কচাকাটা সংবাদদাতা :
চার্জসীট থেকে নাম কাটতে চেয়ে নেয়া পুলিশের ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় আসামীকে না পেয়ে তার কলেজ পড়–য়া ছেলে ও ভাতিজাতে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর তোপের মুখে আটকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এ ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর প্রস্তাবিত কচাকাটা উপজেলায়। গত রোববার রাত ২টার দিকে বাড়ি থেকে দুই ছাত্রকে আটক করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, কচাকাটা কেদার ইউনিয়নের বাহেরকেদার গ্রামে মাদক মামলার আসামী রুহুল আমিন বাবুকে আটক করতে যায় থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামসহ থানার ১০/১২ জনের একটি দল। এ সময় বাড়িতে ছিলেন না ওই আসামী। পরে তার ছেলে কচাকাটা ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র হাবিবুর রহমান ও তার ভাতিজা একই কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দুলাল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটকদের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন এ সময় পরিবারের নারীসহ অন্যান্য লোকজনকে মারপিট করে পুলিশ। এতে চার নারীসহ পাঁচ জন আহত হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, কচাকাটা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম গত ২৪ আগষ্ট বাহের কেদার মৌজার সাহেবের খাষ এলাকার নুর ইসলামের ছেলে আলম মিয়াকে দুই বোতল ভারতীয় মদসহ আটক করে মামলা দেয়। ২৫ আগষ্ট মামলা দায়ের করলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আমিনুল ইসলাম বাবুকেও আসামী করা হয়। জানতে পেরে বাবু এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকে। এক পর্যায়ে মামলার চার্জসীট থেকে বাবুর নাম কেটে দেয়ার কথা বলে বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আবু সিদ্দিকের মধ্যস্থায় ১০হাজার টাকা ঘুষ নেয় এসআই শফিকুল ইসলাম। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার চার্জসীটে বাবুর নামসহ চার্জগঠন করেন পুলিশের ওই এসআই। পরে ঘুষের টাকা ফেরত চায় বাবুর স্বজন ও গ্রামপুলিশ সিদ্দিক। কয়েক দফা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও গড়িমসি করেন এসআই শফিকুল। এরমধ্যে রোববার গাবতলা বাজারে গ্রামপুলিশ ও বাবুর স্বজনরা এসআই শফিকুলের কাছে আবার টাকা ফেত চায়। এতে উভয় পক্ষের সাথে দ্বন্দ হয়।
এরই জেরে রাতে এসআই শফিকুলসহ ১০/১২জন পুলিশ হানা দেয় বাবুর বাড়িতে। বাবুকে বাড়িতে না পেয়ে তার ছেলে এবং ভাতিজাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটকের সময় পরিবারের লোকজন অভিযোগ জানতে চাইলে এলোপাথারী মার পিট করে পুলিশ। এতে আহত হয় শাহাজালালের মেয়ে শাহাজাদী (১৮), বাবুর স্ত্রী হাসিনা(৩০), আজাহারের স্ত্রী রহিমা (৭০) হাসান আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২৭)। আহত সিরাজুল ইসলাম জানান, রাতে ১০/১২জন পুলিশ এসে বাবুকে ধরতে এসে না পেয়ে তার কলেজ পড়–য়া ছেলে ও ভাতিজকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ রয়েছে জানতে চাওয়ায় তাকে লাঠি দিয়ে বেধরক পিটায়। শাহাজাদি জানান, তার ভাই দুলালকে আটক করার পর জানতে চাইলে তাকেও মারপিট করে পুলিশ। এতে তার ডান হাত ফেটে যায়। আহত অন্যান্যদেরও একি অভিযোগ। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ দেখা দিলে সোমবার সকালে কেদার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান কচাকাটা থানায় গিয়ে ওই দুই কলেজ ছাত্রকে ছাড়িয়ে আনেন।
এ ব্যাপারে কেদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানান, বাবুর নামে ওয়ারেন্ট ছিল। রাতে বাড়িতে গিয়ে তাকে পায়নি। পরে পুলিশের সাথে পরিবারের লোকজনের সাথে বিতর্ক হয়। রাগে পুলিশরা তার ছেলে ও ভাতিজাকে তুলে নিয়ে যায়। সকালে ওসিকে বলি এটা কতটা ন্যায় কাজ হয়েছে। পরে তিনি তাদেরকে ছেড়ে দিতে রাজী হয়। ঘুষের বিষয়ে বলেন, ওই চকিদার আমাকে বলেছে টাকার বিষয়ে। প্রথমে এসআই শফিকুল ১০ হাজারে হবে পরে টাকাটা নেয়। কিন্তু চার্জসীটে নাম না কাটায় ওই টাকা নিয়ে চকিদারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এ বিষয়টিও চকিদার বলেছে।
টাকা নেয়ার একাধিক ফোন রেকর্ড সরবরাহ করেন গ্রামপুলিশ সিদ্দিক। একটি রেকর্ডে এস আই শফিকুলকে বলতে শোনা যায়’ বাবুর খবর কি, বাবুর ছেলে টাকা দিবে তাহলে ১৫হাজার টাকা নিয়ে আয়। আগামীকাল গিয়ে নিয়ে আয়।
এ বিষয়ে এস আই শফিকুল ইসলামের সাথে সোমবার সোয়া পাঁচটার দিকে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি একটা কাজে মাঠের মধ্যে রয়েছি। পরে কথা বলি।
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক খলিল বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ওই বাড়িতে মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছিল। তাকে গ্রেফতার করতে আমাদের লোকজন গেলে পরিবারের লোকজন মিসবিহ্যাভ করে। একারণে যাতে আসামী বাবুকে পাওয়া যায় সেজন্য তার ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়ে আসা হয়। সকালে চেয়ারম্যান বলার পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসআইয়ের ঘুষের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা আমি আসার আগের ঘটনা। এ সব বিষয়ে আমার জানার কথা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *