কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

‘বেটিক (হাসপাতাল থেকে) আনি বিষ খোয়া মারিম। তারপর নিজে জেল খাটিম। বিচার না পাইলে কী করিম!’ ধর্ষণের শিকার তের বছর বয়সী মেয়ের সম্ভ্রমহানি হলেও উল্টো নিজ পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা দিনমজুর এক বাবা বুক চাপড়ে এভাবেই আহাজারি করছেন।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে (১৩) রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য এক বখাটের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর পিতা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও গত তিনদিনেও অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো ওই যুবক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবাকে পুলিশে দেওয়া অভিযোগ প্রত্যাহারে লাগাতার হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা।

এদিকে ওই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার নিরাপত্তায় পুলিশি পাহাড়াও বসানো হয়েছে।

শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়ার পর থেকেই ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর নানা ধরণের হুমকি ও চাপ প্রয়োগ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন নাম্বার দিয়া আমাক ফোন করি হুমকি দিবার লাগছে। আমি বের হইলে আমার ওপর হামলার হুমকি দেয়, থানা যাবার নিষেধ করে।’

ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত যুবক গ্রেফতার না হওয়ায় সুবিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। তিনি বলেন, ‘আমার টাকা নাই। আমি ন্যায় বিচার পাবো কিনা সন্দেহ!’

নিজের শিশু কন্যার এমন পরিণতিতে বুক চাপড়ে ভুক্তভোগী এই বাবা বলেন, ‘বাচ্চা একটা মেয়ে আমার। তার সঙ্গে এমন একটা ঘটনা কেমন করি সহ্য করি!’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা জানান, পান্ডুল ইউনিয়নের ইসলাম পাড়া (সাবেক কুমারপাড়া) গ্রামের ছ’মিল শ্রমিক বাবলু মিয়ার ছেলে আশরাফুল এক সপ্তাহ ধরে ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছে। গত বুধবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাড়ির বাইরে থাকার সুবাদে এবং তার মা ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে আশরাফুল ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে ঢুকে তার মুখ চেপে ধরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ওই শিক্ষার্থী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে আশরাফুল। এতে ওই শিক্ষার্থী পরাস্ত হলে আশরাফুল তাকে ধর্ষণ করে। এরই মধ্যে ওই শিক্ষার্থীর মায়ের ঘুম ভেঙে গেলে তিনি বিছানায় মেয়েকে না পেয়ে ভুক্তভোগীর বাবাকে খবর দেন। পরে তারা স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে রাতেই ওই শিক্ষার্থীকে খুঁজতে বের হন। ঘটনা জানাজানি হলে রাতেই ওই শিক্ষার্থীকে এলাকার এক যুবকের মাধ্যমে বাড়িতে ফেরত পাঠায় আশরাফুল। বিষয়টি নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে সে। পরের দিন সকালে ওই শিক্ষার্থীর বাবা তার মেয়ের চিকিৎসা ও বিচারের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে থানায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আশরাফুল ও তার সঙ্গীরা এতে বাধা দেয়। পরে তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তা চান। পরে উলিপুর থানা পুলিশের একটি দল পান্ডুল পৌঁছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানায়, আশরাফুল তাকে রাতের অন্ধকারে ঘরে ঢুকে বাড়ি থেকে মুখ চেপে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় সে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে। পাশাপাশি নিজ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানায় ভুক্তভোগী ওই কিশোরী।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ কবির জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে উলিপুর থানায় মামলা করেছেন। আসামি আশরাফুলকে ধরতে পুলিশের দুটি টিম মাঠে কাজ করছে বলেও জানান ওসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *