রতি কান্ত রায়,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কম খরচ, ভালো বাজার মূল্য, বেশী লাভ ও বছর শেষে এক সাথে মোটা অংকের টাকা হাতে আসায় ফুলবাড়ীতে সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষক । বাড়ীর পিছনে বা বাড়ী থেকে দুরে উচু ভিটা জমিতে সুপারির বাগান লাগিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন । এতদিন এ অঞ্চলে বাড়ির সাথে লাগা পিছন পাশ্বে সুপারির বাগান করার চিরাচরিত রেওয়াজ ছিল।
সারা বছরের সুপারির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সুপারি বিক্রি করত । এখন সে রেওয়াজ ভেঙ্গে বাড়ি থেকে দুরে উঁচু ভিটা জমিতে সুপারির বানিজ্যিক বাগান লাগার হিড়িক পড়েছে ।
সুপারির প্রতি উত্তর বংঙ্গের মানুষের দুর্বলতা প্রাচিনকাল থেকে। আত্নীয় এলে প্রথম পান সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করার রিতি এখনও প্রচলিত । লোকসাহিত্য ও গানে পান দিয়ে প্রিয়জনকে প্রথম আপ্যয়ন করার উপমা ছড়িয়ে আছে । সুপারি গাছ ছাড়া এ অঞ্চলে কোন বাড়ি কল্পনা করা যায় না। বর্তমানে ভালো লাভ হওয়ায় বাগান লাগিয়ে সুপারির বানিজ্যিকভাবে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষক । সুপারি গাছ সাধারণত বছরে একবার ফল দেয়।
এক বিঘা জমিতে দের থেকে দুইশো সুপারি গাছের চারা লাগানো যায় । প্রতি ১বিঘার বাগান থেকে বছরে দের থেকে দু লাখ টাকার সুপারি বিক্রয় করা হয়। চারা রোপণসহ গাছে ফল ধরা পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। একটা বাগান ৩০ থেকে ৪০ বছর পযর্ন্ত ফল দেয়। কোন গাছ মরে বা ভেঙ্গে গেলে বাগানে তা পুনরায় রোপণ করা হয়। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত গাছ থেকে সুপারি পাড়া হয়।
কাঁচা,পাকা,মজা ও শুকনা অবস্হায় সুপারি বাজারজাত করা হয় । বর্তমানে সুপারির চারাও বাজারে বিক্রি হচ্ছে । বাগানের সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে চারাও বড় করা হয়। প্রতিটি চারার মূল্য বয়স ভেদে ৫০ থেকে ৭০০টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
ফলে বড়, মাঝারি,ছোট সব কৃষকই ঝুকছে সুপারির বাগান করার কাজে । বড়ভিটা গ্রামের বড় কৃষক (প্রভাষক )কামরুজ্জামান লাভলু বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সুপারির বাগান লাগিয়েছেন। ২/১বছরের মধ্যে তার বাগানে ফল ধরা শুরু হবে। একই গ্রামের শাহানুর ১বিঘা, গোলাম মোস্তফা ১,মোজাফফর হোসেন ১ বিঘা ও বান চন্দ্র ৩ বিঘায় সুপারি বাগান লাগিয়েছেন। লক্ষী কান্ত রায় বলেন,তার বাড়ির আশে পাশের পতিত জমিতে ১০০টি গাছ লাগিয়েছেন। পরিপূর্ণ ফল ধরা শুরু হলে যতটি গাছ বছরে তত হাজার টাকা। সুপারির বাগানে বছরে ১বার ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করা হয়।
তবে বানিজ্যিক বাগান সাফ- সুতোরো বেশী রাখা হয়। বতামানে অনেকেই রাশায়নিক সার প্রয়োগ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন।
ফুলবাড়ীরতে উৎপাদিত সুপারির মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদা রয়েছে । ভালো লাভে দিন দিন বেড়েই চলছে সুপারি বাগান এর সংখ্যা। এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা: লিলুফা ইয়াসমিন বলেন,ফূলবাড়ীতে প্রায় ১০৫ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান লাগানো হয়েছে ।
ভালো ফলন এবং রোগ-বালাইএর জন্য বাগান মালিকদের সব সময় প্রয়োজনিয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । উৎপাদন বেশি ও সুপারির মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে ।