mail.google
ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি উপজেলার মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ থানা ভোলাহাট। এ উপজেলার গরীব আর অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য উচ্চতর শিক্ষাঙ্গণের অভাব ছিলো বরাবরই। সে অভাব পুরণ করতে এলাকার একমাত্র দানবীর মোহবুল¬াহ্ মাহলত তার কষ্টার্জিত ১.৭৮ একর(১৭৮শতক) জমি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ছেলেমেয়েদের উচ্চতর শিক্ষার্জনের স্বার্থে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য নি:স্বার্থভাবে তার একমাত্র সম্বল জমিটুকু দান করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৯৮৬ সালের ৩১ আগষ্ট এর আগে থেকেই যিনি কলেজটিকে মনে প্রাণে আত্ম-প্রত্যয়ে রেখে তার বাড়ীর পরিবারের একটি অংশ হিসেবে মনে করতেন তিনি আর এ ধরাধামে নেই। সে চঞ্চল মানুষটি চলে গেছেন চিরতরে অজানার দেশে। এ উপজেলার চির চেনা মুখ উপজেলার পিরানচক গ্রামের মৃত গোফুর মন্ডলের বড় ছেলে সাবেক প্রতিষ্ঠাাতা অধ্যক্ষ প্রয়াত মাহতাব উদ্দিন বেলু ভাই নামে পরিচিত।
দিন বদলের পালায় মোহবুল্লাহ্ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার(মাহতাব উদ্দিন বেলু) সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সার্বিক সহায়তা করেছিলেন যে সমস্ত জ্ঞানীগুণি জনেরা তাদের মধ্যে-সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ। সাবেক প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি থেকে উপজেলার সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে অতুলনীয় প্রয়াস রেখেছিলেন প্রয়াত মঈনুদ্দিন স্যার, মোহবুল্লাহ্ কলেজের সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ওরফে শুকুর মাষ্টার, সেই সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.কে.এম রফিকুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ডাঃ আব্দুল আজিজ লায়েক, সাবেক সভাপতি মরহুম নাসির উদ্দিন, বজরাটেকের জাসদ নেতা আজাহার আলী, বিশিষ্ট সমাজসেবক শিল্পপতি মোহাম্মাদ আলীর বন্ধুবর মৃত জুল্লুর রহমান শাহ্, ভোলাহাট সাঠিয়ার বাজারের বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম মাহাতাব উদ্দিন পান্না, তেলীপাড়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা আরজেত আলী, আলহাজ্ব হাসান উকিল, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোতাহার হোসেন, মুশরূীভূজার প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম ফরিজুদ্দিন মহাজন, বৃহত্তর বজরাটেক গ্রামের সুলতান হোসেন সান্টু সরদার, কাশিমপুরের মরহুম বাশির উদ্দিন মুন্সি, হোসেনভিটার মরহুম খোরসেদ আলী বিশ্বাস, মরহুম সোলেমান আলী বিশ্বাস, ঐতিহ্যবাহী গ্রাম খালেআলমপুরের মরহুম হাজী সলিমুদ্দিন, গোহালবাড়ীর নুরুল ইসলাম, মরহুম গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, চরধরমপুরের মরহুম সেকেন্দার আলী মুন্সি, পোল্লাডাঙ্গার আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম মুজিবুর রহমান মাষ্টার, সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম নজরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনএফ সভাপতি আলাউদ্দিন বিএ, মরহুম এরাজ উদ্দিন মেম্বার, আওয়মীলীগ নেতা আলহাজ্ব জাহির উদ্দিন মেম্বার, নিমগাছীর নজরুল ইসলাম মেম্বার, ফতেপুরের মরহুম মোজাম্মেল হক বুটু মিয়া, মরহুম মতিউর রহমান মাষ্টার, তাঁতীপাড়ার মরহুম ডাঃ বাশির উদ্দিন, ধরমপুরের আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক সরদার, বাহাদুরগঞ্জের সৈয়দ জিন্নাত হোসেন, তেলীপাড়ার বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রাব্বুল হোসেন, জামবাড়ীয়ার প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আবুল কালাম শামসুদ্দিন, মোজাম্মেল হক মাষ্টার, দলদলীর হাবিবুর রহমান, খালেআলমপুরের মরহুম দাউদ হোসেন মাষ্টার ও মরহুম রিয়াজ উদ্দিন মাষ্টার, বজরাটেকের মরহুম হেফাজুদ্দিন শাহ্(সরদার), বড়গাছীর মরহুম আব্দুল মাজেদ আলী মাষ্টার ও মরহুম ময়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, আলীসাহাসপুরের মরহুম তৈয়ব হোসেন বিএসসি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাত আলী, বজরাটেকের মরহুম গোফার সরদার প্রমূখ। এ উপজেলার বিশাল সনামধন্য ও জ্ঞানী গুণিজন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কলেজ সৃষ্টি লগ্নে ভোলাহাট উপজেলায় কোন মহাবিদ্যালয় নামে কোন প্রতিষ্ঠান ছিলো না। সে সময় মোহবুল্লাহ্ কলেজটির উন্নয়নে তাদের দানের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এবং সকল কাজে সহায়তা করে ঐ সময়ের ৩/৪’শ ছাত্র-ছাত্রী থেকে আজ ১২/১৩’শ ছাত্র-ছাত্রীতে উন্নীত হয়েছে। এলাকাবাসির ক্ষোভ সনামধন্য ও জ্ঞানী গুণিজনের চেষ্টা আর বহু প্রতিক্ষিত আশা-আকাংখা যেন হাজার মণ দুধের মধ্যে এক ফোটা ঘোল মিশানোর মতই। তারা বলেন, জাতীয়করণের জন্য যা যা দরকার তার সব কিছু থাকার পরও কলেজটি জাতীয়করণের নেপথ্যের কাহিনী কি এমন প্রশ্ন ঐলাকাবাসির। তারা আরো বলেন ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাদের বাড়ী থেকে পন্তা ভাত খেয়ে পায়ে হেঁটেই কলেজে লেখা-পড়া অব্যাহত রেখেছে এবং বহু আশা করেছিলো কোন না কোনদিন এ প্রয়াত মোহবুল্লাহ মাহলতের সর্বস্ব দেয়া জমির উপর একদিন হাজার ছেলেমেয়ে জাতীয়করণ করা হলে তার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। এ কলেজটিতে এলাকার খালেআলমপুর, বৃহত্তর বজরাটেক, দলদলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, ইমামনগর বাজার, ভোলাহাট সাঠিয়ার বাজার এমনকি সীমান্তবর্তী হোসেনভিটা ফুটানীবাজার এলাকা থেকেও ছাত্র-ছাত্রী আসে এ কলেজে পড়ালেখা করার জন্য। কলেজটির অবকাঠামোর দিক দিয়ে রয়েছে একটি নির্মানাধীণ ৪তলা ও ১াট তিনতলা ভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কমন রুমসহ শিক্ষকমন্ডলীর আলাদা রুম। রয়েছে পড়ালেখার মনোরম পরিবেশে বিজ্ঞান ভবন, লাইব্রেরী ভবন। এমনকি রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা আলাদা কম্পিউটার ও ল্যাবরেটরী।
ভোলাহাট মোহবুল্লাহ কলেজটি অবকাঠামো ও তার পারিপার্শ্বিক দিয়ে তার বেষ্ঠনী নি:সন্দেহে অতুলনীয়। মনোরম পরিবেশে রয়েছে ৩ তলা ভবন ১টি ও নির্মানাধীণ ৪ তলা ভবন ১টি। এলাকায় জনশ্র“তি উঠেছে ভোলাহাট মহিলা কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হলে সেখানে শুধুই মেয়েরাই পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে। কিন্তু মোহবুল্লাহ কলেজে রয়েছে প্রায় ১২’শ থেকে ১৩’শ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শতকরা ৬০% ছেলেরা আর বাকী ৪০% রয়েছে মেয়েরা। এতে করে মেয়েরাই সরকারী সুযোগ-সুবিধে ভোগ করবে আর ছেলেরা থাকবে শুন্যের কোটায়। কলেজটিকে জাতীয়করণের লক্ষ্যে স্থানীয় এমপি দ্রুতগতিতে একটি ৪তলা ভবনের তৈরীর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এমনকি বর্তমান সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী যে ৭টি পয়েন্টের উপর জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে সে গুণাবলীগুলি পুঙ্খাণুপুক্ষ রূপে এ কলেজটি জাতীয়করণে দাবীদার।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীণ বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৫ সালে এ কলেজ মাঠে তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমার দল কোনদিন ক্ষমতায় গেলে এ কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হবে অঙ্গিকার করেন। বর্তমানে তার দল ক্ষমতায় আমাদের আশা মোহবুল্লাহ নামের কলেজটিকে জাতীয়করণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন বলে এলাকাবাসীর জোর দাবী জানিয়েছেন।
গত ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ইং তারিখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন এ উপজেলায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী না থাকায় নিজে আশ্চর্যবোধ করেন এবং অচিরেই বর্তমান সরকারের উদ্দ্যোগে এ উপজেলায় একটি মাধ্যমিক ও একটি কলেজ সরকারীকরণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং কলেজটিকে জাতীয়করণে ডি,ওলেটার দেন।

এ ব্যাপারে মোহবুল্লাহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় ১টি মাধ্যমিক ও ১টি কলেজ জাতীয়করণের উদ্দ্যোগ নেয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে আমার কলেজ মোহবুল্লাহ মহাবিদ্যালয়টি সার্বিক দিক দিয়ে পরিপুর্ণ। ১৯৮৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর এমপিও ভূক্ত হয়েছি। সেই সাথে কলেজটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে এবং আমার শিক্ষকমন্ডলীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কয়েকবার জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। সেই সাথে এখন পর্যন্ত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার মান খুবই ভালো। তাই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী সত্যিকার অর্থে যাচাই-বাছাই করে এ উপজেলায় কোন কলেজটি জাতীয়করণ করা প্রয়োজন এবং সরকারীকরণ ন্যায় সঙ্গতভাবেই আমরাই প্রথম দাবীদার বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখিত কারণে ভোলাহাট মোহবুল্লাহ মহাবিদ্যালয়টি জাতীয়করণের দাবিতে ২৬ জুলাই ২০১৬ ইং তারিখে মঙ্গলবার বেলা ১১টর দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সন্ন্যাসীতলা মোড়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে তারা।
তাই উল্লেখিত দানবীর নামে খ্যাত ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে প্রায় মনিষি প্রয়াত। তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভক্তি রেখে উপজেলার পাঁ-ফাটা মানুষের প্রাণের দাবীর প্রতি সুদৃষ্টি রেখে, সেই সাথে সাথে এলাকার সচেতনমহল ও জ্ঞানী-গুণীজনেরা মোহবুল্লাহ মহাবিদ্যালয়টিকে অচিরেই সরকারী ভাবে জাতীয়করণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকটে জোর দাবী জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *