ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার : কমলগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চল মুন্সীবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে কেওলার হাওরের মাঝ দিয়ে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণে হাওর ভরাট, পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা, কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। অপরিকল্পিত উচুঁ রাস্তা নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি দ্রুত পানি নিষ্কাশনে লাঘাটা নদী খনন ও সংস্কার কাজ শুরু করার। গতকাল ৩১ জানুয়ারী মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত গণ দরখাস্তে কৃষকরা এসব দাবি তোলে ধরেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েকটি গ্রামের ১১২ জন লোকের দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গোটা উপজেলার বন্যার পানি নিস্কাশন একমাত্র কেওলার হাওরে মাঝ দিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদীর মাধ্যমে মনু নদীতে গিয়ে নি:শেষ হয়। বর্তমানে হাওর ভরাট ও হাওরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদীটিও ভরাট হয়ে গাছগাছালি, ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড় ও নদীতে মাছ নিধনের জন্য বাঁশের খর্ঁাটি স্থাপন করায় পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে বর্ষায় বন্যা ও ঢলে কেওলার হাওর জুড়ে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কারনে ঐ এলাকার কৃষিক্ষেত সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়। বিগত বছরেও অতিবৃষ্টি জনিত কারনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদী ভাঙ্গনের ফলে তিন ইউনিয়নের শত শত হেক্টর বোরো ক্ষেত সম্পুর্ণরূপে বিনষ্ট হয়। উপজেলার শমশেরনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের গরিব, ভূমিহীন, বর্গাচাষী ও নি¤œবিত্ত কৃষকরা ফিবছর বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ধূপাটিলা, শ্রীসূর্য্য, হালাবাদি, পতনঊষার, কেছুলোটি, সতিঝির গ্রাম, ভাদাইরদেউল, মরাজানের পার, রাধানগর, রূপষপুরসহ আশপাশ গ্রামের কৃষক সাধারণ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি সময়ে ভরাট হওয়া কেওলার হাওরের মাঝ দিয়ে রূপষপুর গ্রাম থেকে লাঘাটা নদী পর্যন্ত অপরিকল্পিতভাবে প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন একটি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে হাওর ভরাট, পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা ও নিয়মিত জলাবদ্ধতায় রূপ নেয় সেখানে আরও একটি নতুন রাস্তা নির্মাণের কারনে বর্ষাকালে পানির ¯্রােতের সঙ্গে আসা পলিবালি আটকা পড়ে হাওরের অবশিষ্ট অংশ কয়েক বছরের মধ্যেই ভরাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই হাওরে পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতার কারনে ভবিষ্যতে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় এলাকার কৃষক সাধারণকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। কৃষকদের বৃহত্তর স্বার্থে হাওরের মাঝ দিয়ে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে লাঘাটা নদী দিয়ে দ্রুত পানি নিস্কাশনে নদী খনন ও সংস্কার কাজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নি¤œাঞ্চলের মৌসুম ভিত্তিক একমাত্র জলাধার কেওলার হাওরের রূপষপুর থেকে শুরু করে লাঘাটা নদী পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ফুট দীর্ঘ ও চার ফুট উচ্চতা সম্পন্ন একটি রাস্তা নির্মিত হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প অফিস ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের উদ্যোগে এই প্রকল্প কার্যক্রম চলছে। হাওরের এই কাজে কোনরূপ প্রকল্প কমিটি, টাকার পরিমাণ ও টেন্ডার ছাড়াই রাস্তা, নালা ও নালার মাটিতে বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রমের ফলে উজানের কয়েকটি গ্রামের কৃষি উৎপাদনে পূর্বের ধারাবাহিকতায় আরো অধিক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে পানি সুবিধার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে খাল খনন করা হয়েছে। তবে আর তেমন কোন কাজ নেই বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ জানান, এলাকার কৃষকদের চাষাবাদের স্বার্থেই এবং সেচু সুবিধা নিয়ে সারা বছর যাতে মানুষ চাষাবাদ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কৃষকরা এই কাজে সন্তোষ্ট। তাছাড়া লাঘাটা নদী খনন ও সংষ্কার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সেটিও বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *