কলমেঃ রফিকুল হায়দার

মোদের গাঁয়েতে তখন ছিল যে রায় বাবুদের বাড়ী,

কিযে হলো হায়! মোদের ছেড়ে ভারতে দিলেন পাড়ি;

যখনি তাঁদের স্মরি, প্রিয় মুখখানা দাঁড়ালে সমুখে বুকখানি যায় ভরি;

মম বুকেতে তাঁর নামখানি খোদাই করে যে লেখা,

পাঠশালাতে পড়তে গিয়েই প্রথম হয়েছিল দেখা;

এক বেঞ্চেতে একই রুমে করতাম লেখাপড়া,

পন্ডিত বাবু ধুতি পাঞ্জাবীতে ছিলেন অতীব কড়া;

চেয়ারে কখনো বসেননি তিনি টেবিলটাই তার ভালো,

টেবিলে বসেই বলিতেন তিনি জানালা খোলো আসুক একটা আলো;

প্রতিটি শ্রেনীর সকলের নাম তাঁর মনেতে বিরাজ করে,

কেহ না থাকিলে শ্রেনীকক্ষতে তার নামটিই মনে পড়ে;

কেন আসেনি, কিবা কাজ তার বলতে কি কেউ পারো,

না পারিলে কেহ রাগের মাত্রা বের বেড়ে যায় তাঁর আরো;

কি করিস তোরা, মাথা মোটা সব, সুফলা কোথায় যাবে,

আজকের পাঠ যা দিবো আমি সুফলা কি করে পাবে;

করি মম নত শির, বলেছিনু তাঁরে আমি যাবো তাঁর কাছে,

পন্ডিত মহাশয় বলেন, বাহবা রফিক! ভুল করিও না পাছে;

ওরা জমিদার এই তল্লাটে, পাইক-পেয়াদাতে ভরা, কিভাবে যাবে?

জমিদার বাবু বড়ই তিনি যে কড়া?

রফিকের মাঝে কোন ভয় নেই যা ঘটুক তবু যাবে,

সেখানে গেলে কোন কৌশলে সুফলার দেখা সে পাবে;

মনে মনে ভাবে কেন সে নিলো এমন কঠিন কাজ,

অতি ধীরে ধীরে পৌঁছালো সে জমিদার বাড়ীর মাঝ;

দূর থেকে সুফলা দেখিছে তারে, কাছে এসে বলে বন্ধু,

এযে জমিদার বাড়ী!

এখানে সকলি ঢুকতে পারেনা যেতে হবে তাড়াতাড়ি;

কাগজটা লও পাঠশালায় এসো, পন্ডিত রেগে আছেন,

ক্লাশে যাও নাই, কাল কথা হবে, চলে যাই আমি থাকেন;

সেই সুফলা বাবার সাথে ভারতে গেলেন চলি,

রফিকের মনে দারুণ কষ্ট কেমনে এখানে বলি;

মনে যত দুখ ছিল রফিকের প্রকাশিতে নাহি পারে,

জগত সংসার এমনই বুঝে নিল সে হাড়ে হাড়ে;

যে গেছে চলে সে আর হয়তো আসবে নাকো কভু,

এ ধরায় বুঝি এটিই করেন পাঠায়ে সবারি প্রভু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *