মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান বনাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কে.এম. আযম খসরু’র ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে কুড়িগ্রাম জেলা শ্রমিক লীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণার ঘটনায় কুড়িগ্রাম জেলায় শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কে.এম. আযম খসরু গত ২৬ সেপ্টেম্বর’ ২০২৩ইং জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অনুমোদন দেন। নবগঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর সুপারিশক্রমে শ্রমিক নেতা মোঃ মজিবর রহমানকে আহ্বায়ক ও পরিবহন শ্রমিক নেতা মোঃ আমিনুর রহমান বাচ্চুকে সদস্য সচিব করে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন দেয়। এরই প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম জেলায় জেলা শ্রমিক লীগের দুটি গ্রুপের কোন্দল প্রকাশ্যে রূপলাভ করে। পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ এর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সহিদুজ্জামান রাছেল এর পূর্ব কমিটি আবারো পুনঃর্বহাল করে জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান তার একক স্বাক্ষরে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান তার চিঠিতে সাধারণ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে নিজ স্বাক্ষরিত চিঠি বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন। যাহাতে লেখা আছে যে, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কেএম আযম খসরু গত ২৬ সেপ্টেম্বর অনুমোদনকৃত জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মোঃ মজিবর রহমান এবং সদস্য সচিব হিসেবে পরিবহন শ্রমিক নেতা মোঃ আমিনুর রহমান বাচ্চু কে মনোনীত করে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেন। কুড়িগ্রাম জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করে আহ্বায়ক কমিটি দেয়ায় স্থানীয় ভাবে শ্রমিক লীগের বিভিন্ন স্থরে ক্ষোভ এবং হতাশার সৃষ্টি হয়। গত ২ অক্টোবর ২০২২ জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর কুতুব আলম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক কেএম আযম খসরু এর যৌথ ভাবে স্বাক্ষরিত কেন্দ্রীয় সার্কুলার মোতাবেক জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সম্মেলন চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করে। উক্ত বিষয়ে নিজ স্বাক্ষরিত সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কেএম আযম খসরু কোন প্রকার পদক্ষেপ না করে এবং কেন্দ্রের সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা না করে ব্যক্তি স্বার্থে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কৌশলে সংগঠনের মধ্যে বিভাজন-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতঃ সর্ববিষয়ে সংগঠনকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে কুড়িগ্রাম জেলা শ্রমিক লীগের কমিটির চলমান থাকা সত্বেও কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা প্রদর্শন করে একক স্বাক্ষরে অবান্তর একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি প্রদান করেছেন বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান লিখিত ভাবে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছেন। সেই সাথে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান তার একক স্বাক্ষরে জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক প্রদত্ত একক স্বাক্ষরিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বাতিল করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে চলমান বৈধ পুর্ণাঙ্গ কমিটিকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জেলার কাউন্সিলের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
অপর দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরিত চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর পুনরায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কে.এম. আযম খসরু তার নিজ ফেসবুক একাউন্টে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সহ নতুন একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তার চিঠিতে সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে যে বিবৃতি প্রদান করেন- এতদ্বারা জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভূক্ত সকল স্তরের নেতাকর্মীদের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, সংগঠনের সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) নুর কুতুব আলম মান্নান কর্তৃক জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখা এর কমিটি সংক্রান্ত পত্র ০২/১০/২০২৩ তারিখের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আমার নজরে এসেছে। আপনারা সবাই জানেন জাতীয় শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্রের ১৫ (ঘ) ধারা অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক ফেডারেশন পরিচালনা করার নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) যে কোন বিষয়ে সাধারণ সম্পাদককে পরামর্শ দেয়া ছাড়া কোন চিঠিপত্র দেয়ার এখতিয়ার নাই। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি নুর কুতুব আলম মান্নান সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কার্য পরিধি না জেনে, না বুঝে, অবোধ শিশুর মতো চিঠি-পত্র লিখে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। তার বিভিন্ন সময়ে লেখা চিঠিপত্র দেখে নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তিনি কি প্রকৃত পক্ষে সংগঠন করতে এসেছেন। নাকি সংগঠনের ভিতর গ্রুপিং সৃষ্টি করে দুর্নীতিবাজদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে এসেছেন? জনাব নুর কুতুব আলম মান্নান সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) পাওয়ার পর থেকে সংগঠনকে নিয়ে শুধু ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। সংগঠনের প্রয়োজনে সাংগঠনিক কোন দায়িত্ব তিনি পালন করেন নাই। কুড়িগ্রাম জেলা শাখা কমিটি নিয়ে তার লেখা চিঠি সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সংগঠনকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করার জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মাধ্যমে সম্মেলন করে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গত ২৬/০৯/২০২৩ইং কুড়িগ্রাম জেলা শাখা কমিটি দেয়া হয়েছে। উক্ত কমিটি দিয়ে জনাব নুর কুতুব আলম মান্নান সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) যে সব ভাষায় চিঠি লিখেছেন তা সম্পূর্ণ শিষ্টাচার বহির্ভূত। কোন মূর্খব্যক্তিও এই ধরণের অবান্তর ভাষায় চিঠিপত্র লিখতে পারেন না। তার ভাষা ও জ্ঞান দেখে মনে হচ্ছে তিনি কোন মানসিক সমস্যা ভুগছেন। সুতরাং জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখা কমিটি প্রসঙ্গে জনাব নুর কুতুব আলম মান্নান (চলতি দায়িত্ব) ০২/১০/২০২৩ইং তারিখে চিঠিতে যা কিছু লিখেছেন তা সম্পূর্ণ পাগলের প্রলাপ মাত্র। উক্ত চিঠির সাথে জাতীয় শ্রমিক লীগের কোন সম্পর্ক নাই। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তার এহেন সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ড বিএনপি-জামাত সহ কতিপয় শ্রমিক নেতা নামধানী দুর্নীতিবাজকে উৎসাহিত করেছে। যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) এর এহেন কর্মকান্ড অনুযায়ী “আনফেয়ার লেবার প্রাক্টিস” (অবৈধ শ্রম চর্চা) তাই সংগঠনের স্বার্থে সভাপতি (চলতি দায়িত্ব) জনাব কুতুব আলম মান্নান কর্তৃক জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখা কমিটি সংক্রান্ত ০২/১০/২০২৩ইং খ্রি. তারিখের চিঠি বাতিল করা হলো এবং ২৬/০৯/২০২৩ইং তারিখের কুড়িগ্রাম জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জনাব মোঃ মজিবর রহমান ও সদস্য সচিব জনাব মোঃ আমিনুর রহমান বাচ্চু। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত কমিটি গঠনতন্ত্রের ধারা মোতাবেক বহাল থাকবে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলকে অবগত করা হলো। যা গত ০৭ অক্টোবর’ ২০২৩ইং জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কে.এম. আযম খসরু তার একক স্বাক্ষরে বিবৃতি দিয়েছেন। এ ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার একটি কমিটি সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সহিদুজ্জামান রাছেল এর নেতৃত্বে মাঠে রয়েছে এবং জাতীয় শ্রমিক লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোঃ মজিবর রহমান ও সদস্য সচিব জনাব মোঃ আমিনুর রহমান বাচ্চু’র নেতৃত্বে অপর একটি কমিটি মাঠে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। আগামী ১২ অক্টোবর জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে উভয় কমিটির নেতৃবৃন্দ মাঠ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগকে নিয়ে সচেতন মহল রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহোদয়ের একান্ত সু-দৃষ্টি কামনা করেছে কুড়িগ্রাম জেলা শ্রমিক লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী সমর্থকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *