কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা॥
৮ বছর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত নিবন্ধিত শিক্ষকের নথি গায়েব করে অন্য একজনকে গোপনে নিয়োগ দিয়ে জাতীয়করণে অর্ন্তভূক্তি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। জালিয়াতির ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতা স্থগিতে আদালতে মামলা করেছে বঞ্চিত শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এ জালিয়াতি করেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সেনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
২০০৯ সালে স্থাপিত সেনপাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠদানের অনুমতি পায় ২০১১ সালে। প্রাথমিকের রংপুর বিভাগীয় দপ্তর প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম লিটন, সহকারী শিক্ষক রতœা রানী সেন, কনা রানী সেন ও ফাতেমা আকতার এ চার শিক্ষকের অনুকূলে বিদ্যালয়টি নিবন্ধিত ও পাঠদানের অনুমতি দেন। এরমধ্যে কনা রানী অন্য চাকুরীতে যোগদান করে। তার স্থলে ২০১২ সালে কুমোদ রঞ্জন নামের একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
২০১৩ সালে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ শুরু হলে ২য় ধাপে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। জাতীয়করণে নিবন্ধিত কাঠামোয় ফাতেমাসহ চার শিক্ষক থাকার পরও প্রধান শিক্ষক লিটন ফাতেমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে আপত্তি করলে রাতারাতি ফাতেমার পদে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আকলিমা নামের একজনকে নিয়োগ দেয়। প্রধান শিক্ষক ও ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোখছুদুর রহমান ২০১৪ সালে শিক্ষক জাতীয়করনের জন্য ফাতেমার স্থলে আকলিমার নাম পাঠায়। তৎকালীন টিও তৈফিকুর রহমান সরেজমিন তদন্ত করে আকলিমার জাতীয়করণ স্থগিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে পত্র দিলে এর আলোকে তিনি মহাপরিচালক বরাবর পত্র দেন। পরে নিয়োগ বাতিলের দাবীতে আদালতে মামলা করে ফাতেমা। এর মাঝেও আকলিমার নাম জাতীয়করন হলে তা স্থাগিত চেয়ে আবারও আবেদন করে ফাতেমা। এর প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকসহ আকলিমার বেতন ভাতা স্থগিত হয়।
সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মোসলেম উদ্দিন শাহ সরেজমিন তদন্তে গেলে শতাধিক এলাকাবাসী ফাতেমার পক্ষে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য দেন। কিন্তু টিও আপত্তিপত্রে উল্লেখ করেন ফাতেমা নামের কোন শিক্ষক ছিলেন না। অথচ তৎকালীন টিও-এটিও একাধিকবার তদন্তে ফাতেমার পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। ডিডি রংপুরের নথিপত্র, ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তাদের পরিদর্শণ বহিতেও প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে ফাতেমার নাম রয়েছে। আপত্তিপত্রের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন এটা আমি লিখিনি। উকিল (অ্যাডভোটে) লিখেছে। তাদের নাকি এভাবে লিখতে হয়। তাই লিখেছে। আমি স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ফাতেমা আকতার শুরু থেকে শ্রম দিয়ে আসছে স্কুলে। এখন অন্যজনকে নেয়া হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে টিও এসেছেন ওনাকে বলেছি ফাতেমাই শিক্ষক। উনি গিয়ে লিখেছেন আকলিমা শিক্ষক। উনি দিনকে রাত বানিয়েছেন। স্থানীয় অভয় চন্দ্র সেন, জয়ন্ত রানী, সোহেল মিয়া বলেন ফাতেমা শুরু থেকে একাই স্কুল চালিয়ে আসছেন। তাকে গোপনে বাদ দিয়ে আর একজনকে নেয়া হয়। এটা আমরা মানিনা। এমন হলে এখানে সন্তানদের দিবনা। বিদ্যালয়টির ৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থী মেঘলা, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রেশমি বলেন, শুরু থেকেই ফাতেমা ম্যাডাম পড়ান। দুই বছর থেকে আকলিমা ম্যাডাম আসে। ২০১২ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পাশ করা শিক্ষার্থী আখি, সুষমা রানী, কুমারী বন্যা রানী বলেন, ২০১১ সালে আমরা এ স্কুলে ক্লাশ ফোরে ভর্তি হই। ২০১ তে পাশ করি। তখনতো ফাতেমা ম্যাডান ছিল।
বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে হাজিরা খাতা নেই। হাজিরাখাতা আছে কিনা জানেনা সহকারীরা। সহকারী শিক্ষক রতœা রানী সেন, কুমোদ রঞ্জন বলেন, স্কুল এসে হেড স্যারকে ফোন দিয়ে বললে উনি বাড়িতে হাজিরা তোলেন। উনি অফিসের কাজে সবসময় বাইরে থাকেন বলে আমরা জানি। স্কুল ফিডিং এর বিস্কুট প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে থাকে। শিক্ষক হিসেবে ফাতেমা শুরু থেকে আছে এটা জানি।
এ বিষয়ে আকলিমা বলেন, স্কুলে আসি, আর না আসি। আমার কাগজ কলম ঠিক আছে। কাগজ কথা বলবে।
প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম লিটন বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি আমাকে নিয়োগ দিয়েছে তারাই ফাতেমা ও আকলিমাকে নিয়োগ দিয়েছে। কমিটির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মাইনুল হক প্রধান বলেন, ফাতেমা নিয়মিত স্কুলও করছে। সব কাগজপত্র প্রধান শিক্ষক করেন। তিনি ভালো জানেন কীভাবে কী হলো।
এদিকে একই পদে দুই শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল সত্যায়নে স্বাক্ষর করেছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোখছুদুর রহমান। তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক যেভাবে ফাইল দিয়েছে সই করেছি। কোনটি সঠিক প্রশ্নে ফাতেমার ফাইলটি সঠিক বলে জানান।
এ বিষয়ে তৎকালিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, উপ পরিচালক (অর্থ-রাজস্ব) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা নবী হোসেন তালুকদার ও আমার প্রেরিত তদন্ত রির্পোটে ফাতেমাকে অর্ন্তভূক্তির সুপারিশ ছিল। কিভাবে আকলিমা অন্তর্ভূক্ত হল তা আমার জানা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *