এস এম আসাদুজ্জামান, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পশ্চিম পানিমাছ কুটি গ্রামের হত দরিদ্র দিন মজুর আয়নাল ও তার স্ত্রী আয়শা বেগম (৪০), অত্যন্ত লোভনীয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে ৫সদস্যের পরিবার স্বচ্ছল ভাবে মাথা উঁচু করে সম্মানের সহিত জীবন-যাপন করছেন।
আয়নাল হক পেশায় একজন দিন মজুর। তিনি দিন মজুরি করে কোনরকমে সংসার চালাতেন আয়নাল হক। দীর্ঘ ২৫ বছরের সংসার জীবনে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মাত্র এক শতক জমির উপর দুইটি টিনের চালায় তাদের বাসবাস। অভাবের তারনায় ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করাতে পারেননি তিনি।

এদিকে মেয়ের বিয়ের বয়স পাড় হওয়ার উপক্রম। তাই অনেক কষ্ট করে সহায় সম্বল দিয়ে মেয়ে আল্পনার বিয়ে দেন তারা। মেয়ের বিয়ের দুই বছর পর একমাত্র ছেলে আলিফেরও বিয়ে দিয়ে দেন তারা। পরিবারের একটা মাত্র ছেলে হওয়ায় সে সংসারের তেমন কোন খোঁজ খবর রাখেন না। বিয়ের দুই বছরের মাথায় নাতনির মুখ দেখেন দম্পত্তি আয়নাল ও আয়শা বেগম। পাঁচ জনের সংসারে শুধু মাত্র দিন মজুরী করে পরিবারের সদস্যদের মুখে দ’ুবেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার মত স্বামর্থও ছিল না আয়নালের। প্রায় সময়ই তাদের না খেয়ে দিনাতী পাত করতে হতো। এমন সময় জীবন বাচানোর তাগিদে আয়শা বেগম গরীর দিন মজুর স্বামী ও ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাই বাড়ীর পাশে কদমতলা চার রাস্তার মোড়ে কোনরকমে পাশ্বে এক খানা টিনের চালা দিয়ে আঠার তৈরী পিঠ-পুলি বিক্রি করা শুরু করেন। সেই থেকে আর কখনও তাকে ফিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তেলে ভাঁজা পিঠা পুলির পাশাপাশি পিয়াজু,সিংগারা,চাও বিক্রি করেছে। বর্তমানে দুই স্বামী স্ত্রী মিলে পিঠা পুলির দোকান পরিচালনা করে। প্রতিদিন কাস্টমার দুর-দুরান্ত থেকে আয়শা বেগমের হাতে তৈরী পিঠা-পুলি খেতে ওই দোকানে ভীর জমায়। পিঠা-পুলি,পিয়াজু,সিংগারার মূল্য পাঁচ টাকা করে বিক্রি করে।
স্থানীয় বেলাল ইসলাম,হামিদুল,নছিয়াতুল্লা,অটোচালক মাসুদ জানান,আয়শা বেগমের তেলে ভাজা পিঠাপুলির স্বাধেই আলাদা একবার খাইলে বার বার খাইতে মন চাইবে। তাই দুর-দুরান্ত থেকে পিঠাপুলি খাইতে লোকজন ছুটে আসে তার দোকানে। এক সময় আয়শা বেগম ও আয়নালের অনেক কষ্ট গেছে। এখন আল্লাহের কৃপায় পিঠাপুলি বিক্রি করে কিছু করতে না পারলেও স্বচ্ছল ভাবে জীবন-যাপন করছে। দম্পতি আয়নাল ও আয়শা বেগম জানান, প্রতিদিন গড়ে কাঁচামাল হিসাবে দুই হাজার টাকা লাগে। সব কিছুর হিসাব মিঠিয়ে গড়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শত টাকা আয় হয়। তিনি আরও জানান,আশা এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছি। সপ্তাহে সাড়ে ৫শ টাকা কিস্তি দেওয়ার পরেও পিঠাপুলি বিক্রি করে কিছু করে জমা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *