মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
স্বপ্ন দেখাতে এসে স্বপ্ন ভঙ্গের শিকার দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড অ্যাকসেস এনহ্যামেন্ট প্রজেক্টের (সেকায়েপ) শিক্ষকরা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকায় মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে এসে নিজেরাই এখন মুখোমুখি হয়েছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও মেয়াদ বাড়ানো বা স্থায়ীকরণের কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এ উপজেলার ১২২ জন শিক্ষক। গভীর অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর হতাশাগ্রস্ত এ শিক্ষকরা দাবি করেছেন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোসহ এমপিওভুক্ত করার।
গত ডিসেম্বর মাস থেকে বন্ধ হয়ে আছে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্প- সেকায়েপ ( সেকেন্ডারী এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড একসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট) এর অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের (এসিটি) বেতন-ভাতা। ফলে সারা দেশের ন্যায় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ১২২ জন শিক্ষকরা ডিসেম্বর মাস থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো সেই সঙ্গে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালে শুরু হয় ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যাসমেন্ট প্রজেক্ট ( সেকায়েপ )। পরবর্তীতে ওই প্রকল্পের আওতায় এসিটি ( অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক ) কম্পোনেন্টের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০১৫ সালে ৩ বছর মেয়াদে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় একটি করে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ হাজার ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল-মাদ্রাসা) ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ৫ হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক (এসিটি) নিয়োগ দেয়া হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এবং এর মান উন্নয়নে আগ্রহীদের জন্য সৃষ্টি হয় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। অনেক মেধাবী শিক্ষিত জড়িয়ে পড়েন এ প্রকল্পে। এমন ১২২ জন শিক্ষক আছেন খানসামা উপজেলায়। গত ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এ প্রকল্পের মেয়াদ। শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হয়ে ঝরে পড়া রোধ করতে আসা শিক্ষকরাই এখন অস্তিত্ব সংকটে। অনেকেরই আবার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন। হতাশাগ্রস্ত এসব শিক্ষক তাদের এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বাংলাদেশ এসিটি এসোসিয়েশন, খানসামা উপজেলায় কর্মরত শিক্ষকরা দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। তারা আরো জানান, জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদানসহ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে চাকরির মেয়াদও বাড়তে পারে, এমনকি করা হতে পারে এমপিওভুক্ত, এমনটায় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিলো। এদিকে গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আজও তারা তাদের নিয়োগকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এসিটি এসোসিয়েশন, খানসামা উপজেলা শাখার সভাপতি বালাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত সেকায়েপ শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক খানসামা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত সেকায়েপ শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকার আমাদের চাকরির মেয়াদ না বাড়ালে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষক বেকার হয়ে পড়বে। আবার অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাদের সরকারি চাকরিতে আবেদন করার বয়স নেই। ফলে আমরা সেকায়েপ শিক্ষকরা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে আছি।
এ ব্যাপারে উপজেলার নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, সারা দেশের ন্যায় আমাদের খানসামা উপজেলায় সেকায়েপের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ফলে শিক্ষার মান আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এ প্রকল্প চালু রাখলে শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
এ ব্যাপারে উপজেলার খানসামা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রান শিক্ষক মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, সেকায়েপ প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। আমার স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক সেকায়েপ প্রকল্প থেকে দেওয়ার ফলে ক্লাসে পাঠদানের মান অত্যন্ত ভালো এবং প্রতিষ্ঠানের ফলাফল অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সমস্যার সমাধান করুন। এতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যও পূরণ হবে উপরন্তু দুর হবে শিক্ষকদের দৈন্যতাও।
খানসামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আজমুল হক জানান, সেকায়েপ প্রকল্পের এসিটি শিক্ষকদের ব্যাপারে আমি মাঝে মধ্যেই প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এ মেধাবী শিক্ষকদের দক্ষতা ও পাঠদানের কৌশল বিবেচনায় তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করলে এ উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থা অনেকদুর এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
এদিকে উপজেলার সচেতন অভিভাবকরা মনে করছেন, খানসামা উপজেলায় এমনিতেই শিক্ষক সংকট থাকায় সেকায়েপ প্রকল্প পুনরায় চালু না হলে শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক হুমকিতে পড়বে এবং পাঠদান ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষক নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন