বিদ্যার দেবী সরস্বতী। সনাতন শিক্ষার্থীরা আশীর্বাদ লাভের আশায় প্রতিবছর পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করে থাকেন। এসময় বাড়িতে বাড়িতে নির্মাণ করা অস্থায়ী মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূজা উদযাপনে শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে প্রতিমা তৈরীর সরঞ্জামাদির মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় প্রতিমার দাম চলতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। গতবছরের চেয়ে প্রতিমা প্রতি এবছর ২০০-১০০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকেরহাট ধানহাটি রোডের প্রতিমা
তৈরী ও বিক্রয়কারী ধর্মদেব রায় বলেন, প্রতিমা তৈরীর সকল জিনিসপত্রের দাম বেশী তাই প্রতিমার দাম কিছুটা বেড়েছে। আকারভেদে ১০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিমা বিক্রয় করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশী হওয়ায় প্রতিমা তৈরী-বিক্রি করে লাভ এখন কম। তবুও এই কাজের প্রতি আগ্রহ থেকে তৈরী ও বিক্রি করছি।
পাকেরহাট হাসপাতাল রোডের প্রতিমা তৈরীর কারিগর নরেশ রায় রায় বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছি। জিনিসপত্রের দাম বেশী হওয়ায় লাভ কম তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পূজায় প্রতিমা তৈরীর কাজ করে নিজের চলার মত উপার্জন হয়। তবে এই বছর আগের তুলনায় প্রতিমার চাহিদা কম বলে তিনি জানান।
প্রতিমা অর্ডার দিতে আসা প্রশান্ত রায় দীপ্ত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছরে মত এবারও সরস্বতী পূজা উদযাপন করব। তাই পছন্দের প্রতিমা অর্ডার দিতে এসেছি। তবে এবার দাম একটু বেশী। তবুও বিদ্যার দেবীর পূজা-অর্চনা করতে স্কুল ও বাসায় সল্প পরিসরে আয়োজনের চেষ্টা চলছে।
খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজমূল হক বলেন, সরস্বতী পূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে থানা পুলিশ নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তবুও সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান রইলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মো: কামরুজ্জামান সরকার বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সরস্বতী পূজা উদযাপন করতে সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।