m
চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীরবন্দরে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প আজ বিলুপ্তের পথে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সুতা ও কাঁচা মাল, পুঁজির অভাব এবং চোরা পথে আসা ভারতীয় নি¤œ মানের (রঙ্গ-চঙ্গা) কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে একের পর এক তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকজন যারা এ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে তাদের বাপ দাদার পুরনো পেশা হিসাবে আর কত দিন লোকসান গুনবে এই দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে তারা।

স্বাধীনতার পূর্বে চিরিরবন্দর উপজলার বৃহত্তর রাণীরবন্দর, সাতনালা, ভূষিরবন্দর, গছাহার, আলোডিহি, বিন্যাকুড়ি, খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি, চন্ডিপাড়া কাচিনীয়া সহ অর্ধশত গ্রামের ২’ হাজারের বেশী পরিবার তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল ছিল। এখানে প্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১০ হাজার শ্রমিকের কর্মরত ছিল। তাঁতের টুকটাক শব্দে ঘুম ভাঙ্গত। তাঁত শ্রমিকের কলরবে রাণীরবন্দর থাকত সব সময় শরগম। এখানকার তৈরী গামছা, তোয়ালা, শাড়ী সহ বিভিন্ন পণ্যের গুনগত মানের দেশ জুড়ে বেশ কদর ছিল। এখানকার তাঁত শিল্পের কাঁচামাল সুতা সরবরাহে সদরপুর (রামডুবি) দশ মাইলে প্রতিষ্ঠিত হয় দিনাজপুর ট্রেক্সটাইল মিল। তাঁত শিল্পকে ঘিরে ১৯৬৪ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাণীরবন্দর কোঃ অপাঃ ইন্ডাষ্ট্রিজ ইউনিয়ন লিঃ (হ্যান্ডলুম বোর্ড)।

গ্রামীণ জনপদের উৎপাদনশীল এ জাতীয় শিল্পকে ধরে রাখতে স্থাপিত হয় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টার। হ্যান্ডলুম বোর্ড ও তাঁত বোর্ড (বেসিক সেন্টার) কোনটাই রাণীরবন্দরের তাঁত শিল্পকে টিকে রাখতে পারেনি। কথা হয় বেশ কয়েক জন তাঁতীর সাথে, তার আজও আঁকড়ে ধরে আছে বাপ দাদার পেশা। তারা জানান, হ্যান্ডলুম বোর্ড বিলুপ্ত হলেও কিছু নামধারী তাঁতী হ্যান্ডলুম বোর্ডের বিশাল জায়গা লীজ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটেও করছে। দেশ স্বাধীনের পর প্রায় ৩৫বার সুতার মূল্য বৃদ্ধি। ফলে আমরা যারা প্রকৃত তাঁতী ঋণ পাচ্ছি না। ফলে পুঁজির কাঁচামাল ও মূলধনের যোগান তথা সরকারী পৃষ্ঠ পোষকতার অভাবে এবং ভারতীয় নি¤œমানের রঙ্গ-চঙ্গা কাপড়ের সাথে টিকতে না পেরে রাণীরবন্দরের তাঁতীরা পেশা বদল করে চলছে।

এ বিষয়ে রাণীরবন্দর তাঁত বোর্ড (বেসিক সেন্টার) এর লিয়াঁজো অফিসার মঞ্জুরুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৯৯ ইং সালে ২১৯ জন তাতীঁকে ২৬ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এর লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩০ লক্ষ ৫৭ হাজার ১৮৪ টাকা কিন্তু অর্জন হয়েছে ১৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। অনাদায়ী রয়েছে ১৬ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। ২১৯ জনের মধ্যে মাত্র ৪৬ জন ঋণ পরিশোধ করে।

রাণীপুর গ্রামের তাঁতী মো: জহুরুল হকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ১৯৮৮ ইং সাল থেকে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত। রাণীরবন্দরে তাঁতী নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকজন আমরা এ পেশা আঁকরে ধরে আছি। আমি ২১টি চিত্তরঞ্জন তার ব্যবহার করছি। এর মধ্যে ১২টি চালু রয়েছে। এতে ২৫ থেকে ২৬জন মহিলা কর্মরত। এখানে আগের মতো গামছা, তোয়ালা, শাড়ী তৈরী করিনা। এ থেকে টেবিল ক্লোথ, ডাউনিং টেবিল ম্যাট, পকেট রুমাল, ওড়না, গ্রামীণ চেক পাঞ্জাবী, বেড কভার, সেলুনা কাপড় এবং পাট দিয়ে ডাউনিং ম্যাট, ফেব্রিকস ব্যাগ ইত্যাদি তৈরী করছি। আমার উৎপাদিত এসব পন্য বিভিন্ন জেলায় সরবারাহ করে থাকি। তিনি জানান, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সুতা ও কাঁচা মাল, পুঁজির ব্যবস্থা এবং চোরা পথে ভারতীয় নি¤œ মানের কাপড়র আসা বন্ধ করলে রাণীরবন্দরের তাঁত শিল্প পূণরুদ্ধারসহ তাঁতীদের বক্ষা করা সম্ভব।

এলাকার সচেতন মহল জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁত শিল্পীদের পর্যাপ্ত মূলধনের জোগান, সুষ্ঠুভাবে বাজারজাত করণের সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করে তা হলে এ এলাকার তাঁত শিল্প পূণরুদ্ধারসহ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *