রোকনুজ্জামান মানু উলিপুর (কুড়িগ্রাম)ঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভূমিদস্যু ফজলুল হক বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫ একর জমি জবরদখল করে মৎস্য খামার তৈরী করেছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমান বালু উত্তোলনের ফলে রেলের পাইলিং ভেঙ্গে রেল পথ ঝুঁকিপুর্ন হওয়ায় ট্রেন চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে।
জানাগেছে, পৌরসভার জোনাইডাঙ্গাঁ গ্রামের মৃত: জহির উদ্দিনের পুত্র ফজলুল হক একটি আতঙ্কের নাম। যার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সে প্রকাশ্যে রেলওয়ের প্রায় ৫ একর জমি জবর দখলে নিয়ে মৎস্য খামার, চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পদে পদে লাঞ্চিত হতে হয়েছে অনেক মানুষকে। ভূমিদস্যু ফজলুল হকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি অবৈধ ভাবে জবর দখল করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ভূমি জবর দখলের জন্য এলাকায় একটি ভূমিদস্যু বাহিনী গঠন করে নাম দিয়েছে ফজলু বাহিনী। ফজলুর মৎস্য খামার বলে পরিচিত জলাশয় থেকে বিপুল পরিমান বালু উত্তোলন করে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিক্রয় করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এতে করে পার্শ্ববর্র্তী ফসলি জমি, রেলপথসহ পরিবেশ মারাতœক হুমকির সম্মূখীন হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় যোন লালমনিরহাটের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে রেলের জমি জবর-দখল, বালু উত্তোলন করে মৎস্য খামার প্রকল্প তৈরীকরণসহ বিভিন্ন কাজকর্মে ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া,একই ভাবে ইতোপূর্বে উলিপুর আনন্দ বাজার থেকে চিলমারী উপজেলার রমনা রেল স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের দুই ধারে শত শত একর জমি লিজ দেয়ার কথা বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট যোনের কর্মকর্তা-কর্মচারী চক্রটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জমি লিজ দেয়ার খপ্পরে পরে শত শত সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে অবৈধ দখলদাররা রেলওয়ের দু’ধারের কিছু কিছু জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসূমে রেল পথের দু’ধার ভেঙ্গে যাচ্ছে। যার কারণে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের রেল দূর্ঘটনার আশঙ্খা রয়েছে। উলিপুর উপজেলা রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সভাপতি আপন আলমগীর জানান, আনন্দ বাজার থেকে রমনা রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলওয়ের দু’ধারে যে জল মহল গুলো আছে তা পুরোটাই রেলের জায়গা। বর্তমান রেল লাইনের দু’ধারে ২৫ ফুট থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত জমি রয়েছে। সে গুলো রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে লিজ নেয়ার নামে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখল করে নিয়েছে। জল মহল ও পুকুর গুলো থেকে বালু উত্তোলনের কারণে রেলের পাইলিং গুলো ভেঙ্গে পড়েছে। বারবার পাইলিং দেয়ার নামে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। তিনি এই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। এদিকে রেলওয়ের বিভাগীয় যোন লালমনিরহাটের ব্যাবস্থাপক নাজমুল ইসলাম জানান কুড়িগ্রামের উলিপুর-চিলমারী রেলপথের দু’ধারে কিছু লোক জমি দখল করে বালু উত্তোলন ও মাছ চাষ করার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবৈধ দখলদার ও বালু উত্তোলনকারী ভূমিদস্যু ফজলুল হকের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এস,কে আব্দুল্লাহ আল সাইদ জানান, ফজলুল হকের বিরুদ্ধে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউনুল হকের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়েছে। মামলা করার ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *