রফিকুল আনোয়ার ঃ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে নোয়াখালী জেলার বঙ্গোপসাগর বিধৌত জনপদ হাতিয়া। জলজ, সম্পদ ও খনিজ সম্পদ আর বিস্তীর্ণ ফসলী জমির সম্ভারের সমৃদ্ধ হাতিয়া আজো মাছে ভাতে বাঙ্গালীপনাকেই জাগরুক রাখার ভূমিকা পালন করছে। সেই সাথে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান, শিক্ষা সাহিত্যের ক্রমবিকাশের মাধ্যমে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সাথেও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে হাতিয়া। তবুও অপার সম্ভাবনার এ জনপদ দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, চলমান রাজনৈতিক পটভূমি এর জন্য দায়ী। গত তিন দশক ধরে দলীয় সাইনবোর্ডের আড়ালে ব্যক্তি প্রভাব, আধিপত্য বিস্তারের কারণে এক সময়ের শান্ত দ্বীপ হাতিয়া এখন অশান্ত। খুন, গুম, হামলা, অগ্নিসংযোগ, মামলা আর সন্ত্রাসের রাজনীতিতে মানুষ দিশেহারা। ব্যক্তি ও পারিবারিক সন্ত্রাসের রাজনীতির যাতাকলে গত এক বছরে যুবলীগ নেতাসহ খুন হয়েছে ৭জন। মামলা হয়েছে প্রায় এক শতেরও অধিক। সর্বশেষ খুনের শিকার হন যুবলীগ কর্মী রিয়াজ উদ্দিন। গত ৩০ আগষ্ট সেতু মার্কেটে প্রকাশ্য দিবালোকে এমপি সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকে কেন্দ্র করেই আবার অশান্ত হয়ে উঠলো হাতিয়া। নিহতের বাবা কোরবান আলী জাতীয় পার্টি থেকে আসা সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীসহ ১৫৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। হাতিয়া যেন একটি মহল বিশেষের কেনা তালুকদারী। এখানে তাদের কথাই আইন। নিহতের পিতা কেন মামলা করল- এ যেন তার অপরাধ। এই মামলার রেশ ধরে কোন মাঠ কিংবা প্রতিষ্ঠানে নয় স্বয়ং মামলার আসামী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে প্রতিবাদ সভার ডাক দেয়া ৭ সেপ্টেম্বর।

এ বিষয়ে একটু পিছনে ফিরলে দেখা যায় গত ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে বর্তমান সাংসদ আয়েশা আলী কিংবা তার স্বামী বা তার অনুসারীরা কোন প্রকার কর্মসূচী গ্রহণ করেননি। পক্ষান্তরে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালী উল্লাহর সমর্থন ও সহযোগিতা আওয়ামীলীগ নেতা মাহমুদ আলী রাতুল পুরো উপজেলায় গরু ছাগলসহ ৬০/৭০টি পশু বঙ্গবন্ধুর নামে জবাই করে কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করেন। যা হাতিয়ার ইতিহাসে প্রথম। মাহমুদ আলী রাতুলে এই কাঙ্গালীভোজটি পুরো হাতিয়াসহ নোয়াখালীতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। যেমনটি হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করীম চৌধুরী এমপি’র দেওয়া দেড় শতাধিক গরুর মানবভোজ। আয়েশা আলীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল হাতিয়ায়। প্রশাসনের বারবার মিছিল না করার অনুরোধকে উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য আয়েশা আলী মিছিল বের করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। প্রশাসনের কর্তারা বারবার অনুরোধ করার পর এক পর্যায়ে আয়েশা আলী মিছিল থেকে সরে গেলেও তার উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা সরেনি। পুলিশি বেরীকেট উপেক্ষা করে তারা আওয়ামীলীগ নেতা শিল্পপতি মাহমুদ আলী রাতুলের বাসায় হামলা করে এবং ব্যাপক ভাংচুর করে । এতে দুপক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মী আহত হয় এবং গুলিবিদ্ধ হয় ১১জন। এদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ১০০ টিয়ার গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে, দুপক্ষের সংঘর্ষে ১০ পুলিশ ও আহত হয়। আহতদের মধ্যে মুমুর্য মাইন উদ্দিন (২৬), নাজিম উদ্দিন (২৮) ও সাঈদ উদ্দিন (২৭) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এবং আব্দুর রহমান (২৫), আরিফুর রহমান সজীব (৩০) কে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মো: জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে শর্টগানের গুলি লেগেছে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলায় ২৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। সর্বত্রই এখন প্রশ্ন উঠেছে এখানকার রাজনীতিবিদরা হাতিয়ার জন্য রাজনীতি করছেন, নাকি হাতিয়াকে নিয়ে রাজনীতি করছেন?

নোয়াখালী-৬, হাতিয়া আসন হতে সবচেয়ে বেশী বার জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এক সময়কার বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম। বিগত সংসদে জাতীয় আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে কথা বলতে বলতে অসংখ্যবার মিডিয়ার প্রধান সংবাদে স্থান করে নিয়ে একজন হিরো হয়ে যান এ নেতা। অনেক মন্ত্রীর চেয়েও বেশীবার এবং বেশী সময় ধরে ফ্লোর পেয়ে নানান কথা বলার সুযোগ পেলেও এই নেতা হাতিয়ার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোন কথাই বলেননি মহান জাতীয় সংসদে। দু’একবার যা বলেছেন তাও বেশীরভাগ কোন ব্যক্তিকে দস্যু আখ্যায়িত করে তিনি হাতিয়াকে একটি দস্যু জনপদ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছেন আর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার আনন্দ উপভোগ করেছেন। এছাড়া কয়েকবার নিজের নির্বাচনী এলাকায় না আসতে পারার অজুহাত স্বরূপ অতিশয় নগন্য কিছু লোকের প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে সংসদে কৌতুকের খোরাক হয়েছেন তিনি। এদিকে জাতীয় রাজনীতির পট পরিবর্তনের সাথে সাথে পূর্বেকার অর্জনের রুগ্ন অবস্থাকে বিচার বিশ্লেষণ করে গতবারের জাতীয় নির্বাচনে প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম প্রার্থী হন নাই। এমনকি উপজেলা নির্বাচনেও নিজের রাজনৈতিক বলয় থেকে কাউকে প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেন নাই। এসব কারণে তিনি জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের মননে বিতর্কিত নির্বাচন বর্জনকারী একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে ফুটে ওঠার পাশাপাশি বোনাস স্বরূপ ঈদ পার্বনে হাতিয়াবাসীকে ধরা দিতে গিয়ে খামাখা পয়সা নষ্ট করার অপ্রিয় কাজটি থেকে বিরত থাকার একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেলেন। ৪ বছর পর আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মাসের শেষের দিকে তিনি হাতিয়ায় গেলেন। হাতিয়ার ওছখালীতে খুব নগন্য সংখ্যক কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সারাদিন আড্ডা দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এক সময়ে হাতিয়ায় গেলে যেখানে হাজার হাজার জনতা তাকে দেখার জন্য জড়ো হতেন এবারে তা লক্ষ্য করা যায়নি। তার সমর্থক নেতা কর্মীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্যও ছিল না। তিনি তার সমর্থকদের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে ঘোষনা দেন। তবে কোন দল বা কোন প্রতিকে নির্বাচন করবেন তা বলেননি।

উল্লেখ্য, একসময়ের বিএনপির এই প্রভাবশালী এমপি ২০০৮ সালে সংস্কারপন্থীর দায়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে এক অখ্যাত গৃহবধুর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে পিছিয়ে পড়েন, তৎকালীন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ ও জামায়তপন্থী ইউএনও আবুল হাসেমকে ম্যানেজ করে ওই গৃহবধুর বিজয় ছিনিয়ে নেন তিনি। সংস্কারপন্থীরা একে একে সবাই দলে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও এ নেতা গুরুদন্ডের অপরাধে আর দলে ফিরে যেতে পারেননি। তাই আগামীতেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

হাতিয়ার আরেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী যিনি শুধু একা নন তাঁর অগ্রজ এবং তাঁর অনুজরা সহ তিনি হাতিয়ার নেতৃত্বের অবস্থান দখল করেছিলেন আনুমানিক তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। এই সময়ে সমৃদ্ধ রাজনৈতিক একচেটিয়া মাঠ তিনি কোন কাজে ব্যবহার করেছেন? বয়সন্ধিকালে হয়তো এ হিসাব মিলানো অনেক কঠিন কাজ হয়ে যাবে তাঁর জন্য। একনিষ্ঠভাবে এ জনপদের মাটি ও মানুষের জন্য কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রহণ কিংবা বাস্তবায়ন করার কোন নজির তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নাই। তবে যে জিনিসটি প্রশংসার সাথে সবাই স্বীকার করতে বাধ্য সেটি হচ্ছে একজন রিকসাওয়ালাও তাঁর কাছ থেকে কথা বলার, হাঁটা চলার আদব সম্পর্কে শিক্ষনীয় বানী টুকু পেয়েছেন। ইউ.পি সদস্যরা যেখানে বিচারের জন্য চৌকিদার / গ্রাম পুলিশ ব্যবহার করেন সেখানে তিনি এসব লোকদের শিক্ষা দিতে নিজের স্বীয় হস্ত ব্যবহার করেছেন। তার ক্ষমতাকালীন সময়ে সারা হাতিয়ায় একের পর এক রক্তকয়ী সংঘর্ষ, সহিংসতার পেছনে তাঁর সতীর্থরা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হাতিয়ার ইতিহাসে বিচিত্র রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। হাতিয়ার রাজনীতিতে ৭০ দশকের পর থেকে সরকার দলীয় কোন সংসদ সদস্য ছিলনা। ফলে হাতিয়ার উন্নয়নের পেছনে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। বিরোধীদলীয় প্যানেলে থাকায় বরাদ্ধ পাশ করানোর জায়গা জাতীয় সংসদে কথা বলার ফ্লোর পেতনা হাতিয়ার সংসদ সদস্যরা। কিন্তু এবার হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সরকার যে দলের এমপি সে দলের। আবার মাঝে মধ্যে শোনা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খুব আদরনীয়া। অপরদিকে হাতিয়া উপজেলা পরিষদের তিনজন প্রতিনিধিই ক্ষমতাসীন দলীয় সংসদ সদস্যের প্যানেল থেকে নির্বাচিত। হাতিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য একজন মহিলা। সে দিক দিয়েও বলতে হয় নারী ক্ষমতায়নের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সে জোয়ারের তোড়ে হাতিয়া উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাবে। চারদিকে যত সমস্যা সবগুলো ব্যাপারে জাতীয় সংসদে কথা তোলা হবে। এ সরকারের মেয়াদেই হাতিয়ার উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। হাতিয়ার রাজনীতিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা আলী যদিও পুরাতন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রথমবার হাতিয়ার রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু হাতিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, সাগর গর্ভে বিলীন হচ্ছে মাইলের পর মাইল। শত শত কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা। হাতিয়ার সিংহভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এনিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই। হাতিয়াবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই সত্যটুকু অকপটে স্বীকার করবেন যেকোন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকই।

চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ হাতিয়ায় বিদ্যুতের একটি জেনারেটর ইঞ্জিন স্থাপন এবং আগামী বছরের মধ্যেই হপ্রন্দ্র মার্কেটস্থ নতুন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথা সংসদ সদস্য আয়েশা আলী বলে আসলেও এসবের কোন লক্ষণ নেই। তিনি জানিয়েছিলেন হাতিয়ার প্রধান সড়ক উন্নয়নের জন্য প্রায় সতের কোটি টাকার প্রকল্প শুরু কিন্ত বাস্তবে তা প্রদর্শিত হচ্ছে না। এছাড়া শিক্ষা খাতে, মৎস্য খাতে, চিকিৎসা খাতে উন্নয়ন করা সহ নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকরি উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও বিভিন্ন জনাকীর্ণ আলোচনায় তিনি জানালেও তা আলোর মুখ দেখেনি। মোহাম্মদ আলীর পর আয়েশা আলী প্রায় ৪দশক হাতিয়ার নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে তারা হাতিয়াবাসীর জন্য কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধন করেছেন এমনটির কোন প্রদর্শিত চিত্র নেই। তবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য শত শত সংঘাতের ঘটনা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনদাতার নাম হাতিয়াবাসীকে জিজ্ঞেস করলে এক বাক্যেই চলে আসবে তাদের নাম। হাতিয়াতে অধ্যাপক ওয়ালী উল্লাহ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে বছরের পর বছর ধরে রাখার চেষ্টা করলেও মোহাম্মদ আলীদের পছন্দ অপছন্দের কাছে তা ধারে টিকছে না। তাদের শক্তি আধিপত্যবাদ এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাড়িয়েছে যে খোদ স্বরাষ্টমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মোহাম্মদ আলীরা অনেকটা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ওয়ালী উল্লাহকে। চলতি বছরের শুরুতে জেলা আওয়ামীলীগের এক নাগরিক শোক সভায় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ায়দুল কাদের হাতিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, দলীয় কোন্দল কোনভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। সন্ত্রাস বন্ধ করুন। যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের ছাড় দেয়া হবে না। ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কয়েকদিন পর যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশরাফ উদ্দিন, নুরুল আলম, তৌহিদুর রহমান ও সর্বশেষ রিয়াজ উদ্দিন খুন হন নিজ দলের প্রতিপক্ষের হাতে। এদেরকে বিএনপি জামাত খুন করেনি। খুনের ঘটনায় যাদের নাম আসছে বা যাদেরকে মামলায় আসামী করা হয়েছে তারা সকলেই আওয়ামীলীগ নামীয়। এসব নেতা কর্মীদের খুনের বিষয়ে আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য “সন্ত্রাসের সাথে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না” এর কি যথার্থতা মিলেছে? সর্বশেষ হাতিয়ায় খুন হওয়া যুবলীগ কর্মী রিয়াজ উদ্দিনের অপরাধ ছিল জাতীর জনকে শাহাদাত বার্ষিকীতে কাঙ্গালীভোজে দলবল নিয়ে অংশগ্রহণ করা। আর এর জের ধরেই তাকে নির্মমভাবে খুন করে যারা কাঙ্গালীভোজ আয়োজন করতে পারেনি তারা। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামীলীগ প্রাচীন এবং সুসংগঠিত একটি রাজনৈতিক দল। এই দলে কি রাজনৈতিক কোন অবকাঠামো থাকবে না? হাতিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ মাহমুদ আলী রাতুলের আর্থিক সহযোগিতায় অর্ধশতাধিক গরু দিয়ে কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করেছে, এটা কি উপজেলা আওয়ামীলীগ কিংবা মাহমুদ আলী রাতুলের অপরাধ? এই কাঙ্গালীভোজের কারণে কি কারো সংসদ সদস্যপদ চলে গেলো? এসব প্রশ্ন স্বভাবতই ঘোরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছে। পুরো উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৬টিরই চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের। এরা সকলেই কাঙ্গালীভোজের সহযোগিতায় ছিল এবং উপজেলা আওয়ামীলীগও মাহমুদ আলী রাতুলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু এ কাঙ্গালীভোজে খুশী হতে পারেনি একটি মহল। তাদের ধারণা, এই বুঝি তাদের আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন ওয়ালী উল্লাহ কিংবা রাতুল ভাগিয়ে নিলো। দলের মনোনয়নের মালিক দলের সভানেত্রী। কিন্তু যে নির্বাচনী এলাকায় দলীয় মনোনয়নকে মুখ্য বিষয় মনে করে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের কিন্তু সেই নির্বাচনী এলাকায় আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন করবেন কোন ক্যাটাগরিতে। দল যাকেই মনোনয়ন দিক হাতিয়ার সাধারণ জনগণের তাতে কিছ যায় আসে না। তারা লাশ খুন গুম আর দেখতে চায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, হাতিয়াবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে যদি এমন হতো, হাতিয়া আসনে হাতিয়ার কোন লোক প্রার্থী হতে পারবে না, তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম। বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার মোহনায় গড়ে উঠা ১৫০০শতাব্দীর হাতিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাকারী লক্ষ লক্ষ সাধারণ জনতাকে মানব দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামণা করছেন হাতিয়াবাসী। সবার একটাই চাওয়া, চাই হাতিয়ার জন্য রাজনীতি, হাতিয়াকে নিয়ে রাজনীতি না।

লেখকঃ সম্পাদক দৈনিক নোয়াখালী প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *