তাজিদুল ইসলাম লাল, রংপুর

রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) এর ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্ধিত ১৮টি এলাকার উন্নয়নসহ গরীব ও অসহায় মানুষের উপকারের বদলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন ভিজিডি, ভিজিএফসহ নানানভাবে সুযোগ সুবিধা দিতো সরকার। বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা হলেও ভোটে আগ্রহ নেই সুবিধা বঞ্ছিত ওই অসহায়দের। এছাড়াও ড্রেন, কালভার্ট ও সড়কগুলো তেমন কোন উন্নয়ন নজরে পড়ে না।

জানা গেছে, সাবেক রংপুর পৌরসভা ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ছিল। ২০১২ সালের ২৮ জুন স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) বিল, ২০০৯-এর মাধ্যমে রংপুর পৌরসভাকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করে। পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডসহ রংপুর সদরের ৭টি ইউনিয়ন এবং আশপাশের ৫টি ইউনিয়নের আংশিক এলাকার মোট ১শ ১২টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্তি করে রসিক এর আয়তন হয় ২০৫.৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। যা বর্তমানে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে বেশি ভাগ ওয়ার্ড এখনও অজোপাড়া গাঁ। তাই ওই এলাকাগুলোর মানুষের এখনও প্রধান আয় কৃষি। এর পাশাপাশি তারা জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। সিটি কর্পোরেশন হওয়ার আগে ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন সরকারিভাবে তারা ভালো সুযোগ সুবিধা পেয়েছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনও সংসদ নির্বাচন এলে রংপুর সিটিতে সংযুক্ত বর্ধিত ৭টি ইউনিয়নের ভোটাররা গঙ্গাচড়া ১ আসনে এমপি নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন। কিন্তু এমপির বরাদ্দের কোন উন্নয়ন হয় না ওই এলাকাগুলোতে।

গঙ্গাচড়ার আংশিক ও সিটির বর্ধিত ভোটাররে সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে তারা ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেন। ভোট নেয়ার জন্য প্রার্থীরা নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদে চলে যায়। আর এমপিদের দেখা মিলে না এই এলাকাগুলোতে। এভাবেই এমপির উন্নয়নের বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। সাবেক রংপুর সদর ও বর্তমানে রংপুর সিটির ২নং ওয়ার্ড এলাকার কেল্লাবন্দ কাচারী এলাকার মোখলেছার রহমান, হামিদুল, লেবু মিয়া, বাবু জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থাকা অবস্থায় আমরা অনেক ভালো ছিলাম। সে সময়ে ভিজিডি, ভিজিএফ, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বভাতা, হত দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি ছাড়াও রেশন কার্ডের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দ দেয়া হতো। একই ধরনের কথা বলেন রসিকে ৬নং ওয়ার্ডের বাহাদুরসিংহ গ্রামের রমজান আলী, হান্নান মিয়া, ফিরোজ মুকুল, ৫নং ওয়ার্ডের বিনোদ চন্দ্র রায়, আদর শফিকুলসহ আরও অনেকে। রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের মতিয়ার রহমান মেম্বার উপরোক্ত বরাদ্দের বিষয়গুলো নিশ্চিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার ওয়ার্ডের প্রায় ২ হাজার ৬শ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণের ভোটারকে সরকারী বরাদ্দ দেয়া হয়।

সাবেক পরশুরাম ইউপির ৩টি ওয়ার্ড মিলে বর্তমানে রসিকের ৬নং ওয়ার্ড। এবারের সিটি নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। দেশ রূপান্তরের সাথে কথা হয় সাবেক কাউন্সিলর ও বর্তমানে কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারুল ইসলাম লেবুর সাথে। তিনি জানান, গত ৫ বছরে আমার ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ হিসেবে ৬০ এর উর্দ্ধে মহিলা এবং ৬২ এর উর্দ্ধে পুরুষ মানুষদের বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু পরিমাণ প্রতিবন্ধীকে সুবিধা দেয়া ছাড়া আর কোন বরাদ্দ নেই। তিনি আরও বলেন, আমার ওয়ার্ডের কিছু ড্রেন ও সড়ক পাকাকরণ কাজ হয়েছে। একইভাবে সিটি এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন হয়েছে। তবে সাধারন অসহায় ও গরীব মানুষরা নানাভাবে বঞ্ছিত হয়েছে।

এফএফ কমান্ডার্স ফোরাম- ১৯৭১ (গেরিলা কমান্ডার) বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, আমি রসিক এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের খটখটিয়া এলাকায় বসবাস করি। ৮ বছর আগে ঝন্টু মেয়র থাকাকালীন সময়ে কিছু সড়ক পাকাকরণ ও ড্রেন নির্মান করেছিল। বর্তমানে সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। আর ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে মশা উৎপাদনের কারখানা হয়েছে। এবিষয়ে কয়েক দফা অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি।

ইসির তথ্যনুযায়ী, রসিক নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা রয়েছে ২৭০ জন। এক্ষেত্রে মেয়র পদে নয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১শ ৯২ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভোটের মাঠে। নির্বাচনে দুই লাখ ১২ হাজার ৩শ ০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১শ ৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *