মো: নাজমুল হুদা মানিক \
ক্রিকেট সম্রাট রামচঁাদ গোয়ালা আর নেই । মরহুমের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট মো: জহিরুল হক খোকা ও সাধারন সম্পাদক জননেতা এডভোকেট মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল সহ নেতৃবৃন্দ। এদিকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর জনপ্রিয় মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু ক্রিকেট সম্রাট রামচঁাদ গোয়ালার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। নীরবে নিভৃতে ৮৫ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে আজ ভোরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম বঁাহাতি স্পিনার ও জাতীয় দলের সাবেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার ময়মনসিংহের কৃতিসন্তান রামচঁাদ গোয়ালা। তিনি ভোর সাড়ে ৬টা ৩০ মিনিটে মৃত্যু বরন করেন বলে জানাগেছে। জাতীয় ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সহ অসংখ্য ক্রিকেটার গড়ার প্রাণপুরূষ। ঢাকাই ক্রিকেটের একসময়কার সম্রাট যিনি ক্রিকেটকে ধ্যানজ্ঞান মেনে চিরকুমার ছিলেন সেই ক্রিকেট পাগল মহামানবের মৃত্যুতে ক্রিড়াঙ্গনের সকলেই শোকাভিভূত। প্রয়াতের বিদেহী আত্মার জন্য সকলেই শান্তি কামনা করেছেন। মৃত্যুর পুর্বমুহুর্ত পর্যন্ত সাবেক ক্রিকেটার রামচঁাদ গোয়ালার সময় কেটেছে ময়মনসিংহের ব্রাহ্মপল্লির একটি ছোট ঘরে। ময়মনসিংহে তিনি সবার প্রিয় ‘গোয়ালাদা’। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বঁাহাতি স্পিনের শুরুটা তঁাকে দিয়ে। খেলেছেন আবাহনীতে একটানা ১৫ মৌসুম। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, টাউন ক্লাব, শান্তিনগরেও খেলেছেন চিরকুমার ন্যাটা বোলার। খেলেছেন ঢাকা লিগে! খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে যুক্ত ছিলেন কিছুদিন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রামচঁাদের ছাত্র। সম্প্রতি কানে কম শোনতেন রামচঁাদ। শরীরটাও ভালো যাচ্ছিলনা। গত বছর স্ট্রোকের পর থেকে শরীরটা ভেঙে পড়েছিল। রামচঁাদের বাবা ছিলেন ময়মনসিংহের সহকারী পোস্টমাস্টার। বাবা চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলুক। কিন্তু মিশন স্কুলের ছাত্র রামচঁাদ সময় পেলেই ছুটতেন সার্কিট হাউস মাঠে। শুরুতে ছিলেন বঁাহাতি পেসার। কিন্তু পরে হয়ে গেলেন বঁাহাতি স্পিনার! রামচাঁদ গোয়ালা জানিয়ে ছিলেন, ‘সার্কিট হাউস মাঠে পণ্ডিতপাড়া ক্লাবের এক ভদ্রলোক প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে এসে খেলা দেখতেন। তিনি বলেছিলেন, আমি বঁা হাতে পেস বোলিং করে টপাটপ উইকেট নিতাম। একদিন উনি বললেন, পণ্ডিতপাড়ায় এসো। এরপর কোচ ফখরুদ্দিন আহমেদের পরামর্শে স্পিন শুরু। ১৯৬২ ঢাকা লিগে ভিক্টোরিয়ার হয়ে অভিষেক স্পিনার হিসেবে।’ ঢাকায় খেলেছেন নিয়মিত। কলকাতায় গিয়েও বাংলাদেশের হয়ে অনেক আনঅফিশিয়াল ম্যাচ খেলেছেন। ইডেনে ১৯৮৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিপক্ষে ম্যাচটি এখনো মনে আছে, ‘ওই ম্যাচে অরুণ লাল আমার বল খেলতে হিমশিম খাচ্ছিল।’ ময়মনসিংহ থেকে কলকাতায় পাড়ি জমানো অনেকে সেদিন রামচঁাদের খেলা দেখতে এসেছিলেন, ‘অনেকে এসে আমার খেঁাজ করতেন। বলতেন, ময়মনসিংহের ওই ছেলেটা কই? আমার কাছে এসে বলতেন শহরে আমাদের বাড়িটা কি আগের মতো আছে?’ ঢাকা লিগের একটি আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ রামচঁাদ ভুলতে পারেননি, ‘কোন সালে খেলাটা হয়েছিল ভুলে গেছি। তবে ওই ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও অরবিন্দ ডি সিলভা। ওই দিন বল দারুণ টার্ন নিচ্ছিল। রকিবুল হাসান বারবার ওদের বোঝাচ্ছিল একটু দেখে খেলতে। কিন্তু ওদের দুজনকেই আউট করেছিলাম। ম্যাচে ৬ উইকেট পাই, আবাহনীও জেতে।’ রামচঁাদের আবাহনীতে যোগ দেওয়ার পেছনেও রয়েছে একটা গল্প, ‘একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দল নিয়ে ময়মনসিংহে এলেন শেখ কামাল। ওরা তখন দাপুটে দল। যা-ই হোক, ওদের কপাল মন্দ ছিল। ম্যাচে ময়মনসিংহের হয়ে ৬ উইকেট নিলাম। ওই দলটা হেরে গেল। মাঠেই শেখ কামালের সঙ্গে পরিচয়। পরে উনি এলেন পণ্ডিতপাড়া ক্লাবে। বললেন আগামী মৌসুমে আবাহনীতে খেলবেন।’ কিন্তু ওই বছরই, মানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হলেন শেখ কামাল। ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন রামচঁাদ। শেখ কামালকে কথা দিয়েছেন খেলবেন, কিন্তু তিনিই তো নেই! এরপর ক্লাবে গিয়ে যোগাযোগ করলেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি স্বাগত জানালেন। পরের মৌসুম থেকে আবাহনীতে খেলতে শুরু করেন। আবাহনীর পুরোনোদের অনেকে রামচাঁদদাকে ঢাকায় আসতে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ফোন করতেন খোকা ভাই, অমলেশদা। ওঁরা বলতেন, এখানে চলে এসো। কিন্তু শারীরিক অবস্থার জন্য যেতে পারি না।’ মনের অজান্তেই তঁার হৃদয়ে স্থায়ী ঠঁাই নেয় আবাহনী, ‘অন্য ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েও যাইনি। আবাহনীতে খেলেছি ১৫ বছর। কিন্তু আফসোস, শেখ কামাল দেখে গেলেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *