ভুরুঙ্গামারী প্রতিনিধিঃ
মেহেদী হাসানের বেড়ে উঠা খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে। বড় হয়েছেন অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে। পরিস্থিতি এমন ছিল পড়াশোনা আর ফুটবল চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে সব সময়। এমনও দিন গেছে অন্যের দেওয়া কিংবা ফেলে দেওয়া পুরনো জার্সি-প্যান্ট পরেও ফুটবল খেলেছেন! সেই পুরনো কথা মনে পড়লে মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়ে জাতীয় দলে প্রথমবার জায়গা করে নেওয়া মেহেদীর। তার পরেও লাল-সবুজ দলে সুযোগ পেয়ে আনন্দিত এই ডিফেন্ডার।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন মেহেদী। সেখানে সৈনিক পদে থেকেও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কমেনি বিন্দুমাত্র। একপর্যায়ে ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলার সুযোগ পান। এবার তো মুক্তিযোদ্ধায় প্রথম পর্ব খেলেই ইংলিশ কোচ জেমি ডের দৃষ্টি কেড়েছেন।
অথচ একসময় মনে হয়েছিল মেহেদীর ফুটবল খেলাই হয়তো আর হবে না। কুড়িগ্রামে ভূঙ্গামাড়িতে তাদের বাড়ি। বাবা দর্জির কাজ করতেন। পারিবারিক অবস্থা অনেকটা অস্বচ্ছল। যেখানে পরিবারের সব সদস্যের খাবার জোগান দিতেই বেগ পেতে হতো, সেখানে ফুটবল খেলাটা বিলাসিতাই। তার পরেও দমে যাননি মেহেদী। শুনিয়েছেন সেই দুঃখের দিনগুলোর কথা, ‘খেলতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমাদের পরিবার তো স্বচ্ছল নয়। একসময় মনে হচ্ছিল খেলাই সম্ভব নয়। আমাদের দিন এনে দিন খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। পড়াশোনা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কষ্ট করে এইচএসসি পাস করেছি। এমনও সময় গেছে অন্যের দেওয়া পুরনো কিংবা ফেলে দেওয়া জার্সি-প্যান্ট নিয়েও খেলেছি।’
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই ডিফেন্ডারের পরিবারের এখন অবশ্য আগের সেই আর্থিক কষ্ট নেই। নিজে চাকরি করছেন। পাশাপাশি খেলছেন ফুটবল। ফলে সাধ্যমতো সাহায্য করতে পারছেন পরিবারকে। ২০১৮ সালে আন্তঃবাহিনী খেলে কোচ জুয়েলের মাধ্যমে প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীতে অভিষেক। এরপর মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ ক্রীড়া চক্রেই আছেন।
সুস্থির হওয়াতে মেহেদী এখন চাইছেন জীবনটা মেহেদীর রঙে রাঙাতে, ‘এখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। জাতীয় দলে খেলতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এখন আরও কঠোর পরিশ্রম করবো। চেষ্টা করবো একাদশে জায়গা করে নিতে।’
তবে ঢাকা লিগে মাত্র দুই মৌসুম খেলতে না খেলতেই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে অবাক হয়েছেন মেহেদী, ‘অল্প সময়ে ঢাকা লিগ খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াতে অবাক হয়েছি। উত্তর বঙ্গ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে আমি ছাড়া কেউ ডাক পেয়েছেন বলে মনে হয় না। আমার এলাকাতে এ নিয়ে বেশ সাড়া পড়েছে। স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ হয়েছে। এখন মাঠে খেলতে পারলে পুরোটাই স্বার্থক হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
২৬ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের স্বপ্নপূরণের জন্য পাড়ি দিতে হবে আরও অনেক পথ। সেই চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন নতুন ডাক পাওয়া এই ফুটবলার।