লালমনিরহাট প্রতিনিধি॥
লালমনিরহাটের এমপিও ভুক্ত কলেজের শিক্ষকরা কর্মস্থল ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে অন্য পেশায়। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যšত কলেজে থাকার সরকারী নির্দেশকে তোয়াক্কা করছে না শিক্ষকরা। শিক্ষকরা অন্য পেশায় ব্যস্ত থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে কলেজ গুলোতে। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে পাঠদানে।জানাগেছে,কলেজ শিক্ষকরা সরকার প্রদেয় সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও সরকারী নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব ফাঁকি দেয়ায় লালমনিরহাটের বেসরকারী কলেজগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। আর এ কারনে কলেজ’র শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এমনকি অধ্যক্ষদের মাঝে দেখা দিয়েছে কঠোর সমালোচনা। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী কলেজ শিক্ষকদের প্রত্যেককে কর্মস্থলে সকাল দশটায় উপস্থিত হয়ে বিকাল চারটা পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে কিন্ত সরকারী এ নীতি তোয়াক্কা না করে তারা অন্য পেশায় ব্যস্ত রয়েছে। এসব অভিযোগ বেশ কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষকদের প্রায়ই সকলেই এক থেকে দুই ঘন্টাকাল তাদের কর্মস্থল কলেজে অবস্থান করে বাইরে বেড়িয়ে আসেন। অনেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কলেজ থেকে বেড়িয়ে পড়েন ব্যক্তিগত নানা কাজে আবার অনেক শিক্ষক সপ্তাহ জুড়ে একদিন অথবা দুইদিন উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে চলে আসেন। কলেজ শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে রাজনীতি ও অন্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় কলেজের অধ্যক্ষরা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সাহস পান না বলে জানা যায়। সরকারী নিয়মের কর্মঘন্টা ফাঁকি দিয়ে কলেজ শিক্ষকরা কোচিং ও প্রাইভেট এবং সাংবাদিকতাসহ একাধিক কর্ম ও ব্যবসা বানিজ্য’র সাথে সম্পৃক্ত থাকায় কলেজগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ দিনদিন বিনষ্ট হচ্ছে আর তাই কলেজগুলোর ফলাফল হ্রাস পাচ্ছে মারাত্মকভাবে। সেই সাথে মেধাশুন্য হয়ে পড়ছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা মহাবিদ্যালয়,চাপারহাট এসকে কলেজ এর অনেক শিক্ষক অন্য পেশায় ব্যস্ত। সরকারী নীতি তোয়াক্কা করছে না এসব শিক্ষকরা। কলেজ চলাকালে ক্লাস ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন শিক্ষকরা। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলে, তারা প্রতিদিন কলেজে আসলেও পাচ্ছে না নিয়মিত ক্লাশ। ঘন্টার পর ঘন্টা কলেজের ক্লাশরুমে এবং কলেজ ক্যাম্পাসে হৈচৈ করে সময় কাটিয়ে তাদের ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে। “আমাদের কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকই এক থেকে দেড় ঘন্টা পর্যন্ত কলেজে দেখতে পাওয়া যায়, আবার কেউ কেউ কলেজে আসেন না, এমন অভিযোগ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের। কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট এসকে কলেজের শিক্ষার্থীরা বলে, তারা এ পর্যন্ত অনেক শিক্ষককেই চিনেনা। “অনেক শিক্ষক মাসের পর মাস কলেজে অনুপস্থিত কিন্তু অধ্যক্ষ কোন ব্যবস্থা নেন না, জানিনা কেন এমনটি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলে যেহেতু কলেজে তেমন ক্লাশ হয়না তাই বাধ্য হয়েই তারা কোচিং করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। ”শিক্ষকরা যদি তাদের দায়িত্বের প্রতি সদয় থাকেন, আমাদের নিয়মিত পাঠদান করেন তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবো আর আমাদের মেধা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য আমাদের কলেজের শিক্ষকরা মারাত্মকভাবে উদাসীন, তারা কলেজে আসেন না আর আসলেও কলেজে অবস্থান করেন না, এসব জানালো আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি কলেজের শিক্ষার্থীরা। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাহেদুল ইসলাম জানালেন, কলেজ শিক্ষকতা বাংলাদেশে একমাত্র চাকুরী যে চাকুরীতে কোন জবাবদিহীতা নেই। কলেজ শিক্ষকরা কয়ঘন্টা কর্ম করে, কখন কলেজ আসে আর কখন চলে যায় কেউ জানে না। কলেজ চলাকালীন সময়ে শিক্ষকদের বাইরে দেখা যায় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে, এমনটি বলে তিনি বলেন কলেজে তাদের সন্তানদের পড়াশুনা নিয়ে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। সদর উপজেলার তিস্তা কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুরন্নবী ইসলাম জানালেন, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও সরকারী কলেজের শিক্ষকদের একটি কর্মঘন্টার ফ্রেম আছে কিন্তু বেসরকারী কলেজ শিক্ষকরা লাগামহীন কারন তাদের কোন কর্মঘন্টা দেখা যায় না।একই অভিযোগ পাওয়া গেছে, চাপারহাট করিমউদ্দিন-শামসুদ্দিন কলেজের। বেসরকারী কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের টিচিং না দিয়ে বাইরে আড্ডা দেয়, চাকুরী করে অন্যত্রে এমনকি রাজনীতির কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে সদা আর এতে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে বলে তিনি দাবী করেন। আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম জানালেন, শিক্ষকরা সরকারী বিধি অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত না থাকায় তাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্মে মারাত্মকভাবে ঝামেলা পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। আমার কলেজের শিক্ষকরা কোনভাবেই সরকারী বিধি মানছেন না, আর তাদেরকে এ সম্পর্কে বললেও শুনছেন না এমনটি জানালেন ওই অধ্যক্ষ। “কলেজ শিক্ষকরা যেহেতু সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন কাজেই তাদেরকে সরকারী বিধি অনুযায়ী সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে আর এটি হলে ফিরে আসবে শিক্ষার পরিবেশ, উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা বললেন অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম। একই উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সুধান রায় জানালেন, শিক্ষকরা সরকারী কর্মঘন্টা অনুযায়ী কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। “অনেক শিক্ষক এক ঘন্টা, কেউ দেড়ঘন্টা আবার কেউ দু ঘন্টা কাজ করে চলে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *