(আমার খামে তোমার চিঠি) 

 

লেখক-রুদ্রনীল (ছদ্মনাম)

পর্ব ১

মনের ভাষা বুঝতে পারে এমন একটা মানুষ ঈশ্বরের উপহার হয়। সবাই তাদেরকে হুট করে পায় না। কেউ পেলেও  আবার হারিয়ে ফেলে । কারণ তারা মোহ নিয়ে আসে না জগতে। আসে অল্প  একটু  ভালোবাসা নিয়ে।   এই দূর্লভ ভালোবাসাটুকু কারো জন্য তারা মনের ব্যাগে ভরে রাখে। যার এমন ভালোবাসার কথা বলছিলাম ও হল হৃদি। 

ভালো নাম হৃদিপদ্ম চৌধুরী। হঠাৎ করে পরিচয় তার সরোবরের সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল কমিনিউকেশনের ফেসবুকের মাধ্যমে।সময় খুব বেশিদিন নয় হঠাৎ করে একটা গ্রুপে কমেন্ট করেছিল হৃদি।   আর তা ছিল সরোবরের একটা অগোছাল পোস্টে।  

সচরাচর তেমনটি কেউ করে না তাকে । তাই  কমেন্ট টা দেখে চমকে গিয়েছিল ।  হঠাৎ  করে নাম টা চোখে পড়ল কমেন্টে ।  লেখা  ছিল, “কিছু ভালো লাগা অগোছাল হলেও গুছিয়ে রাখতে পারে পুরো দুনিয়া “। ওটা আর কেউ না ছিল হৃদি।

এমনিতেই কখনো কাউকে কমেন্ট করে না ও ।  কিন্তু এই পোস্টে এমন কিছু ছিল, যা  ওর খুব  ভালো লেগেছে। কোন অপশন ছিল না ।  ছিল একটা ক্যাপশন, “যে বুঝবে আমার মন, আমি হবো না তার জীবন। কারণ যা আমার ভালো লাগে দুনিয়ার, তার তা ভালো লাগে না।  কারণ আমি বরাবরই অগোছাল। নিজের বায়োডাটা অগোছাল হলেও গুছিয়ে দিলাম।  যদি আমার তুমির ভালো লাগে ! সাদামাটা হাতে লেখা অগোছাল একখানা বায়োডাটা। তাতে লেখা, “আমি সরোবর। ঝরা বৃষ্টির  জলের মত গড়িয়ে পড়ি। চাইলে ভিজিয়ে দিয়ে চলি। সবার মন আনন্দে নিজের মন টা নিরানন্দে সঙ্গী করি গিটার।গানে গানে আজ দিলাম আমার পরিচয়। ” 

হৃদির খুব কৌতুহল হয়। কে ছেলেটা! কি তার পরিচয়? প্রোফাইল লক আর অনলাইনেও আসে না ছেলেটা! বেশ কয়েকমাস কেটে গেল। হঠাৎ করে আরেকটা পোস্ট  এর নোটিফিকেশন আসল।  হৃদি তড়িঘড়ি করে দেখল পোস্টটা।  গিটারে তোলা প্রিয় গানের টিউন,  ” Aa leke cholu tujko ek aishe desh mein “। গিটারের টোন এর সাথে ছেলেটার ভয়েস।  গানের পোস্টটা খুব ভাইরাল হয়েছিল তখন।  সবাই খুব প্রশংসা করে ছেলেটার গানের।  কিন্তু ছেলেটা নিরুত্তাপ থাকে।  কোন রিপ্লাই দেয় না ।  হৃদি রোজ একবার করে  এসে পোস্টটা দেখে।  গানটা শুনে চলে যায়, আর কতো এমন করে চলা যায়?

তখন শুধু কমেন্টে কথা হল।  আর কোন কথা হলো না । এদিকে পোস্টটা পুরো ভাইরাল  হয়ে গেল। সবাই খুব লুফে নিল পোস্টটার গিটার টিউনটি ।  ওদিকে সরোবর চাকরির খোঁজে নতুন পথে যাত্রা শুরু করল। ঘুরতে ঘুরতে এল হৃদির শহরে।  কিন্তু সরোবর এর  নামে ফেসবুকে  অগোছাল স্বপ্ন। হৃদির সাথে শুধু  কমেন্টে আলাপ হয়েছে একটু, আর আগাইনি। 

সরোবরের পছন্দ হয়েছিল কমেন্টটা।  কিন্তু হৃদিকে চিনে না, আর অনলাইনে আসে না তাই  তেমন কথা ও হয় না।  তবুও সরোবরের ভালো লেগেছে কমেন্ট ওয়ালীকে । তাই সে কমেন্টটা স্ক্রিনশট নিয়ে নিল।  

কেউ জানে না সরোবর হৃদির কমেন্ট টার স্ক্রিনশট, নিজের ল্যাপটপে ওয়াল পেপার করে রেখেছে।  তাতে হৃদির পিছনে তাকানো ছবির মুখ নেই।  সরোবর মাত্র এমবিএ শেষ করল। 

বাবার ব্যবসা আছে।  কিন্তু ওর ইচ্ছে নিজে কিছু করবে।  তাই এই নতুন অজানা পথের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।  মা বাবার একমাত্র ছেলে সরোবর।  বড্ড আদরের, কখনো তাকে  বাবা মা একা যেতে দেয়নি কোথাও।  অথচ আজ সে একাএকা একটা ব্যচেলার ফ্ল্যাটে থাকছে । আর চাকরির চেষ্টা করে চলছে । 

কিরে মামা  কি করস?  তব্ধ এলো ঘরে।  সরব সরে বসল সরব হলো সরোবরের ডাক নাম। সরব ছেলেটা কেমন যেন চুপচাপ খুব  সারাদিন শুধু গিটার আর গিটার, আর কোন কাজ নেই তার। ভালো গানের গলা। কিন্তু  গায় না তেমন,  বলতে গেলে কারো সামনে আসতেই চায় না একদম। 

সরব বলল,” আরে তব্ধ অমন দব্ধ করে এলি কি ব্যাপার রে! কিছু নতুন পেলি নাকি? ” সরব হাসতে হাসতে বলল। তব্ধ বলল, আরে নাহ্ তোর জন্য টিউশন আছে  করাবি তুই ?  সরব বলল কোন ক্লাস কি পড়াতে হবে?  তব্ধ বলল, ক্লাস টেন এর একএা মেয়ে । পাঁচ হাজার দিবেন তারা। 

দেখ বিজ্ঞাপনের ঢাকা শহরে এমন ঝকমারি টিউশনি, তাও আবার সুন্দরী মেয়ে। রাজ্য আর রাজকন্যা একসাথে পাবি।  আরে ধ্যাত….! থাম তো মুড নষ্ট করে দিলি।  যা চা করে আন এখন। 

তদ্ধ এমন সময় সহাস্যে রুমে ঢুকে ।  “বলবীর… বল চির উন্নত মমশির…। ওই শির নেহারী আমারি নত শির। 

সরব বলল, “আরে থাম চা করছি আয়। আজ গ্রীণ টি সাথে বিস্কুট ।”

ওদিকে হৃদির খালাত বোন অস্মির জন্য  টিচার দরকার। পেপারে বিজ্ঞাপন দেওয়া হল।  কিন্তু কোন খবর নেই। হৃদি এল খালার বাড়ি বেড়াতে।  অসম ও অস্মি দুই যমজ ভাই বোন,  সাথে জুটল হৃদি। 

সরব কতগুলো অগোছাল পেপার কাটিং হাতে নিল। তাতে ঠিকানা লেখা আছে, “হাতির ঝিল খিলগাঁ স্কুলের  সামনে। আর একটা ফোন নম্বর মোটা হরফে লেখা আছে। সরব এমনিতেই এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে না। খুব সিম্পল ভাবে চলাফেরা করে। 

একটা কল দিতেই ওপাশ থেকে ধরল হৃদি। হ্যালো.. বলতে হৃদি চমকে গেল । চেনা কন্ঠস্বর!  কিন্তু ধরতে পারল না । স্নিগ্ধ  মোলায়েম স্বর, “আসসালামু আলাইকুম “।

আপনার ওখানে টিউশনের জন্য পেপারে একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে ।  আমি এই জন্য কল দিয়েছি ।  ওপাশে হৃদি বলল জ্বি…।

সরব বলল কবে আসব ম্যাডাম ?  হৃদি বলল জ্বি পরে জানাব।  জ্বি আচ্ছা বলে কেটে দিল কল। হৃদি পুরো অবাক হল।  দুনিয়ার পোলাপান ওর কন্ঠ শুনলে পাগল হয়ে যায় । আর কথা বলে উনি কল কেটে দিল! যাকগে। 

কিছুক্ষণ পরে সরব কথা বলে নিল হৃদির খালামুনির সাথে। আগামীকাল থেকে পড়াবে এই সিদ্ধান্ত হল। পরেরদিন সরব গেল হাতির ঝিলে অস্মিদের বাসায়। কলিং বেল দিলে হৃদি দরজা খুলে দিল। সালাম দিয়ে সরব বলল,” জ্বি আমাকে আসতে বলা হয়েছে আজ। ” হৃদি বলল কে আপনি ? ” আমি সরোবর সারোয়ার প্রাইভেট টিউটর।  ওহহ, আপনি আসুন আসুন অস্মির মা এসে পিছন থেকে ডাক দিল সরবকে। 

হৃদি এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিবে। তাই আর থাকতে চাচ্ছে না খালামনির বাসায়।  খালামুনি ওকে আর কটাদিন থাকতে বললেন। 

কারণ  অস্মির জন্মদিন। 

সরব যথারীতি পড়াচ্ছে আর গুণগুণ করছিল।  সেই টোন টা যেটা ভাইরাল হয়েছিল। তব্ধর ল্যাপটপে থেকে  পোস্ট করা হয়েছিল। তার ল্যাপটপটা ভুল করে ফেলে এসেছে তাই। তব্দ কিছু কাজ নিয়ে  বাড়ি যাওয়ায় আর বলা হয়নি বিষয়টা তাকে। সরবও আর আগ্রহ দেখায়নি  জানার।  তাই সে জানেনা কত কি হয়ে গেল।

  এদিকে হৃদি ঘুম থেকে ধড়মড় করে উঠে বসে বিছানায় ।  এই সেই আওয়াজ! সেই স্বর! কোথায় হল? কিছু না বলে সে চুপচাপ উঠে দরজার ওপাশে এসে দাঁড়াল । আর ফোনে  রেকর্ড করে নিল।  তারপর রুমে এসে আরে এতো সেই  কন্ঠ! যেটা ঐ পোস্টে শুনেছি। 

মনে মনে ভাবতে লাগল হৃদি  । কি  হতে পারে এই রহস্য? আর কে ও? কিন্তু এত সহজে তো সে মেনে নিতেও পারছে না! এটাই কি সেই ছেলে। 

অস্মি ও অস্মির ভাই অসম  একই ক্লাসে পড়ে। পরশু তাদের দুইজনের জন্মদিন। তাদের ইচ্ছে তাদের  সরব ভাইয়াও যেন জন্মদিনে আসেন। অসম এর টিউটর চলে যাওয়ার পর , অসম তার বাবা ও মাকে আবদারের সুরে বিষয়টা খুলে বলল।

অসম এর সাথে  তেমন কথা হয়নি সরবের। কিন্তু অসম সরবের ফ্যান অস্মি ও অসমের দুইজনের পছন্দ হয়েছে সরবকে । আর শ্রদ্ধা করে। ভিড়ানো 

দরজা ওপাশ থেকে টোকা পড়ল। 

সরব তখন পড়াচ্ছে অস্মি কে ড্রইংরুমে বসে।

আরে আন্টি! জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আসুন আন্টি কিছু বলবেন? পিছন পিছন অস্মির বাবাও ছিলেন । তাকে দেখে সরব একটু চুপ হয়ে গেল। গলা খাকড়ি দিয়ে  সম্রাট সাহেব বললেন, “তোমার নাম কি?  দেখ আমাদেরকে নিজের লোক মনে করতে পার। তুমি করে বললাম কিছু মনে করলে না তো? “

সরব বলল জ্বি না স্যার ঠিক আছে। আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন? আমার নাম সরোবর সারোয়ার, এম বি এ শেষ করলাম। চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছি। কথাটা শেষ হতে সম্রাট সাহেব বললেন  জ্বি ভালো আছি I আচ্ছা..  Young Boy একটা কথা বলার ছিল।  সোফায় বসলেন সম্রাট সাহেব সাথে ওনার স্ত্রী।  আর ওদিক তারা দুই ভাই বোন আর আড়ালে দাড়িয়ে আছে  হৃদি।

ওর মনে নানারকম প্রশ্ন! 

জ্বি স্যার বলুন। সরব টেনশনে ছিল কি থেকে হয়েছে। তার কোন ভুল  হয়নি তো! মনে মনে এমনটা ভেবে ঘামতে শুরু করলেন। সম্রাট সাহেব বললেন, আমার ছেলে মেয়ের অনুরোধ, সাথে আমাদের ও।  তুমি তাদের জন্মদিনে যদি আমার আতিথ্য গ্রহণ করতে, আমার খুব ভালো লাগত।

সরব ইতস্ততভাবে বলল জ্বি.. না মানে..। 

এমন সময় অস্মি, অসম ও তাদের মা রেবা আহমেদ একবারে জেঁকে ধরলেন। সমস্বরে বললেন, “না বললে হবে না আসতে হবে। “

তারাও বলল জ্বি ভাইয়া আপনাকে আসতে হবে।  সরব একটু হেসে বলল  জ্বি অবশ্যই আসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *