নজরুল মৃধা
দেখতে দেখতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ’র গুলিতে নিহত ফেলানী হত্যার ৮ বছর হয়ে গেল। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চৌধুরীহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর গুলিতে নিহত হয় কিশোরি ফেলানী। কুড়িগ্রাম সীমান্তে ঘটে যাওয়া এই হত্যা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও এখনো ন্যায় বিচার পায়নি নিহতের পরিবার। ন্যায় বিচারের আশায় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দুটি রিট পিটিশন দাখিল করে যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এর আগে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দু’দফায় বেকুসর খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ আদালত। দীর্ঘদিনের হত্যাকারি সাজা না হওয়ায় ফেলানীর পরিবারের সাথে দেশবাসিও হতাশ।
ফেলানীকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় দুদফা নির্দোষ বলে বিবেচিত হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষ। বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট (জিএসএফসি) প্রথমে অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেন। পুনর্বিবেচনার পরও তাঁরা সেই রায়ই বহাল রেখেছেন। ২০১৫ সালের ২ জুন বৃহস্পতিবার ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের সোনারি ক্যাম্পে আদালত বসে। গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা করে কোর্ট মার্শালের সমতুল্য বিএসএফের নিজস্ব আদালত রায় দিয়ে খালাস দেয় অভিযুক্তকে।
বিএসএফের পাঁচ সদস্যের নিজস্ব আদালতের প্রধান ছিলেন বিএসএফ আধিকারিক সি পি ত্রিবেদী। পাঁচজন সদস্য মূল মামলার শুনানিতে বিচারক ছিলেন। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জিএসএফসি ফেলানী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেন। সেই রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক। পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু করতে প্রায় এক বছর লেগেছিল। তিনবার পুনর্বিবেচনার কাজ স্থগিতও করা হয়।
কিশোরী ফেলানি হত্যার আড়াই বছর পর যখন প্রথম বিচার শুরু হয় তখন দেশবাসি ভেবেছিল হত্যাকারির যদি শাস্তি হয় তা হলে হয়তোবা সীমান্তে মানুষ হত্যা কিছুটা কমবে। কিন্তু তা হয়নি। যা হয়েছে তা হলো বিচারের নামে প্রহসন। বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সীমান্তরক্ষীকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে বাহিনীর নিজস্ব আদালত এবং সে সময় রায়ের পর পরই মুক্তি দেওয়া হয়েছে বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে। অমিয় ঘোষকে হত্যার দায় থেকে মুক্তি পেলেও ভারত সরকার কি এই দায় এড়াতে পারবেন এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মাঝে। অমিয় ঘোষকে মুক্তি দেয়ার নিঃসন্দেহে বলা যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা সীমান্তে মানুষ হত্যায় আরো উৎসাহিত হবে। বেপরোয়া ভাবে মানুষ খুন করবে। এদিকে ফেলানির পরিবার এই রায়কে প্রত্যাখান করেছে। তারা আর্ন্তজাতিক আদালতে এই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছেন। এই রায়কে ঘিরে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
রায়ের খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, বিএসএফের আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাননি। অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম প্রায় ১০ বছর ধরে দিলি¬তে ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গেই থাকতো ফেলানী। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে ফেরার পথে কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর। এতে ভয়ে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের আদালত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরোনো রায় বহাল রাখে। এ মামলায় দুই দফা কোচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। ন্যায় বিচারের জন্য আবারও ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেন তিনি।
বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচারের রায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মামলার আইন সহায়তাকারী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর দুটি রিট গ্রহণ করে একাধিকবার শুনানীর দিন পিছালেও চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী শুনানীর দিন ধার্য্য করেছে। আমরা আশা করতেই পারি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ফেলানী হত্যা মামলায় একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিবে যেটা উভয় রাষ্ট্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *