ডেস্ক রিপোর্টঃ
দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই গ্রামে গঞ্জে বইছে ইউপি নির্বাচনি আমেজ। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। সংসদীয় বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বেশ কিছু ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছেন। বিএনপি ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে না আসলেও কিছু কিছু ইউপিতে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির নেতারা। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরপরই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে তৃণমূলে। গৃহবিবাদে নাকাল তৃণমূল আওয়ামী লীগ।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে ৮৯৭ জন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন । যার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে দায়িত্বশীল নেতারা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে অনেক ইউপিতে নৌকার বিজয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মূলত নির্বাচনী মাঠে মুখোমুখি হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ফলে এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে শংকিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও । তবে যেসব ইউপি বিদ্রোহী রয়েছে সেসব স্থানে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। দলীয় কোন্দল মেটানো, বিদ্রোহী প্রার্থীদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিবৃত্ত করার শেষ চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনি সহিংসতা কেবল আওয়ামী লীগের মধ্যেই হচ্ছে এটা সঠিক নয়। অধিকাংশ সহিংসতা হচ্ছে মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে। এরপরেও কোন আমরা কোন প্রাণহানি চাই না। সহিংসতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, দলের নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিস্কার। যারা বিদ্রোহী হয়েছেন, তাদের সরে আসার জন্য বলা হচ্ছে, আমাদের নেতারা কাজ করছেন। এরপরও নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যারা যাবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ইউপির মনোনয়নে দায়িত্বশীল নেতাদের যোগসাজশে অনিয়ম, দুর্নীতি করা হয়েছে এমন সহস্রাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রে। অধিকাংশ অভিযোগই স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে। যদিও স্থানীয় এমপিদের মনোনয়ন বোর্ডে রাখা হয়নি। কিন্তু তারপরও এমপিরা যাদের চেয়েছেন তারাই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন অধিকাংশ। যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে স্বাক্ষর জালসহ অর্থ বাণিজ্যের ভিত্তিতে সুবিধাবাদী নব্য আওয়ামী লীগদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। দলের দুঃসময়ে যারা রাজপথে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে প্রায়ই অভিযোগে বলা হয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বসে নেই বিদ্রোহীরা। দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৯ শতাধিক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয় রয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে দলের বিরুদ্ধে গিয়েই স্থানীয় প্রভাব ধরে রাখতে নির্বাচনে লড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর অনানুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমেছে প্রার্থীরা। নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থী ও সমর্থকরা নেমে পড়েছেন মাঠে, ছুটছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। কাক ডাকা ভোরে প্রার্থীরা বেরিয়ে পড়ছেন প্রচার প্রচারণায়। প্রচারনায় উন্নয়নের চেয়ে দলীয় পরিচয়কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রার্থীরা
জানা গেছে , ঝিকরগাছা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন। চৌগাছায় ১১ ইউপিতে ১৯ বিদ্রোহী সক্রিয় আছেন। শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৫৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয় ইউপিতে সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. আতিউর রহমানের বড় ভাই মো. ইসমাইল হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় ১৭টি ইউপিতে ১৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয় আছেন।
ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তণমূলের এ ধরণের দলীয় সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড। কোনোভাবেই নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি দেখতে চায় না দলটি। তাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আগেই সহিংসতা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সজাগ থাকতে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় নির্বাচন ইস্যুতে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মধ্যে সংঘাত এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। দলীয় প্রার্থী যাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় পেশীশক্তি অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়াতে বলা হয়। কেননা বিদ্রোহী প্রার্থী দলের নির্দেশ অমান্য করলেও তার অনুসারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী রয়েছে। কোনভাবেই যেন রেষারেষির জেরে দলের পরীক্ষিত কর্মী হারাতে না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। একাধিক উপজেলা পর্যায়েরর দায়িত্বশীল নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইসির তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৭ অক্টোবর।