ফারুক আহমেদ ,কলকাতা

মহান ভারতের সর্বত্র বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সাম্প্রদায়িকতার যে চোরাস্রোত বইছে, তার বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিনিয়ত সতর্ক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়েই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নাম ‘ইন্ডিয়া’ জোট ইতিমধ্যেই মোদি শাসনের পতন সুনিশ্চিত করতে রাতের ঘুম হারাম করেছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, বহরমপুর থেকে আসানসোল, ত্রিপুরা থেকে অসম, দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ চষে বেড়াচ্ছেন, এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত জোটের নেতা থেকে কর্মীরা। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট প্রচারে ঝড় তুলছেন অনেকেই। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারে কাছে কেউ নেই। জনসভা আর পদযাত্রাই হোক, ভোট প্রচারের জন্য দেশ এখন মমতাময়। রাহুল গান্ধী থেকে অখিলেশ যাদব, মহারাষ্ট্র থেকে বিহারের মানুষ আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেত্রী হিসেবে দেখছেন৷ আর সেই ভয়ে বিরোধী মুখ সব আতঙ্কে চুপসে গেছে। ২০২১ সালে বাংলার বিধানসভার নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা ২ মে জানা গিয়েছে ফলাফল দেখে, এখন দেশের মানুষের চোখ বাংলার মহান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। একটা হুইলচেয়ারকে মোকাবিলা করতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপির বহু নেতা হররোজ বাংলাতে প্রচার করতে এসেছিলেন এবং বিদ্বেষ প্রকাশ করেছিলেন। সচেতন বাঙালির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করতে চাইছিলেন কারা তা বুঝতে পেরেছিলেন আমজনতা। মোদি ও শাহ জুটির ব্যর্থতায় দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা। জ্বলছে মণিপুর।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম সরকারে আসেন ২০১১ সালে তখন তাঁর সামনে যে-দুটি মূল সমস্যা হাজির হয়েছিল তা হল জঙ্গলমহল ও পাহাড়। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মাওবাদ। মাওবাদ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জঙ্গলমহলের জন্য তিনি আলাদা প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেন। জঙ্গলমহলের জন্য পৃথকভাবে পুলিশ ও হোমগার্ড নিয়োগ করেন। দু’টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জঙ্গলমহলের মানুষ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলেন। পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করেন। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছেন বাজেটে। নবান্ন ও মহাকরণ থেকে জেলায় প্রশাসনিক মহল, সর্বত্র তিনি কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের কল্যাণে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের নিকট দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চালু করেছেন বঙ্গসম্মান। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, তার জন্য তৎপর হয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তিনি জেলায় জেলায় আরও হাসপাতাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সখ্যালঘু উন্নয়নের প্রশ্নে বামশাসকরা ছিলেন নির্বিকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু উদ্যোগী। দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী থেকে একাধিক প্রকল্প ইতিমধ্যেই ইতিহাস রচনা করেছে। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি অনেক মুসলমান গোষ্ঠীকে ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চাকরিক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, কবরস্থান, ইদ্গাহ সংস্কারের জন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সক্রিয় করে তুলেছেন। রাজ্যে ওয়াচ টাওয়ার ও হস্টেল নির্মাণ করেছেন। সংখ্যালঘু সংকটে তিনি গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করেছেন। রাজ্যে এই প্রথমবার এত সংখ্যালঘু রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকার অর্জন করেছেন। পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের এত বড় সুযোগ অন্য সরকার দেয়নি। কোন দল কতটা সমর্থন পাবে তা ভাবার বিষয় ছিল। বাংলার সংখ্যালঘুরা বোকা নয়, তাঁরা এখন বুঝতে পারেন। কে বা কারা রাজ্যের মানুষের ও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত কল্যাণ চান। বিগত ৩৪ বছর বাংলার মানুষ দেখেছেন সংখ্যালঘুদের সামাজিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কোনও চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতে একটা উদাহরণ ওই সময়ে রাজ্যের ২৩টা জেলায় বামফ্রন্টের পার্টি সম্পাদক ছিলেন, কিন্তু কোনও মুসলিমকে সম্পাদক পদে বসাতে পারেননি তৎকালীন বাম কর্তারা। বামফ্রন্টের কর্তারা বলেন, তাঁরা নাকি অন্যদের থেকে অসাম্প্রদায়িক। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কখনও মুসলিম আধিকারিককে বসাতে পারেননি কেন, এই প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এই কালো ইতিহাস বাংলার মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মুসলমান কয়েকজনকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনেও বসিয়েছেন। বাম সরকার যা কখনও ভাবতেই পারেনি। বামফ্রন্টের কর্তারা শুধু ভোটের সময় ভোট লুঠ করতে আর লেঠেল বাহিনী করে মুসলিমদের এবং দলিতদের এগিয়ে দিয়েছে সুচতুরভাবে। মারছে মুসলিম, মরছে মুসলিম আর মরছে দলিতরা। বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি তাদের চালাকি ও অত্যাচারের কথা।
অপ্রত্যাশিত দেশভাগের ফলে সাবেক বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সমাজ পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। মানসিক অস্বস্তিকাতরতায় আচ্ছন্ন মুসলমান জাতিসত্তা এই সাড়ে সাত দশকে কোন অবস্থানে? স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবাংলায় জীবন বিকাশের সব ক্ষেত্রে বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে মুসলমানদের নানা মতে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ‘গণতান্ত্রিক সাম্যতাহীন’ নির্লজ্জ স্বার্থসিদ্ধি আর নানাবিধ ধান্ধাবাজির সওয়ালে দাবার বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করেছে অর্থাৎ ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে।
এই নিঃসহায় ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মাদারি নাচের উপাদান করে তুলেছে। হরেক কিসিমের কারসাজির উৎসকেন্দ্রকে এক নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে যা স্পষ্ট তা খোলসা করে বলা দরকার। সত্য নির্মম, সেক্ষেত্রে কাউকে রেয়াত করার প্রশ্নই ওঠে না। সে সুযোগও নেই, কেননা কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী এই ধর্মবিশ্বাসী সমাজ ‘সিউডো সেক্যুলার’, নরম ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদীদর সমস্ত রকমের ফন্দি আর ফিকির অনুধাবনের পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশবিভাগের পর তারা অন্তবিহীন সমস্যায় আক্রান্ত, জর্জরিত এবং তারা রাজনৈতিক সমাধান কোন পদ্ধতিতে সম্ভব তার তত্ত্বগত, কৌশলগত আর পরিস্থিতি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও পারঙ্গম হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ তারা দিয়েছে বিগত তিন বিধানসভা ও ২০১৪ আর ২০১৯ লোকসভা ভোটে। কোনও ‘ললিপপ’ আজ তাদের তৃপ্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। অতলান্তিক সমস্যা আর অস্তিত্বের সংকটগুলো অতিক্রম করে কীভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবে তার পূর্ণ একটি ছকও সংখ্যালঘু মনে ক্রিয়াশীল।
২০২১ নির্বাচনের দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের বেশিরভাগটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছে। তাই বিরোধীরা এই বাংলায় সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। বিগত বাম শাসনের ও কেন্দ্র সরকারের অহমিকা, ঔদ্ধত্য, ভণ্ডামি আর দুর্নীতির গহ্বরে নিমজ্জিত তস্কর শাসকগোষ্ঠীর বলির পাঁঠা হতে তারা আর আগ্রহী নয়। বাম জমানায় ও কেন্দ্র শাসনে প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে ওঠা সমাজ এখনও সচেতন আছেন। আশার কথা, মানবীয় চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আমজনতার মধ্যে থেকে সচেতন অংশটি কেন্দ্র সরকারের অপশাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তন প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজবেত্তা, প্রাবন্ধিকদের ভাবনাচিন্তা তুলে ধরছেন। বাংলার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু শিক্ষা প্রসারে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়ায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এসেছে ইতিমধ্যেই। এত নতুন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের রাজত্বে তা সত্যি অভাবনীয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একটি অংশ, যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত, তাদের বোধোদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। পরন্তু সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাড়ে-গর্দানে এক হয়ে যাওয়া বিজেপির রাজাবাবুরা এতদিনে যে সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজাংশের উপস্থিতিকেই স্বীকার করতেন না, আজ তাঁরাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন সংখ্যালঘু ও দলিতদের কাছে। কলাপাতায় খেয়েই বাংলা জয় সম্ভব নয়। তা বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন। সংখ্যালঘুরা চান সমদৃষ্টি সমাজবিকাশ।
রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন বৈষম্য না করে উন্নয়ন করা যায়। তাই উন্নত, ঐক্যবদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল বাংলা ও দেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলায় ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রকাশ্য জনসভা করবেন বাংলার নয়নের মণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা জানি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানেন বৈচিত্রময় ভারত হল নানা ভাষার ও নানা জাতের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের দেশ হল ভারত। মিশ্র সংস্কৃতি আমাদের অর্জিত বৈভব, তা আমরা কখনওই নষ্ট হতে দেব না। ৮ জুলাই ২০২৩ পঞ্চায়েত ভোট রাজনৈতিক হিংসা ছড়িয়ে মানুষের মন জয় করতে পারেনি রাম-বাম-কংগ্রেস। তাদেরকে বাংলার সচেতন মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোটের পরবর্তী সময়ে রেজাল্ট প্রকাশ হলে দেখা যায় রাজ্যের প্রতিটি জেলায় শুধুই ঘাস ফুল ফুটেছে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচি সফল হয়েছে বাংলা জুড়ে। যার ফলে বাংলার সর্বত্র তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার হয়েছে।
নয়া নাগরিকত্ব আইন, সিএএ, এবং এনআরসির বিরুদ্ধে উদার সহিষ্ণু ভারতের কোটি কোটি মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে, সংবিধানকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশে, প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বিভেদকামী সরকারের পতন সুনিশ্চিত করতে জনতার এই একতা দেখে আমরা মুগ্ধ হই।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল। মহম্মদ আলি জিন্নাহ বলেছিলেন, হিন্দু আর মুসলমান দুটি পৃথক জাতি, তাই দুটি আলাদা দেশ হওয়া দরকার। হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকরও একই নীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু ভারতের সংবিধান প্রণেতারা জিন্নাহ বা সাভারকরের পথ নেননি। তাঁরা ভারতবাসীকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর সেই সংবিধানকে অস্বীকার করে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে বাবাসাহেব আম্বেদকর পর্যন্ত সবার সেক্যুলার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্যা-এর নামে দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের সরকার। সংখ্যার জোরে নয়া নাগরিকত্ব আইন সিএএ পাশ করেছে ঠিকই, কিন্তু বিভাজনের রাজনীতির ঘৃণ্য পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বিজেপি সরকার কতটা সফল হবে তা কিন্তু সময় বলবে। কারণ, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে রক্ষা করতে দেশবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মণিপুর জ্বলছে। দেশের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন।
আমরা সবাই জানি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার নেতারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলেন এবং দেশ বিভাজনের মূলেও ছিলেন তাঁরাই। আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা আমাদের দেশপ্রেম শেখাচ্ছেন! এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে!! যারা বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারা দেশের সাধারণ মানুষের কখনও কল্যাণ করতে পারে না।
চিটিংবাজ ব্যবসায়ীরা দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়েছে। আর তাদেরকে ধরে আনতে বিজেপির সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কালো টাকা ফেরত আনতে পারেনি নরেন্দ্র মোদির সরকার। সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি এই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারেননি।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফলে প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষ নিঃশব্দে শেষ হয়েছেন এবং হচ্ছেন। নোটবন্দি থেকে জিএসটির মতো অবিমৃশ্যকারী পদক্ষেপে সারা দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদির কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই, কোনও বক্তব্য নেই। ধর্মের বড়ি খাইয়ে গোটা দেশকে আজ ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে চলেছেন তিনি।
দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদি সরকার। বিগত ৪৫ বছরের পরিসংখ্যানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ দিন দিন দিশাহারা বোধ করছেন। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে উপযুক্ত রোজগারের সুযোগ-সুবিধা থেকে অসংখ্য মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এসবের প্রতিকারে নরেন্দ্র মোদির সরকার নিশ্চুপ।
দেশের নাগরিকদের হাজার সমস্যার সমাধান করতে না পেরে, অন্যদিকে দৃষ্টি ঘোরাতে, গোটা বিশ্বের মানুষের সামনে সংবিধান বিরোধী নতুন নাগরিকত্ব আইন, ধর্মের নামে হিংসা ছড়ানো ও কৃষি বিল হাজির করে নরেন্দ্র মোদি সরকার কী বার্তা দিতে চাইছে তা বুঝতে হবে। বিভেদমূলক শক্তিকে রুখতেই হবে। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার চোখে দেখে মেরুকরণের রাজনৈতিক ফয়দা তোলা যাবে না কর্নাটক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন দেখিয়েছে।
মানবিক চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আমজনতার সচেতন অংশটি গেরুয়া শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজবেত্তা, প্রাবন্ধিকগণ তাঁদের ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরেছেন লেখালেখির সুবাদে। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম ছিল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন।
ইতিহাস বলে, বিজেপি’র মূল চালিকা শক্তি আরএসএস ও তার তৎকালীন দোসর হিন্দু মহাসভা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ইংরেজদের পক্ষেই ছিল তারা। শুধু তাই নয়, দেশভাগের মূলে প্রকৃতপক্ষে ওই দুই সংগঠনের নেতাদের ভূমিকাই ছিল আসল। অথচ, সেই আরএসএস-জাত বিজেপি’র অধুনা নেতারা দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে কী না করছেন! বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা। কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলন চলছে আজ-ও কৃষি বিল বাতিল করতে এগিয়ে আসছে না বিজেপির সরকার।
এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তাঁরা। ওই স্বপ্ন সফল করতে তারা হাত বাড়িয়েছিল বাংলার দিকে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। বাংলার মানুষের রায়ে বিজেপি বড় চপেটাঘাত খেয়েছে।
বাংলার যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর সবার প্রিয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রতি মানুষ আস্থা রেখেছেন এবং বাংলা থেকে বিজেপির পতন শুরু হয়েছে। আগামীতে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবে বিরোধী শক্তি। জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে জয় সুনিশ্চিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন ভরসা। সামনের নির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে শাসন ব্যবস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে আসার রাস্তা তৈরি হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে একটার পর একটা বিল এনেছে কেন্দ্র সরকার। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রথম হবেন কি না তা সময় বলবে। তবে দেশবাসী দিদিকেই চাইছে বলেই ২০২৪ সালে মোদি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। জয় সুনিশ্চিত হবে বিরোধী জোটের। সকলের মুখে একটাই আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে এখন, দেশ বাঁচাতে দিল্লি দাপাবেন হাওয়াই চটি। বাংলার মানুষ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাই পারে মোদি জমানার অবসান ঘটাতে।
গেরুয়া শিবিরের নানান অন্যায় আগ্রাসনকে রুখে দিতে বাংলার বহু সচেতন ব্যক্তিত্ব জোরদার লড়াই করছেন। লড়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে তাঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব ওই সব অগ্রণী অংশের ভাবনাকে প্রণাম।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় দেড়শো কোটি ভারতীয়দের অনন্যতা রক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের কল্যাণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। এটাই আশার আলো।
গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু বিভেদকামী রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে, বিভেদকামী শক্তির অবসান সুনিশ্চিত করতে একটাও ভোট দেবেন না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারী দলকে।
অনেক বছর পেরিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও আমরা সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ভারত গড়ে তুলতে পারিনি। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি।
আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন গঙ্গার ভাঙনের মতো তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাঁদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই।
আমরা বঞ্চনা চাই না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সে-ই আমাদের দুঃখের সমভাগী।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। ‘লাভ জেহাদ’ ও ‘গো রক্ষা’-র নামে অসহায় সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, যা চোখে দেখা যায় না। এই সব দৃশ্য প্রকৃত ভারতবাসীদের চোখে জল আনছে।
অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে স্বদেশে চরমভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। ক্লান্ত শ্রমিকরা রেললাইনে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তাও মোদি সরকার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হতাশাজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
বিভেদকামী শক্তি জাতিবিদ্বেষ ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে ঘৃণা ও অবজ্ঞা পোষণ করছে তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। বিভেদকামী নীতির অশুভ প্রয়াস বন্ধ করতেই হবে। মুসলমানদের শত্রু বানানোর প্রচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে জনগণের মধ্যে একতা থাকা জরুরি। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদার মানুষজন কিন্তু সর্বদা ভারতের কল্যাণে এবং সংবিধান রক্ষা করতে মুসলমানদের আগলে রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনেও ভারতকে সঠিক পথ দেখাবে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ভারতের শুভবুদ্ধির নাগরিকরা এগিয়ে আসছেন।
জাতীয় বিপর্যের মধ্যেও হতাশ হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। ভারত আকাশে একদিন মুক্তির সূর্য উঠবেই বিভেদকামী রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করতে। সেই মুক্তি সূর্য আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশ পরিচালক হিসাবে দেখতে হলে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতেই হবে দেশবাসীকে।
বাংলায় সংখ্যালঘু উন্নয়নে জোর, মাদ্রাসাকে আরও বেশি আধুনিক করতে কমিটি গড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রিপোর্ট দেবে ওই কমিটি। এই কমিটিতে রাখা হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট মানুষজনদের। রাজ্যের মাদ্রাসাগুলি বর্তমানে অনেক উন্নত হয়েছে, সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েরা আইএএস বা আইপিএস হচ্ছে। বিধানসভায় এমনই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাদ্রাসাগুলির যাতে আরও উন্নতি হয়, সেদিকে এবার আরও বেশি নজর দেওয়ার কথা বলেছেন মমতা। সেই সঙ্গে মাদ্রাসাগুলির উন্নয়নে কমিটি গঠন করার কথাও বলেছেন তিনি। সংখ্যালঘু উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। অসংখ্য সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীকে বাইরে পড়ার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “সংখ্যালঘু স্কলারশিপে দেশের মধ্যে আমরা এক নম্বর। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের বঞ্চনা করেছে। স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ৪৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দিই।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কাজ চলছে। কোথায় কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে সেই তালিকাও তুলে ধরেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজ সংখ্যালঘুদের অনেকেই আইএএস বা আইপিএস হচ্ছে। সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য এবং মাদ্রাসাকে আরও বেশি আধুনিক করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। সব দিক খতিয়ে দেখে ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দেবে ওই কমিটি। যে মাদ্রাসাগুলোর রেজিস্ট্রেশন নেই সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই কমিটিতে রাখা হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট মানুষজনদের।

২৩৫টি মাদ্রাসা, যারা সরকারি সাহায্য পায় না, তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, খারিজি মাদ্রাসা অর্থাৎ যেখানে ধর্ম প্রচার করা হয়, সেগুলিকে সাহায্য করার জন্য ও উন্নয়নের জন্য কমিটি গঠন করার কথা জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০১১ সালের তুলনায় সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাজেট বেড়েছে ১২ গুণ। বিরোধীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আমরা সব দল, সব ধর্মের সব মানুষের জন্য কাজ করব। আপনাদের কিছু বলার থাকলে আপনারা আমার কাছে এসে বলবেন।”
৩১ জুলাই ২০২৩ সোমবার বিধানসভায় একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পর্বে উঠে আসে মাদ্রাসা প্রসঙ্গও। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সব ধর্মের জন্য কাজ করছি। সংখ্যালঘুদের নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলছে। কিন্তু সবার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে রাজ্য সরকার।’’
মাদ্রাসা নিয়ে এদিন একাধিক বিষয় উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেন, খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে স্বীকৃতি দিতে চায় সরকার। যাতে এখানে যাঁরা পড়েন তাঁদের স্কলারশিপ পেতে সুবিধা পান। খারিজি মাদ্রাসাগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যারা আগামী ৬ মাস সময় ধরে সমীক্ষা করে রিপোর্ট দেবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য।

এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু বিভাগ নিয়ে অনেকে অপপ্রচার করছেন। আমি বলব আমাদের সরকার সবার জন্য কাজ করছে। বিরোধী দলগুলিকে বলব, আপনাদের কাজ হলে, আপনারা আমার কাছে আসবেন। কাজ করতে ভুল হলে গঠনমূলক সমালোচনা করুন। প্রয়োজনে আমার কাছে আসুন।’’
সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য কী কী করেছে সেই খতিয়ানও তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বাম আমলের সঙ্গেও তুলনা টানেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের জন্য ২০১০-১১ সালে বরাদ্দ ছিল ৪৭২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪২৩৩ কোটি টাকা। দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু স্কলারশিপে আমরা এক নম্বর। সংখ্যালঘু এলাকা উন্নয়নে ৮৫৫ কোটি দেওয়া হয়েছে।’’
সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা নিয়েও সরব হন বিধানসভা থেকে। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করেছে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ৪৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দিই। সংখ্যালঘুদের জন্য বহু কাজ চলছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে। মেধাশ্রী দেওয়া হচ্ছে। ওবিসিদেরও স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। স্বনিযুক্তির জন্য মাইক্রো ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে।’’
মাদ্রাসায় নিয়োগ নিয়ে এদিন মমতা বলেন, ‘‘নিয়োগ হবে শিগগির। নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। উর্দু অ্যকাডেমির বাজেট বাড়ানো হয়েছে।’’ পাশাপাশি মমতা এও জানান, সাঁওতালি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সাঁওতালি ছেলেমেয়েদের জন্য নাচ এবং গানের জন্য ডিপ্লোমা কোর্স চালু হচ্ছে। সাঁওতালি ভাষায় এমএ পড়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সংখ্যালঘু সমাজের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভূতপূর্ব কাজ করেছেন। শিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এগিয়ে আসছেন। এটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার সংখ্যালঘু কল্যাণে কত আন্তরিক। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ বাড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজ্য বাজেটে এই খাতে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেটের তুলনায় এই খাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ৩৩ কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মমতার বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গে এক বছরে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা।
ভারতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০১১ সালে পরিচালিত আদমশুমার অনুযায়ী, ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ১৭ কোটি, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মুসলমান, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ, তথা ভারতে সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়ন বলতে অনেকাংশে মুসলমানদের উন্নয়নকে বোঝানো হয়। দেশটিতে বসবাস করা অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিকভাবে মুসলমানেরা সবচেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১১ শতাংশ মুসলমান। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মাত্র ৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। গুজরাটে কোনও সংখ্যালঘু দফতরই নেই।
ভারতে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বরাদ্দের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। জনসংখ্যার বিবেচনায় দেশটির সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। এখানে প্রায় ৪ কোটি মুসলিমের বসবাস, যা রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে উত্তর প্রদেশে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্য নয়, বরং যেসব রাজ্যে বিজেপির সরকার নেই, সেখানেও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বড় অঙ্কের বরাদ্দের চিত্র সচরাচর দেখা যায় না। এ খাতে ২০২০–২১ অর্থবছরে মাত্র ৫৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল মহারাষ্ট্রে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবস্থানে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই মনোযোগী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপ্রতিরোধ্য সেনানায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলার মানুষের কল্যাণে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়ে আপ্লুত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে তিনি দেখিয়ে দিলেন বৈষম্য না করেও পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রকৃত অর্থে কল্যাণ করা সম্ভব। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের কল্যাণে নয়া নজির গড়ছেন।
বিভেদকামী শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই পথ দেখাবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবাংলার প্রতিটি জেলায় জনসভায় প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন। নবজোয়ার কর্মসূচি সফল করে তিনি আশার আলো পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে ঘরে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা বাড়তে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাই ভরসা এই মুহূর্তে। ২ নভেম্বর শাহরুখ খান-এর জন্মদিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান-এর জন্মদিন। তাঁর ভক্ত ও ফ্যান ফলোয়ার নিরিখে সব থেকে বিশ্বের জনপ্রিয় নায়ক হচ্ছেন শাহরুখ খান। সেই শাহরুখ খান-এর সঙ্গে বাংলার আত্মিক যোগাযোগ খুব নিবিড়। বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতি-চলচ্চিত্র বিকশেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাহরুখ খানকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পাশে পেয়েছেন।
ভারতীয় রাজনীতিতে যে কোনও পরিস্থিতিতেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সেরা প্লেয়ার, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২০১৬-তে রাজ্যের ক্ষমতায় মমতার প্রত্যাবর্তনের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনি। বাংলার কল্যাণে প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। ২০২১ বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল যুব দলের সেই অধিনায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব সম্প্রদায় শপথ নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার কুর্সিতে ফের অধিষ্ঠিত করার। তা করেও দেখালেন। বিপুল জয় সুনিশ্চিত করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন তাঁর দেখানো পথেই এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পিছনে অনেকেই দারুণ ‘খেলছেন’। কিন্তু ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই। নির্বাচনের প্রাক্কালে, এলাকায় চষে বেড়িয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। বাংলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে বেড়িয়ে তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে বিগত ১২ বছরে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা। কাকদ্বীপ থেকে ধূপগুড়ি সাধারণ মানুষের জনজোয়ার সম্ভব হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচির জন্য। বাংলার জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে প্রকৃত অর্থে জনসেবা করছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে সরকারি সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে তিন দৃঢ়সংকল্প করে এগিয়ে আসছেন।
বামফ্রন্টের আমলে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া এই বাংলাকে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী আবার সামনের সারিতে অধিষ্ঠিত করেছেন, সেই লড়াইয়ের কথা বাংলার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছেন তিনি। মমতার সাফল্য, মমতার আগামী দিনের কর্মসূচি প্রচারের মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সেইমতো তাঁর যুববাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের কাছে যেতে, মানুষকে বোঝাতে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে যে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে, সেই উন্নয়নের বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জয় সুনিশ্চিত করে তোলার পিছনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান কারও থেকে কম নয়। তাঁর দুর্বার ডাকেই তৃণমূলের হাত শক্ত করতে সমর্থনের নবজোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তাইতো, যতই জোট গড়ুক সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি, মানুষ বুঝতে সমর্থ হয়েছিল, অত্যাচারী সিপিএম এবং বিজেপি আর নয়, বাংলার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে যাঁর হাত ধরে, তাঁকেই বাংলার কুর্সিতে দরকার। যুব সংগঠনই দলের ভবিষ্যৎ। যুব সংগঠনের বৃদ্ধি না হলে, নতুন মুখ উঠে না এলে, যে-কোনও দলেই পচন ধরে। আর মানুষের পাশে, মানুষের কাছে গেলে, দলে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হতে বাধ্য। দলীয় সদস্যপদ নবীকরণ হওয়া মানেই দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠা। সেই সরল সাধারণ মন্ত্রই যুব নেতা ও দেশের নেতা হিসাবে রাজ্যের প্রতিটি যুব শাখার অন্দরে এবং সাধারণ মানুষের মনে প্রবেশ করিয়ে দিতে পেরেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বয়সে নবীন হলেও, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর দেখানো পথই তাঁর এগিয়ে চলার সোপান। তাই তো যুব সংগঠনের দায়িত্ব এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, শৃঙ্খলা আর অনুশাসনই দলের মূলমন্ত্র। বলেছিলেন দলের অন্দরে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত নয়। চূড়ান্ত করে দিয়েছিলেন যুবনেতা থেকে সাধারণ কর্মীদের চলার পথ। তাঁর নির্দেশনামার প্রথমেই ছিল, মানুষের জন্য কাজ। বলেছিলেন, মানুষের জন্য জীবনপাত করুন, স্বার্থসিদ্ধি মানব না। রাজ্য সরকারের কর্মসূচি ও সাফল্যের কথা বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হবে। যুব সংগঠনের পাশাপাশি দলের সাধারণ সদস্যদের মাধ্যমেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা গ্রামেগঞ্জে, শহর-শহরতলির অলি-গলি, তস্য গলিতে ছড়িয়ে পড়বে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে যদি এই বার্তা মানুষের মনে প্রবেশ করানো যায়, তাঁর প্রভাব পড়বে বহুগুণ। দলের প্রতি, দলনেত্রীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে। দল বাড়বে। সরকারের উন্নয়নমুখী কাজের প্রচারে যোগ দিতে ভিন্ন ভিন্ন দল থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ভিড় জমাতে শুরু করবেন। তাঁদের দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য ছাঁকনির কাজ করার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে যুবকর্মীদের সঙ্গে দলের পুরাতন কর্মীদের। আরও একটা বড় কাজ, ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। কেননা ছাত্র সংগঠনের পরের ধাপই যুব সংগঠন। ছাত্র নেতা-কর্মীদের যুবস্তরে নিয়ে আসার ও তৈরি করার দায়িত্ব তো যুবনেতা-কর্মীদেরই।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, মূল সংগঠনের সঙ্গে নীতিগত ফারাক বা কোনও সংঘাত তিনি চান না। এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সর্বস্তরে। মনে রাখতে হবে যুব সংগঠন দলের ডানহাত। এ হাত যত শক্ত হবে, দল ততটাই মজবুত হবে। কিন্তু মূল সংগঠনের সঙ্গে স্বার্থ-সংঘাত থাকা মানে দল নড়বড়ে হয়ে পড়া। যুব শাখার একটা বিশেষ দায়িত্ব থাকে। দলীয় নীতি মেনে সেইসব কাজের মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়নের প্রচারে মুখ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসে এক, দুই বা তিন বলে কিছু নেই। দলের শীর্ষে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নিচে আছেন কর্মীরা। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেত্রীর কর্মযজ্ঞকে সফল রূপায়ণে সহায়তা করব। সেই ব্রত নিয়েই তিনি এগিয়ে চলেছেন। যে মন্ত্রে বিধানসভায়, পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় এসেছে, সেই একই মন্ত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০২৩-এ জয় এসেছে। সামনে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪। সচেতন নাগরিকগণের কাছে একটাই দাবি নিয়ে জয় সুনিশ্চিত করতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের। জয় সুনিশ্চিত। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই তো এখন লক্ষ্য গ্রাম।
গ্রামের উন্নয়নে তাঁকে দলনেত্রী যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেই মতোই তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বিপুল কাজ করছেন। গ্রামে বিগত দিনে যে উন্নয়নের ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা তিনি তুলে ধরছেন তাঁর দলের সদস্য ও কর্মীদের মাধ্যমে। বলছেন ভবিষ্যৎ কর্মযজ্ঞের কথাও। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে মাথাচাড়া দিয়েছিল অনৈতিক জোট। ২০২১-এ মাথাচাড়া দিয়েছিল অশুভ শক্তি হিসেবে বিজেপি। তাকে সমূলে উৎখাত করা গিয়েছে। এখন বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে তিনি বাংলার সমস্ত নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হয়ে জোরালো প্রচার চালিয়ে যাবেন। এবার ভোটেও কর্মীদের যে-কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। বলেছেন অসন্তোষ থাকলে দলের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সমস্ত সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি আদর্শ নেতার পরিচয় বহন করতেই আগ্রহী। তিনি চান দুর্যোগ বা ঝড়ে প্রকৃত কান্ডারির মতোই শক্ত হাতে হাল ধরতে। স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদ্ধপরিকর। যুবাদের অনুপ্রেরণার তিনিই উৎস। রাজনীতিতেও সক্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শক্ত হাতে হাল ধরেছেন।
২০২১ বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভাবে জিতিয়ে আনতে তিনি প্রধান সেনাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলায় পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে তিনি সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিক করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। বাস্তবিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় পর্বে হ্যাটট্রিক করিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তীকালে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার প্রতি প্রান্তে সংগঠন ও সদস্য সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। বাংলার কল্যাণে ও দেশের কল্যাণে যুব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আদর্শ ভারত গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই দিদির যোগ্য উত্তরসূরি। তিনিই আলোর দিশা হয়ে উঠছেন।
রোল মডেল বাংলাই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প অন্যরাও নিচ্ছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প অন্যরাও নিচ্ছে। দুয়ারে রেশন প্রকল্প। দুয়ারে সরকার। স্বাস্থ্যসাথী থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প ইতিমধ্যেই ইতিহাস রচনা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই এগোতে চাইছে অন্য সব রাজ্য সরকার। এমনকী বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোও নিচ্ছে এই সব প্রকল্প। মানুষের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প ইতিমধ্যেই রোল মডেল হিসেবে উপস্থিত ভারত জুড়ে।
কেইনসীয় অর্থনীতির মৌলিক নীতি হল, অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে হলে কবে বাজার চাঙ্গা হবে, তার জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না। সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। বাজার চাহিদা বৃদ্ধির জন্য নগদ অর্থের জোগান বাড়াতে হবে। মানুষের হাতে নগদ অর্থ জুগিয়ে সরকারকে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই মা মাটি মানুষের সরকারের যুগান্তকারী প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। এখনও পর্যন্ত প্রায় দুই কোটির বেশি মহিলা এই প্রকল্পে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশই তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসির আওতাভুক্ত। চারিদিকে আলোড়ন তুলেছে এই প্রকল্প।
দেশবাসীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলি, সবাই জানেন, কেন্দ্রের অন্যায় আচরণ ও পূর্ববর্তী বাম জমানার পাহাড়প্রমাণ দায়ের সুদ মেটাতে গিয়ে ভয়ানক আর্থিক সংকটের মধ্যে জননেত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার। তবুও এই সরকার ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘সবুজসাথী’ ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’-এর মতো ডজনখানেকেরও বেশি জনমুখী প্রকল্প চালু করায় সব ধর্ম সম্প্রদায়ের আমজনতা উপকৃত হয়েছেন।

এ রাজ্যের ‘মার্কসবাদী’দের মতো তিনি তত্ত্বের কচকচানি না করেও গরিবদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অবহেলিতদের তিনি সম্মান জানিয়েছেন। দেশ জুড়ে সর্বত্র বিকৃত দর্শন বিজেপি এবং তাঁর প্রভু আরএসএস-এর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে চারিদিকে বিদ্বেষ ছড়িয়ে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।
তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নতুন কর্মসূচি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পটি ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাংলার মানুষের মনে। মুখ্যমন্ত্রীর ঐতিহাসিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পটি বিশ্ব জয় করেছে। ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ব দরবার থেকে সেরা পুরস্কারও ছিনিয়ে এনেছেন।
এবার পশ্চিমবাংলার প্রতিটি পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ মহিলা সদস্যদের ন্যূনতম মাসিক আর্থিক সহায়তা দিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার তথা বাংলার মানুষের নয়নের মণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে এসেছেন। বাংলার ২৩টি জেলায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পটিতে নাম তুলতে মায়েরা আবেদন করেছেন।
ইতিমধ্যে আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে দু’কোটির বেশি। এর মধ্যে একটি বড় অংশ অনগ্রসর শ্রেণি অর্থাৎ, এসসি, এসটি ও ওবিসি। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পটি অতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলার মুসলিম মহিলারাও এই প্রকল্পের জন্য উপকৃত হয়েছেন।
তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের ক্যাম্প শুরু হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প সফল করতে ফর্ম পূরণ করছেন লাইনে দাঁড়িয়ে সাধারণ মহিলারা। তাঁদের ফর্ম পূরণ করতে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন বিডিও থেকে স্থানীয় প্রশাসন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম জমা পড়তেই ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকেই গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ঢুকছে। বাংলার অর্থনীতির পরিসরে নারীর মর্যাদা বজায় রাখতে এমন অভিনব উদ্যোগ আগে কখনও দেখা যায়নি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্ভাবনী ক্ষমতার অনবদ্য নিদর্শনস্বরূপ ‘যুবশ্রী’ ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘সবুজ সাথী’- সহ নানাবিধ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ইতিহাস রচনা করেছে বা করছে।
দশভুজা দুর্গার মতো তাঁর কর্মকুশলতা দশদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অজস্র প্রতিবন্ধকতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা সত্ত্বেও ১১ বছরে যা উন্নতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে, তাতেই তিনি নিজেকে যোগ্য ভারতনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মোদিবাবুর মতো ১৫ লাখ টাকার জুমলা রাজনীতি তিনি করেননি। মোদি-শাহ ভারতের জুমলা পার্টির প্রকল্পগুলির বিবরণ দিতে বসলে পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার একটি পঙ্ক্তিই যথেষ্ট। ‘‘দেশের লোকের ছাড়ছে নাড়ি। বাড়ছে দলের গাড়ি বাড়ি।’’ অতীতে প্রবল সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে এখনও অবধি কোনও যোগ্য বাঙালিকে আজও অধিষ্ঠিত হতে দেখিনি। এবারে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সাংবিধানিক আসনকে চূড়ান্ত মিথ্যাচারে এবং জনবিরোধী আচরণে যিনি কলঙ্কিত করেছেন, সেই অপশাসককে অপসারিত করে বাংলার নেতৃত্বেই দিল্লির সরকার গঠনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভারতের নিপীড়িত মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে এটাই এখন একমাত্র পথ। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সেই নব ভারত নির্মাণযজ্ঞের শুভ সূচনা হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের গবেষকদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, কন্যাশ্রী প্রকল্প মেয়েদের কমবয়সে বিয়ে বন্ধ করবার ও বয়ঃসন্ধির মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প। এই প্রকল্পের স্কলারশিপ (কে-১) স্কুলে পড়া মেয়েদের আর্থিক সহায়তা দান করে। এই স্কিম বালিকা-শিক্ষার উন্নতি ত্বরান্বিত করেছে, বিদ্যালয়ে মেয়েদের উপস্থিতির হার বাড়িয়েছে। এর ফলে মেয়েদের বিদ্যালয় ছুটের হার কমছে। এই প্রকল্প ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা জোগাচ্ছে। এখন আর মেয়েরা কম বয়সে বিয়েতে রাজি হয় না। এই প্রকল্প বাল্যবিবাহ রোধে সাহায্য করছে। অপরিণত মায়েদের মৃত্যু হার কমেছে এই প্রকল্পের ফলে। এই প্রকল্প সমাজিক সচেতনতা তৈরি করেছে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে, মেয়েদের স্বাধীন করেছে, তাদের দক্ষতা দিয়েছে; ফলে তাদের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। কুশলতা বেড়েছে। সংখ্যালঘু ঘরের মেয়েরাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
কন্যাশ্রী প্রাপকরা ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর মাধ্যমে অন্য মেয়েদের যেমন এই প্রকল্পের সুবিধাগুলো বোঝাতে পারছে তেমনি নারী পাচার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *