তাজিদুল ইসলাম লাল, রংপুর
 
সরকারি নির্দেশনা মানছেন না রংপুরের কলেজ কর্তৃপক্ষগুলো। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের সাথে সাথে পূণঃভর্তি ফিসহ বকেয়া বেতন পরিশোধে খুবই চাপ দেয়া হচ্ছে অভিভাবকদের। একারণে বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য ফি পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত অভিভাবক মহল। শিক্ষা অফিস বলছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধুমাত্র টিউশন ফি নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নমনীয় পর্যায়ে আসতে থাকায় পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের এমন ঘোষণায় খুশি শিক্ষার্থীরা। এতে ব্যস্ততা বেড়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অপরদিকে, পুণঃভর্তি ফি নেয়ার ঘটনায় রংপুর বর্ডার গার্ড স্কুল কলেজ এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক অভিভাবক। এই অভিযোগ দেয়ার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে মানষিক চাপ ও হয়রানির করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষিা অফিস সুত্র জানায়, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০৫. ১৮.০০১.১৮/১৩০৯ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি (এমপিওভুক্ত ও এমপিও বিহীন) কলেজসমূহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে কিন্তু পুণঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফিরত দিবে। একইভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ তোফাজ্জল রহমান স্যার গত ৩১/০৭/২১ইং স্বাক্ষরিত মাউশিবোদি/ পনি/পরীঃ/এইএসসি /০২১/৩৫৮০ (১০০০) স্মারকের ক্রমিক নম্বর ১৫ এর ডাবল স্টারের ২ নম্বর স্টারে বলা হয়েছে ‘কোন অবস্থাতেই নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য দৃষ্টিগোচর হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরন প্যানেল বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‌‌‌‌‌‌‌আরও উল্লেখ করা হয়, কলেজগুলো একাদশ-দ্বাদশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে, কিন্তু পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না। যদি করা হয় তা ফেরত দেবে অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। তবে যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন।
লিখিত অভিযোগে ওই অভিভাবক উল্লেখ করেন, তার ছেলে শাহরিয়ার হিমেল বর্ডার গার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সব অভিভাবককে পুনঃভর্তি ফি, বকেয়া বেতনসহ অন্যসব ফি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনা ও অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেক অভিভাবক বকেয়া বেতন, পুণঃভর্তিসহ কলেজের সকল পাওনাদি পরিশোধ করেছেন। যা শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সমতুল্য।
জানা গেছে, সরকারি এই নির্দেশনা অমান্য করে বেশির ভাগ কলেজ থেকে টিউশন ফি ছাড়াও অন্যান্য ফি দ্রুত পরিশোধের জন্য শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে। অনেক অভিভাবক বকেয়া বেতনসহ অন্য ফি মওকুফের জন্য আবেদনও করছেন। বেতন মৌকুফের কোন দাবিই আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ আবার অধিদফতরের নির্দেশনা না মেনে টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি নেওয়ার বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। তবে ঝামেলা এবং হয়রানি এড়ানোর ভয়ে এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে নারাজ বেশির ভাগ অভিভাবক। পুনঃভর্তিসহ বিভিন্ন ফি ও বকেয়া বেতন শুধু কলেজে নয়, স্কুলগুলো থেকেও চাওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, তার মেয়েকেও বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এজন্য প্রায় ৩৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ ও ব্যবসা বাণিজ্য সবগুলো বন্ধ ছিল। তার পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব নয়। তার মতো হাজারো অভিভাবক সন্তানদের বকেয়া বেতন ও সরকারি নির্দেশনার বাইরে পুণঃভর্তিফি নিয়ে চিন্তিত। বিষয়টি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা জানান, কেউ যদি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে, তা অবশ্যই অন্যায়। এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের তদন্তকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.আর ফারুক জানান, টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি আদায়ের তেমন জোরালো কোনো অভিযোগ নেই। এক অভিভাবকের করা অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে শুধুমাত্র টিউশন ফি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি নিলে সেটা বেআইনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, বর্ডার গার্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুরকুতুবুল আলম সাংবাদিকদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি গভর্ণিংবডিকে জবাব দিবো। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে মানষিক চাপ ও নাজেহালের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষক, আমি যেকোন শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার বিষয়ে কিছু বলতেই পারি।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *