ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় গ্রামপুলিশ পুত্রের অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনে প্রাণ গেলো কৃষকের। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নস্থিত হাটি করাইয়া গ্রামে। নিহত কৃষকের নাম ফয়েজ মিয়া ওরফে ফজলু মিয়া (৬৯)। তিনি হাটি করাইয়া গ্রামের মৃত: ছৈদ উল্লাহর পুত্র।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে- গত ৩১ জুলাই সোমবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে কৃষক ফয়েজ মিয়া উড়াল জাল নিয়ে বাড়ী থেকে আনুমানিক ১শ মিটার দূরবর্তী দলদলা ছড়ায় মাছ শিকারে যান। দলদলা ছড়া ব্রীজের আনুমানিক ৪/৫ মিটার দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে উড়ালজাল ছড়ায় নিক্ষেপ করলে, তা ছড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি অবৈধ বিদ্যুৎলাইনের উপর পড়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয় দু’টি শিশুর শোরচিৎকার শুনে এলাকার আব্দুর রুপ এগিয়ে এসে উড়ালজালের অংশবিশেষ দেখতে পান। আব্দুর রুপ উড়ালজালটি টেনে তোলার চেষ্টা করলে মানুষের হাত দৃষ্টিগোচর হয়। এসময় আব্দুর রুপের ডাকাডাকিতে দুলাল মিয়া, মতিন মিয়া ও স্থানীয় গ্রামপুলিশ নাজির মিয়া ঘটনাস্থলে আসলে ৪ জনে মিলে ফয়েজ মিয়ার লাশ উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়াসহ এলাকার লোকজন ফয়েজ মিয়ার বাড়ীতে ছুটে আসেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফয়েজ মিয়া নিহত হবার বিষয়টি ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়া ঘটনাস্থল থেকেই কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিমকে জানালে, তিনি বিষয়টি রাজনগর থানাকে জানান। এর প্রেক্ষিতে রাজনগর থানার এসআই উত্তম কুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ফয়েজ মিয়ার বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। পরদিন ১ আগষ্ট মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহতের ডান কনুই এর উপর থেকে ডানহাতের তালু পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্টের জখম ছিল- যা স্থানীয় আলতা মিয়া উপস্থিত পুলিশসহ সবাইকে দেখান। এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী ফয়জুন বেগমকে বাদী করে রাজনগর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করানো হয়েছে। অথচ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজিব হোসেন বলেন, অসাবধানতা বশত: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যুু হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে কোন জখমের দাগ নেই। যে বিদ্যুৎলাইনে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন সেটার বৈধতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় আনজব মিয়া ও জমির আলীসহ স্থানীয় লোকজন সূত্রে প্রকাশ- গ্রামপুলিশ নাজির মিয়ার পুত্র সুহেল মিয়া এলাকার কৃষকদের হালের ট্রাক্টর পাহাড়া দেয়ার প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর জন্য অবৈধভাবে পল্লীবিদ্যুতের ড্রপলাইনে সরাসরি বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ লাগিয়ে ওই স্থান দিয়ে (ফয়েজ মিয়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবার ঘটনাস্থল) বিদ্যুৎলাইন দলদলা ছড়া অতিক্রম করিয়ে অপর পাড়ে স্থাপন করেছিল- যার উচ্চতা ছিল পানি থেকে আনুমানিক ২/৩ হাত এবং তা সহজ দৃশ্যমান ছিলনা। বিষয়টি ফয়েজ মিয়ার অজানা থাকায় তিনি সেখানে অবস্থান নিয়ে ছড়ায় উড়ালজাল নিক্ষেপ করলে তা ওই বিদ্যুৎলাইনের উপর পড়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হন। এ খবর জানতে পেরে সুহেল মিয়া কৌশলে ওই অবৈধ বিদ্যুৎলাইন সরিয়ে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্ত সুহেল মিয়া পলাতক রয়েছে এবং স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন বিষয়টি সামাজিকভাবে আপোষ-মিমাংসার উদ্দোগ নিয়েছেন বলে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়া জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *