রাজীবপুর(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি
অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগে গত শনিবার (৪জুন) বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজীবপুর সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক রবিবার(৫জুন) শিক্ষার্থীসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।
শিক্ষার্থীদের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে উপজেলা জুড়ে। অনেকেই এই ঘটনার প্রধানশিক্ষকের অদূরদর্শীতাকে দায়ী করছেন।
ছাত্রদের বিক্ষোভ এবং প্রধান শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে থানায় লিখিত অভিযোগের দায়ের করার ঘটনায় স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে দুইটি সংবাদ প্রকাশ করে।
গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ হওয়ার ঘটনায় রাজীবপুরে সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন এবার উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের নামে চাঁদা দাবি করার মিথ্যা একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে। দোষরাপ করা হচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দেকেও।
প্রধান শিক্ষকের ভিডিও বার্তায় করা মিথ্যা অভিযোগ গুলোর তিব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকরা।
সোমবার দুপুর ২ টার দিকে ১৭ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, MA Rahman একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রধান শিক্ষকের ওই লাইভটি প্রচার করা হয়।
ভিডিও বার্তায় প্রধান শিক্ষক বলেন স্কুলের পুকুর পাড়ে সোনাহার নামের একজন অবৈধভাবে স্কুলের জায়গা দখন করে সেলুন দিয়েছে। সেই সেলুন উচ্ছেদ করতে চাইলে শনিবার স্কুল ছাত্ররা পরীক্ষার ফি নিয়ে বিক্ষোভ করে।এসময় সোনাহার তাদের ইউএনওর কাছে যেতে বলেন এবং উষ্কানি দিয়ে স্কুলের জানালার কাঁচ ভাঙচুর করান। ছাত্ররা ইউএনওর কাছে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সাথে যোগ দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি খাইরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক বায়েজীদ ইসলাম বিজয় তাদের নেতৃত্ব দিয়ে ইউএনওর কাছে নিয়ে যায় এবং পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ তুলে ছাত্রদের সাথে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে। ভিডিও বার্তায় তিনি নাম উল্লেখ করে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের নাম উল্লেখ করে বলেন এরা চাঁদাবাজ আমার কাছে চাঁদা চেয়েছিলো আমি দেইনি তাই আমার নামে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগের মিথ্যা সংবাদ করেছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছে ওই ঘটনায় ছাত্র অভিভাবক প্রধান শিক্ষক,ইউএনও এবং শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেই প্রতিবেদন করা হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করার মিথ্যা অভিযোগ করছে।এঘনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকরা আরও বলেন,প্রধান শিক্ষককের এই ভিডিও বার্তার উপজেলার কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিকের ইন্ধন রয়েছে। তারা নিজেদের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যেই প্রধান শিক্ষকের সাথে আঁতাত করে ওই ঘটনার সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদের নামে এমন কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ তুলতে সহায়তা করছে। আরেকটি ভিডিও বার্তায় শোনা যায় কেউ একজন আন্দোলনরত ছাত্রকে সাংবাদিকদের নাম বলেছে এবং তারা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলনে উস্কানি দিয়েছে এমন স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল এবং বায়েজীদ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ সহমর্মিতা জানিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে এবং ছাত্রদের অভিযোগগুলো শুনেছি।এখানে চাঁদা দাবি করার কোন প্রশ্নই আসে না।নিজের অপকর্ম ঢাকতে প্রধান শিক্ষক এই মিথ্যা অভিযোগ করছে আমাদের বিরুদ্ধে। রাজীবপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সকল অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে বলেও জানিয়েছেন এই দুই নেতা।
সেলুন কর্মী সোনাহার বলেন,ওই সময় আমি স্কুলের পাশে ছিলাম। ছাত্রদের চিৎকার চেচামেচি শুনে আমি স্কুল গিয়ে টাকা বেশি নেওয়ার ঘটনা শুনে স্যারদের কাছে অনুরোধ করি পরীক্ষার ফি কম নেওয়ায় জন্য। অথচ আমার বিরুদ্ধেই হেড স্যার উল্টো মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।তিনি আরও বলেন,আজিম স্যার এই স্কুলের হেড মাস্টার হওয়ার পর স্কুলের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। রাজনীতি করার কারনে সবসময় স্কুলে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আড্ডা দেয়।গভীর রাত পর্যন্ত নিজের চেম্বার খুলে তিনি রাজনীতি এবং ব্যবসাবানিজ্য করে। ‘মনে হয় এটি স্কুল নয় রাজনৈতিক কার্যালয়’।
রাজীবপুর প্রেসক্লাব’র সাধারণ সম্পাদক ও মানবকন্ঠ প্রতিনিধি সহিজল ইসলাম সজল ও সাংবাদিক মুরাদুল ইসলাম বলেন, সংবাদ প্রকাশের কারনে একজন প্রধান শিক্ষক এমন মিথ্যাচার করতে পারে জানা ছিলো না। চাঁদা দাবি করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সাংবাদিকদের হেয় প্রতিপন্ন ও নিজের অপকর্ম ঢাকতেই এমন মিথ্যাচার করছে প্রধান শিক্ষক।