ভুরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
ভুরুঙ্গামারীতে আবারও সাব-রেজিষ্টার -মহুরির যোগসাজসে জাল দলিল করে পরিবর্তর করা হচ্ছে জমির মালিকানা। এসব কর্মকান্ড জানতেও পারছে না জমির আসল মালিক। জমি দখলের পর ঘটনা প্রকাশ পেলেও তখন আর করার কিছুই থাকেনা। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ আর সংঘাত। মামলা মোকদ্দমায় দীর্ঘ প্রতিক্ষার দিন পার করতে হয় আদালতের দোড়গোরায়। সম্প্রতি সাব-রেজিষ্টার-মহুরীর এমন কর্মকান্ড বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হলেও জরুরী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতি নিয়তই ঘটছে এমন ঘটনা। সম্প্রতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মানিককাজী গ্রামে এমনই কায়দায় মৃত কোরবান আলীর পুত্র মোহাম্মদ আলীর জমির ভুয়া ওয়ারিশ দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দিন দুপুরে বাড়িঘর ভেঙ্গে দিয়ে জমি দখল করে নিয়েছে এলাকার মামুনুর রশীদ মামুন নামে এক প্রভাবশালী। জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে বিভিন্ন জনের বাড়িতে নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছে মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের লোকজন। জানাগেছে ঐ গ্রামের মৃত কোরবান আলী পাকিস্তান আমলে মৃত গুন্দু শেখের স্ত্রী নছিরন বেগমকে তার ৩ মাস বয়সী নছিমুদ্দিনকে সহ এলাকাবাসীর চাপে বিয়ে করে ৫/৬ মাস পর তাকে তালাক দেয়। কোরবান আলীর মৃত্যুর পর তার নামীয় ১২ বিঘা জমি তার ৪ কন্যা ও ১ পুত্র মোহাম্মদ আলী প্রাপ্ত হয়। ১৯৮৩ সালে কোরবান আলীর স্ত্রী ফেলানী বেগম তার মৃত স্বামীর অংশ থেকে প্রাপ্ত জমি তার কনিষ্ঠ কন্যা মিনারা বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ ও তার স্বজনরা বিয়ে রেজিস্ট্রি করার কথা বলে ৩২ শতক জমি লিখে নিলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেলানী বেগমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এদিকে ফেলানী হত্যায় উক্ত কোরবান আলীর ২য় স্ত্রী নছিরনের পুত্র নছিমুদ্দিন বাদী হয়ে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করে। মামলায় দীর্ঘ ৮ বছর জেলহাজতের পর জেল থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে না এসে তিনি ভারতের আজমীর শরীফে চলে যান। এদিকে উক্ত নছিমুদ্দিন মোহাম্মদ আলী জেলহাজতে থাকার সময়ে ২৩/১১/১৯৮৩ ইং তারিখে দাতা সাজিয়ে ৬০৩৮ নং দলিলে নছিমুদ্দিন ও মৃত সিরাজ আলীর পুত্র আব্দুস সামাদকে কোরবান আলীর পুত্র পরিচয় দিয়ে ১৮ শতক জমি এবং ১৭/৫/১৯৮৯ তারিখে আবারও দলিল করে ১০ শতক জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয় । এদিকে আজমীর শরীফ থেকে বাড়িতে ফিরে মোহাম্মদ আলী পৈত্রিক সম্পত্তির বেদখল থেকে উদ্ধার করতে কাগজপত্র উদ্ধার করে কয়েকদফা শালিসে তার জমি দখলে নিয়ে বসত বাড়ি নির্মাণ করে । এদিকে চতুর নছিমুদ্দিন গত ১২/১১/২০১৯ ইং তারিখে ভুরুঙ্গামারী সাব-রেজিষ্টার অফিসে মিজানুর রহমান মহুরীর মাধ্যমে প্রকৃত পিতা মৃত গুন্দু শেখের পুত্রের পরিবর্তে মৃত কোরবান আলী এবং মায়ের নাম নছিরনের পরিবর্তে মোহাম্মদ আলীর মা ফেলানীর পুত্র পরিচয় দিয়ে এবং মৃত সিরাজের পুত্র আব্দুস সামাদকেও মোহাম্মদ আলীর ভাই পরিচয় দিয়ে মৃত আলী আযমের পুত্র মামুনুর রশীদ মামুনের নিকট ৪৭৩২ নং দলিলে ৭০ শতক জমি বিক্রি করে। এদিকে মামুনুর রশীদ ঐ জমির দলিল করে গত ১ ডিসেম্বর দিনদুপুরে লাঠি,সোঠা,দা,কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে আকস্মিক চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করতে থাকে। মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী মোমিনা বেগম (৪৫) এবং পুত্র মাসুদ রানা তাদের বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে বেধড়ক মারপীট করে নগদ ২০ হাজার,৪৫হাজার টাকা মুল্যের স্বর্নালংকার,৪০ মন ধান সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ২ টিনের ঘরসহ ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এদিকে তাদের আর্তচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে। মোহাম্মদ আলী ঐ দিনই ভুরুঙ্গামারী থানায় অভিযোগ করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এদিকে জমি দখলকারী মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় মোহাম্মদ আলী সাধু গত ৪ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব প্রদান করে। এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ শওকত আলী জানান,মোহাম্মদ আলী কর্তৃক জেলা পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ পেয়েছি ,সরেজমিন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *