আজাহার আলী সুমন

বাবা শফিক হোসেন তার শিশু সন্তান ঝুমুরী খাতুন(০৩)কে খুন করতে গভীর রাতে আলম মিয়ার পুকুরে নিক্ষেপ করেছিল তবে ঝুমুরী লাশ হয়নি, অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছে মধ্য পুকুরে থাকা বাঁশ-কঞ্চির মধ্যে আটকে গিয়ে ঝুলেছিল বলে। সকালে স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে ঝুমুরীকে উদ্ধার করে।

হুমায়ূন আহমেদ একটা বিখ্যাত কোটেশন দিয়েছেন “পৃথিবীতে কোনো খারাপ বাবা নেই”। তিনি লেখক মানুষ। লেখকরা নিজেরা বিশ্বাস করে না এমন কথাকেও সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলে কোটেশন হিসেবে বিখ্যাত করতে পারে।

পৃথিবীতে খারাপ বাবা আছে কি নাই সেটা পরের প্রশ্ন। তবে বাংলাদেশে অসংখ্য খারাপ বাবা আছে, খারাপ মাও আছে, খারাপ শিক্ষক আছে, খারাপ ধর্মগুরু আছে। প্রতিটা পরিচয়ের সবচেয়ে বড় পরিচয় মানুষ। এদেশের মানুষের একটা বড় অংশ ভালো মানুষ না, এদেশের মানুষ ভালো নেই; এটাই সত্য। আপনি যদি মানুষের ব্যাপারে ধ্রুব ধারণা নিয়ে বসে থাকেন, তবে আপনি এখনো যথেষ্ট পরিমাণে মানুষ দেখেননি।

ঝুমুরী সে রাতেও নিশ্চয়ই নির্ভাবনায় ঘুমাতে গিয়েছে।

গভীর রাতে বাবা যখন তাকে কোলে করে নিচ্ছিল মৃত্যু মঞ্চে যাত্রাপথে কী তার ঘুম ভেঙেছিল?
যদি ভাঙে তবে হুট করে গভীর রাতে ঘরের বাইরে নিজেকে আবিষ্কার করে সে কী ভয় পেয়েছিল? হয়তো পেয়েছিল কিংবা পায়নি। বাবার কোলে কোনো সন্তানের ভয় পাবার প্রশ্নই আসে না।

যাকে জন্মের পর থেকে দেখে আসছে যে বাবাকে যখন মেরে ফেলার জন্য পুকুরে নিক্ষেপ করেছিল তখন তার কোন অনুভূতি ছিল বেশি?
ভয়? ব্যথা? নাকি অবিশ্বাস?

ঝুমুরী রাতের এতোটা সময় বাঁশ-কঞ্চির মধ্যে আটকে থেকে বাবাকে নিয়ে কি কি ভেবেছিল।

আচ্ছা তাকে হত্যার পরিকল্পনা ঠিক কবে করা হয়?
দু ঘন্টা আগে? একদিন আগে? এক মাস আগে?

যে কয়েকটা দিন, কয়েকটা ঘন্টা কিংবা কয়েকটা মিনিট বাবাটা হত্যা পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে ঘুরেছে, একবারের জন্যেও কী তার মন বিদ্রোহ করেনি? একবারই কী তার কানে কানে কেউ বলে দেয়নি “এটা করো না। বাচ্চাটা তোমার।

মানুষের মধ্যে যদি শিক্ষার হার বাড়ে, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার যদি উন্নতি হয়, প্রযুক্তির ছোঁয়া যদি আসে হাতের মুঠোয়, তবে অপরাধ বাড়ছে কেন? কিসের অভাবে মানুষের মানবিকতা ও সহিঞ্চুতার অবক্ষয় হচ্ছে?

বাবা কেন ছেলের খুনী হচ্ছে, মা কেন সন্তানকে পানিতে ফেলে দিচ্ছে, স্বামী কেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে কোপাচ্ছে, মায়ের সহযোগীতায় বাবা কী করে মেয়েকে ধর্ষণ করছে… এই উত্তরগুলো জানা দরকার।

উত্তর যদি খুঁজে না পান, লাশ খুঁজে পাবেন অদ্ভূত সব জায়গায়, অনাকাঙ্ক্ষিত হাতে দেখবেন রক্ত।

যাহোক, এই ঘটনায় হত্যাচেষ্টায় মামলা রুজু হয়েছে বাবার বিরুদ্ধে। বাবাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রডিউস করা হয়েছে, তদন্ত শেষে সাক্ষ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দেয়া হবে সুবিচারের প্রত্যাশায়।

-লেখক- বাংলােদশ পুলিশের ওসি(তদন্ত) পদে কর্মরত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *