রাজিবপুর, (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের রৌমারী খাদ্যগুদামে চলতি মৌসুমে বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ১ হাজার ১৯১ মেট্রিক টণ। লক্ষমাত্র পূরণে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও প্রায় ৫’শ মেট্রিক টণ ধান কৃষকের নিকট থেকে ক্রয় করা হয়। বাকী ২১০ মেট্রিক টণ ধান কাগজে-কলমে কৃষকদের নিকট থেকে ক্রয় দেখিয়ে, ওই ধান ৬টি পরিত্যাক্ত চালকল মিলারদের ছাটাইয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় এবং মিলারদের নামে বিল প্রদান করা হয়েছে। মিলারদের সাথে যোগ-সাজোসে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। এমনই অভিযোগ উঠেছে রৌমারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে।

কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানাগেছে, রৌমারী ছয়টি চালকলে ২১০ মেট্রিক টণ ধান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই। বরাদ্দের তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে মিলারদের ১৩৬ মেট্রিক টন ৫’শ কেজি চাল সরবরাহ করার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৩৬ মেট্রিক টন ৫’শ কেজি।
২৯ ও ৩০ জুলাই সরেজমিনে দেখাগেছে, রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নে মিলার লিয়াকত আলীর মায়া রাইস মিল ও রাসেল চাল কল বন্ধ রয়েছে প্রায় এক বছর যাবৎ।

পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে বয়লার, হাউজ, চাতাল ও গুদামঘর। খাদ্যগুদাম থেকে দেয়া হয়নি কোন ধান। মিলে গিয়েও দেখা মেলেনি ধানের অস্তিত্ব। এ বিষয়ে মিলার লিয়াকত আলী প্রতিবেদককে জানান, ৩০ মেট্রিক টণ ৫’শ কেজি ধান বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি।

এছাড়াও রৌমারী বন্দবেড় ইউনিয়নে আবুল কাশেম নামের এক মিলারের রয়েছে মালিহা, মাসুদ ও আরিফ নামে তিনটি চালকল। এরমধ্যে মালিহা চালকল চালু থাকলেও মাসুদ ও আরিফ চালকল পরিত্যাক্ত রয়েছে। কিন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিনটিতেই। সরকারী খাদ্যগুদাম থেকে দেয়া হয়নি ধান। অন্যান্য চালকল ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। অকেজো ও পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে বছরের পর বছর। কিন্তু পরিদর্শন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ দিয়ে বিলও পাশ করেছেন। ফলে মিলাররা বাজার থেকে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে সরবরাহ করছে সরকারী খাদ্যগুদামে। অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খাদ্যগুদাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মিলাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চালকল মিলার জানান, “যে মিল গুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো চালু নাই। অবকাঠামো ঠিক নাই। কয়েকটাতে বিদ্যুৎ সংযোগও নাই। সরকারী গুদামের লোকজন টণ প্রতি ২ হাজার করে টাকা নিয়া গুদাম থেকে কোন ধান না দিয়া কাগজে-কলমে ধান বরাদ্দ দেখিয়ে মিলারদের নামে বিল প্রদান করছে। আর যে যার মত ভাঙ্গা, পঁচা চাল সরকারী খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছে। এসব কিছু উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তারা মিলেই করে।”

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) গোলাম মোর্শেদ জানান, “ভাই অফিসে আসেন সাক্ষাতে কথা বলবো।” এ বিষয়ে রৌমারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক জগদিস চন্দ্র সরকার জানান, “আমার জেলা কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসেছেন। আমি এখন ব্যস্ত আছি। আগামী রবিবার রাজিবপুর গিয়ে আপনার সাথে কথা বলবো।”

কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রাজিবপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে আসলে রৌমারী খাদ্যগুদামের অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি প্রতিবেদককে কোন সদোত্তর না দিয়ে রৌমারী চলে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *