ভুরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার উত্তরে অবস্থিত ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা তালুক মশালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবির এ শিশুটি ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাম রোজিনা আক্তার (১০)।

তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০২২ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত মঙ্গলবার বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে রোজিনা স্কুলে এসে জানতে পারে তার বড় ভাই সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে।

এই সংবাদে শিশুটি খুশিতে আত্মহারা হয়ে সুসংবাদটি দ্রুত বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে দৌঁড়ে যায়। সে সময় মাটিতে পড়ে গিয়ে শিশুটির ডান হাত ভেঙ্গে যায়। বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে পরিবারের সকলেই হাত ভাঙ্গার বেদনা ভুলে ছিল। কিন্তু বুধবারের সংশোধিত তালিকায় দেখা যায় বৃত্তি পাওয়ার তালিকায় রোজিনার ভাইয়ের নাম নেই। এ খবর শোনার পর মুহুর্তেই পরিবারটির সকল সদস্যের মধ্যে হতাশা নেমে আসে।

শফিকুলের মা পারভিন বেগম বলেন, ‘পোলাটাও বৃত্তি পেল না। মাইয়াটারো হাত ভাঙ্গলো। এটাতো বৃত্তি পরীক্ষা না, গরিবের সঙ্গে তামাসা করা হলো।’

শফিকুল জানায়, খুব কষ্ট ও লজ্জা পেয়েছি। এ বলে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফলাফল অনুযায়ী ৪৪ জন শিক্ষার্থীর ফল বদলে গেছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন শিক্ষার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

ভূরুঙ্গামারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবারের প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী ১১ জন ট্যালেন্টপুলে এবং তিন জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। বুধবার রাতের সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী সাত জন ট্যালেন্টপুলে এবং পাঁচ জন সাধার গ্রেডে বৃত্তি পায়। দু’জন শিক্ষার্থী বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। বঞ্চিতদের অভিভাবকরা এসে হতাশা ব্যক্ত করে এবং কি করা যায় পরামর্শ চাচ্ছে।

কিশলয় বিদ্যানিকেতনের লামিয়া আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার খবর পেলে মিষ্টি বিতরণ করেন। কিন্তু সংশোধিত তালিকায় তার নাম না থাকায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ওই শিক্ষার্থীসহ পরিবারের সকল সদস্য।

লামিয়ার মা আকলিমা আক্তার বলেন, বৃত্তিতে নাম না এলে কোন কথাই ছিল না। কিন্তু একবার নাম এলো, আবার বাদ গেল। মেয়েটি বৃত্তি পাবার খবর শুনে কত খুশি ছিল। কিন্তু বাদ পড়ার সংবাদ শুনে এখন শুধু কাঁদছে। সারা দিন না খেয়ে আছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এবারের বৃত্তি পরীক্ষাটি তাড়াহুড়া করে অনুষ্ঠিত হওয়ায় যান্ত্রিক ক্রটির কারণে কিছুটা ভুল হয়েছিল। যা আবার সংশোধন করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সঠিক ফলাফল পাঠিয়েছিলো। কাজেই এখানে জেলার কোন অবহেলা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *