ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
আর্থিক সংকট আর চরম দারিদ্রতায় হতদরিদ্র দর্জি মিন্টু মিয়ার মেধাবী কন‍্যা মীমের পড়ালেখা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে এখন নাগেশ্বরী সরকারী কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। মীম গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও মীমের মুখে  হাসি নেই। শঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় দিন পার হচ্ছে তার। মীমের চোখে মুখে বিষাদের ছায়া।

 পড়া লেখা করে মীমের স্বপ্ন হচ্ছে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। কিন্তু চরম দারিদ্রতা আর অভাব অনটনের মধ্যে সে উচ্চ মাধমিকের গন্ডি পার হতে পারবে  কিনা এ নিয়েই শংকা  মীমের পরিবারের। দারিদ্রতার চাপে পিষ্ট মীমের পরিবার একবেলা খাবার যোগাড় করাই যেখানে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে পড়া লেখার খরচ জোগাড় করবে  কিভাবে?গত এক বছরে করোনার কারনে মীমের পরিবারের আয় রোজগার একেবারে কমে যাওয়ায় আর্থিক সমস‍্যা আরো প্রকট আকার ধারন করেছে তাদের।

ভূরুঙ্গামারী উপেজেলার আন্ধারীঝ্ড় ইউনিয়নের     বামুনের কুঠি গ্রামের মেধাবী মুখ মাসূমা আক্তার মীম।    চরম দারিদ্রতা আর বৈরি পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠেছে সে।

মায়ের কষ্ট আর বাবার ঘরে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছে সে। তার পরেও হাল ছাড়েনি সে। অভাব তাকে দমাতে পারেনি। তার প্রমাণও দিয়েছে গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায়। জিপিএ-৫ পেয়ে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল মীম।

কিন্তু আর্থিক সংকটে এখন পড়া লেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
মীমের বাবা মার সাথে কথা বলে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই বাবা মাসাদূজ্জামান মিন্টু আর মা রাহেলা খাতুনের  সঙ্গে মানুষের জমিতে ঘর তুলে “উটুলী” হিসেবে থাাকতো। দুই বোনের মধ‍্যে মীম বড়। মীমের মা ন‍্যাশনাল সার্ভিসে চাকুরী করে কিছু টাকা জমিয়েছিল আর বাবা রায়গন্জ বাজারে দর্জি গিরি করে যে আয় হত তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। এর মধ্যে তাদের মেয়ে বড় হতে থাকে।

রাহেলা আর মিন্টুর স্বপ্নও বড় হয়। নিজেদের কথা না ভেবে মেয়ের লেখাপড়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন তারা।
মেয়েও দারিদ্রতা ও স্থানীয় সকল বাঁধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। মীম রায়গন্জ বহুমুখী উচ্চ  বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনীতেও বৃত্তি পেয়েছিল। মীমের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শঙ্কায় জনম দুঃখী মা রাহেলা আর বাবা মিন্টু ও মেয়ে মীম। কারণ তাদের চিন্তা এখন মীমের উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করানো নিয়ে। তাতেও বাঁধ সেধেছে অর্থ আর দারিদ্রতা।

 রাহেলা বেগম ও মিন্টু বলেন,’আমরা গরীব তবুও স্বপ্ন দেখছি মীমকে নিয়ে। কিন্তুু মীমের পড়ালেখা ও প্রাইভেট পড়ানোর খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। দর্জি পেশায় সামান‍্য আয় দিয়ে পরিবারের খাবারের খরচ যোগাতেই আমার কর্ম সারা তাতে দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাই কিভাবে? তার মধ‍্যে করোনা মহামারীতে লকডাউনের মধ‍্যে দোকান পাট বন্ধ থাকায় আমাদের সমস‍্যা আরো বেশী দেখা দিয়েছে। ঘর করার জায়গাটুকু ছাড়া আর কোন জমি নাই আমাদের।এত দিন ছিলাম অন‍্যের জায়গায় “উটুলী” হিসেবে।এখন নিজের সামান‍্য জমিতে একটি ঘর করে মাথা গোঁজার ঠাই করেছি।

মীমের পড়াশোনাও খুব ভাল। কিন্তুু মীমকে নিয়ে ডাক্তার বানানোর আমাদের এতবড় স্বপ্ন পূরন করতে পারব কিনা সেটা আল­াহই ভাল জানেন এই কথা বলতেই তাদের দুচোখ বেয়ে অঝর ধারায় ঝরতে থাকে অশ্রু। আমাদের বর্তমানে যে অবস্হা তাতে মীমের এইচএসসি পর্যন্ত পড়ানোই দুস্কর হয়ে পড়েছে তার মধ‍্যে এত বড় স্বপ্ন দেখছি আল­াহ জানেন আমাদের কপালে কি লেখা আছে?

রায়গন্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, ‘মীম অনেক মেধাবী। কিন্তু তাদের থাকার ঘরও নেই বলা যায়। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে স্কুলে পড়িয়েছে তার বাবা মা। এসব কারণে মীমের কাছ থেকে কখনও স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি নেইনি।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ও আমরা শিক্ষকরা সব সময় মীমকে সহযোগিতা করতাম। মেয়েটি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের মান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’ভবিষ্যতেও মীম যাতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বাবা মায়ের দুঃখ ঘোচাতে পারে সে জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *