বিশেষ প্রতিবেদক,

হত্যার উদ্দেশ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনের উপর প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে ইউপি সদস্য মোজাম্মেল সহ তার ১৫ কর্মীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইউনিয়নের গাঙচিল বাজারের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেনের উদ্যোগে আয়োজিত নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী অতর্কিতে এসে এ হামলা চালায়।

আহতরা হলেন, ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, আবুল কাশেম, নুর ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, রবিউল হোসেন, মোহাম্মদ সিরাজ, সালা উদ্দিন, এরমান সহ ২৫ জন। আহতদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশংকাজনক। আহতদের উদ্ধার করে অনেককে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার অনেককে বিভিন্ন হাটবাজারের ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন জানান, আমি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ও তার নিজস্ব বাহিনী আমার এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আমার বিরুদ্ধে একাধিকবার হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করে আসছিলো। এ অবস্থায় আমি মঙ্গলবার এলাকার সাধারণ লোকজনকে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির কর্মকান্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করি। কিন্তু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসীরা পুনরায় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অতর্কিতে হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ করে সাধারণের মাঝে আতংক সৃষ্টি করে। এসময় সন্ত্রাসীরা মানববন্ধনে আগত নারী-পুরুষদের এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। এতে বাধা দিতে গেলে চেয়ারম্যানের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমার কর্মীদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে আমি নিজে সহ ১৫ জন আহত হই।

স্থানীয় সূত্রে জানায়, সন্ত্রাসী হামলায় মানবন্ধন ভন্ডুলের পর পুলিশের সামনেই কোম্পানীগঞ্জের গাঙচিল বাজারে রাজ্জাক বাহিনীর তান্ডবে পুরো বাজার ফাঁকা হয়ে যায়। বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে যে যার প্রাণ নিয়ে দিকবিদিক হয়ে ছুটে । সকাল ১১ টায় হাজার হাজার জনতার মানববন্ধনে পুলিশের সামনে ইসমাইল, হেলাল, মাসুদ ও সেলিমের নেতৃত্বে রাজ্জাক বাহিনীর ক্যাডাররা দেশীয় অস্ত্র ও বন্ধুক নিয়ে এ হামলা চালায়।

এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সন্ত্রাসীরা আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেলকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক বোমাবাজির মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ত কায়েম করে । জানা গেছে রাত ১০ টার দিকে সন্ত্রাসীরা আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল এর বাড়িতে বোমা হামলা চালায় । এ সময় তিনি বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে জান । বোমার বিকট শব্দে আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল এর ২ বছর বয়সী শিশু পুত্র রাব্বি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । পরিবারের লোকজন রাতেই শিশুটিকে নোয়াখালী টাচ ওয়ান হাসপাতালে ভর্তি করে ।

বিভিন্ন সূত্রমতে জানা গেছে চরএলাহী দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন মেম্বারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নামে চরএলাহী যুবলীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিতরা দীর্ঘদিন যাবত থেকে স্থানীয় পর্যায়ে ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে মানববন্ধন এবং মানববন্ধন পরবর্তি সংবাদ স্যোসাল মিডিয়া সহ কিছু অনলাইনে প্রকাশ করে মোজাম্মেল মেম্বার এর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে ।

পরবর্তিতে স্যোসাল মিডিয়ায় এবং কতিপয় অনলাইনে মানববন্ধনকারীদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে মোজাম্মেল মেম্বারকে নোয়াখালীর এরশাদ সিকদার হিসাবে চিহ্নিত করা , তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি সহ নানাবিধ অভিযোগ আনা হয়। মানববন্ধনে কথিত ধর্ষণের স্বীকার তরুণীটির বাবা মোস্তফা এবং মাতা ছেমনা খাতুনকে হাজির করে তাদের আবেগজড়িত বক্তব্য জনসম্মখে প্রকাশ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে কথিত এই ধর্ষণের ঘটনাটি দুই বছর আগের। ঘটনায় হাছিনা আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করে, কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা নং-০১, নাঃশিঃ নং ৭৩৫/১৬। এ মামলায় মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। স্যোসাল মিডিয়ায় ধর্ষণ সহ যেসব মামলাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেমন, মামলা নং-০৩, জিআর নং-১৭০/১৬, আয়েশা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করে, মামলা নং-১০, জিআর নং-১৫৫/১৬ ছেমনা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা করে, মামলা নং-০২, জিআর নং-১৬৯/১৬। এইসব মামলাগুলো একই পরিবার কতৃক একই দিনে দায়ের করা। এই মামলাগুলো দায়ের করেছে কথিত ধর্ষিতার ভাই ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা। আর এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল গত ইউপি নির্বাচনের পূর্বে। স্থানীয়দের মতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সুবিধার্থে। বর্তমানে মামলাগুলোতে মোজাম্মেল মেম্বার জামিনে রয়েছেন।

সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সাম্প্রতিক সময়ে শান্ত চর এলাহীতে নন ইস্যুকে ইস্যু করে চরএলাহীকে উত্তপ্ত করা হচ্ছে কার স্বার্থে? কেনই বা বার বার মোজাম্মেল মেম্বারকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে ? জানা গেছে , চরএলাহী কোম্পানীগঞ্জের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। সাগর বিধোত এই ইউনিয়নে প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান হচ্ছে নতুন নতুন চর। মাইলের পর মাইল শত হাজার একর এই চর সমূহ দখলে বরাবরই একটি মহল তৎপর থাকে। বিভিন্ন সূত্রমতে মোজাম্মেল হোসেনের বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে। স্বভাবতই চরগুলো তার এলাকায়। স্থানীয় অনেকেই এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন, মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মানববন্ধন সহ অপপ্রচার অনেকটা পরিকল্পিত। কথিত ভুয়া অভিযোগ এনে মোজাম্মেল মেম্বারকে কোনঠাসা করা গেলে দক্ষিণের নিয়ন্ত্রন ভার লাভ করা যাবে সহজেই। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের এক শ্রেনীর রাজনীতিবিদদের ভুয়া নথি সৃজনের মাধ্যমে তা বিক্রী করে কোটি কোটি হাতিয়ে নেওয়ার প্রবনতা রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানায়, তরুণ বয়স থেকে মোজাম্মেল বঙ্গবন্ধুর অনুসারি । ২০০৪ সালে বিএনপির কর্মী নূর ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরিবর্তিতে মৃত্যুটি হত্যায় প্রমানিত না হওয়ায় আদালত মোজাম্মেল মেম্বার সহ সকল আসামীকে বেখুসুর খালাস প্রদান করে। বারবার বিএনপির প্রতিহিংসার স্বীকার মোজাম্মেল মেম্বারকে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছিল বিএনপির ক্ষমতাকালীন সময়ে। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপির পুলিশ, আওয়ামীলীগ করার অপরাধে মিথ্যা ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার করে থানায় অকথ্য নির্যাতন করে মোজাম্মেল মেম্বারের হাতের নখ তুলে নেয় নির্দয়ভাবে । স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, বর্তমানের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক তখন বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন তোতার মটর সাইকেল ড্রাইভার কাম দেহরক্ষী ছিলেন। স্থানীয়রা জানায় নোয়াখালীর এরশাদ সিকদার নয়, মোজাম্মেল মেম্বাররা আওয়ামীলীগের অতন্ত্র প্রহরী।

বিভিন্ন সূত্রমতে চরএলাহীর নতুন জেগে ওঠা হাজার হাজার একর ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে মোজাম্মেল মেম্বারকে বিতর্কিত করে তাদের ফয়দা হাসিলের মিশন জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় ভূমি দস্যুরা যে মিশন শুরু করেছে তা সফল হলে খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারন জনগণকে । সচেতন মহলের মতে গতকালের সন্ত্রাসী হামলা সফল হলে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর নতুন চরের দখল নিতে বিশেষ মহলের অসুবিধা হত না। স্থানীয়দের মতে মোজাম্মেল মেম্বারই চর দখলে আগ্রহীদের প্রধান বাধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *