বিশেষ প্রতিবেদকঃ
ভুরুঙ্গামারীতে এক নারী মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও সরকারী সুযোগ সুবিধা। কবে পাবে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও সরকারী সুযোগ সুবিধা ?
জানাগেছে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের ছোট খাটামারী গ্রামের মোছাঃ কদভানু বেগম ১৯৭১ সালে ১৪ ই জুলাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ভারতের বামনহাট যুব শিবিরে বাবুর্চি হিসাবে মাসিক ৫০ টাকা বেতনে কাজ করে। এছাড়া কাজের পাশাপাশি সে ছদ্মবেশে পাকিস্তানী সেনাদের ঘাটির সংবাদ সংগ্রহ করে দিত। মুক্তিযোদ্ধারা অতি সহজেই তার সংবাদের ভিত্তিতে পাকসেনাদের ঘাটি ধ্বংস করে ফেলে তাদের পিছু হটাতে বাধ্য করে। তার কর্মদক্ষতায় মুক্তিযোদ্ধারা অতিসহজেই জয়মনিরহাট পাকসেনাদের হাত থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। ইতিমধ্যে ১৬ ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাড়িতে চলে আসেন । পরে একই গ্রামের খন্দকার শামসুল হকের সঙ্গে বিবাহ হয়। এদিকে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় কাজের সন্ধানে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার জামতলী বাঙ্গালী পাড়ায় বসবাস শুরু করেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও সম্মানীভাতা প্রদানের ব্যবস্থা চালুর হলেও রহস্যজনক কারনে এই মহিয়সী নারীকে তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেয়। পরে তিনি জয়মনিরহাট ইউনিয়নের কমান্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাগজপত্র দিলেও আজও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় লিপিবদ্ধ করেনাই। এদিকে চলতি বছর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা শুরু হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সাবেক জেলার সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ১ লক্ষ টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে এখন বাদ পড়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কদভানু কান্না জড়িত কন্ঠে জানান আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য মহানমুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি কিন্তু জীবন যুদ্ধে আমি পরাজিত। আমার বৃদ্ধ স্বামী ও একমাত্র কন্যা স্মৃতি আক্তার(১৮) কে নিয়ে অতি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। আজও আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত অথচ টাকার জোরে অনেক স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকারী সুবিধা ভোগ করছে। এটাই কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ। মৃত্যুর আগে আমার একটাই চাওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া। জীবনের এই দুঃসময়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত করে সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদানের দাবী জানিয়ে কদভানু বেগম গত ১৯ জুলাই/২০১৭ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী,কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন প্রেরণ করেছেন। তিনি আরও জানান ভুরুঙ্গামারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত করে সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদানের আবেদন জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর নিকট প্রেরিত আবেদনের অনুলিপি জমা দিতে গেলেও তারা অনুলিপি জমা নেয়নি। কবে পাবে এই বীরাঙ্গনা নারী তার প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সরকারী সুবিধা ? ইতিপুর্বে টাকা দিলে অনেক স্বাধীনতা বিরোধী ও অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধায় তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারী সুবিধা ভোগ করছে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা বঞ্চিত করে অমুক্তিযোদ্ধা কেউ সুবিধা নিবে এটা কারও কাম্য নয়। অনতি বিলম্বে এই অসহায় কদভানুকে জাতির শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত করে সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তার ন্যায্য অধিকার দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সুধী সমাজ।