হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে গণমাধ্যম কর্মীর কাছে বক্তব্য দেয়া এবং এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় স্থানান্তরে সম্মতি প্রদান না করায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা খাতুনকে জব্দ করতে তার পদ কেড়ে নিয়ে সহকারি শিক্ষক পদে অবনমিত করা হয়েছে। অপরদিকে বিদ্যালয় স্থানান্তরে সহযোগিতা করায় পুরস্কার হিসেবে অপর সহকারি জুনিয়র শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। চিলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকার এমন একটি বালখিল্যসুলভ কান্ড করে আলোচনায় উঠে এসেছেন।
জানা গেছে, চলতি বন্যায় চিলমারী উপজেলার নদী বিচ্ছিন্ন নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এসময় জুনিয়র সহকারি শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার দলবলসহ বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র নিয়ে পার্শ্ববর্তী রৌমারী উপজেলায় স্থানান্তর করেন। বিদ্যালয় অন্যত্র স্থাপন করায় বিপাকে পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও বক্তব্য দেয়ার পর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা খাতুন শিক্ষা কর্মকর্তার রোসানলে পরেন। এতে ক্ষুব্ধ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ জুলেখা খাতুনকে জব্দ করতে গত ২৮ আগস্ট এক পত্রের মাধ্যমে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে সরিয়ে জুনিয়র সহকারি শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদে বসান।
এনিয়ে শিক্ষক জুলেখা খাতুন জানান, আমি এখনো চিঠি হাতে পাইনি। উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনসাব আলী অবসরজনিত কারণে অব্যাহতি পাওয়ার পর ২০১৭ সালে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাই। আমি এই বিদ্যালয়ে প্রথম শিক্ষক হিসেবে ২০০৬ সালে যোগদান করি।
উত্তর খাউরিয়া সরকারি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আকতার বলেন, জুলেখা খাতুনকে তার পদ থেকে অব্যহতির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে শিক্ষা অফিসার কিংবা কোন শিক্ষকও বলেনি। বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হবার পর আমি নিজেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেছিলাম। উনি আমাদের উত্তর খাউরিয়া এলাকায় স্কুল পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আবার বিদ্যালয়ের বাকি তিন শিক্ষককে রৌমারী উপজেলায় স্কুল পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। শিক্ষা অফিসার তার ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই জুলেখা খাতুনকে পদ থেকে সরিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি চরাঞ্চলের শিশু সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করে আবু হোসেন মোল্লা জানান, স্কুল বর্তমানে রৌমারী উপজেলার যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। পানি কমে গেলে উপজেলা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা বাস্তবায়ন করা হবে। আর কোন অর্থের বিনিময়ে তিনি এই পদ নেননি বলেও জানান।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপ‌জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ জানান, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে আবু হোসেন মোল্লাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আনা অ‌ভি‌যোগ অস্বীকার করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেবার বিষয়ে আমি জানি না। আর এটা কোন নিয়মও নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কোন অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *