মোঃ আবু হাসান,, বিভাগীয় প্রতিনিধি,,খুলনা,
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে যাত্রীবাহি ট্রলার ডুবির ঘটনায় সময় বাড়ার সাথে সাথে নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ১৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে মা ও ছেলের লাশও মিলেছে। সকাল থেকে ভেসে ওঠে একের পর এক লাশ। পানগুছি নদীতে যেন চলছে লাশের মিছিল। বাংলাদেশ-ভারত নৌপ্রটোকল ভূক্ত এই চ্যানেলটির বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের ১৪টি টিম ট্রলার নিয়ে পানগুছি ও বলেশ^র নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব লাশ উদ্ধার করে। আর সেই সাথে পানগুছি নদীর দু’পাড়ে স্বজন হারানো মানুষের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। কারো পিতা, কারো ভাই, বোন, মেয়ে ও ছেলে খর¯্রােতা পানগুছি নদীতে ভেষে গেছে। স্বজন হারানো মানুষ গুলো খুজে ফিরছে নিহত স্বজননের মৃত দেহ। মৃত দেহ উদ্ধারের খবর পেলেই সেখানে ছুঁটে যাচ্ছে স্বজনরা। অনেকেই আবার নিজ উদ্যোগে ট্রলার নিয়ে নদীতে খুজে ফিরছেন স্বজনের মৃতদেহ। জীবিত না হলেও মৃত দেহ ফিরে পেতে চায় তারা। এদিকে পানগুছি নদীতে ট্রলার দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহত ১৪ জনের লাশ উদ্ধার ও ৮ জন নিখোঁজ থাকলেও টনক নড়েনি স্থানীয় প্রশাসনের। মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেছেন, ঘাটের ইজারাদার ছোলমবাড়িয়া মাঝিমাল্লা সমিতি ও দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটির চালকের নামে মামলা নিয়ে তাদের আটক করতে বলা হলেও এখনো তা কেন করা হয়নি তা আমার জানা নেই। তবে মোরেলগঞ্জে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল আলম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে কিছুই বলেননি। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। প্রশাসনের দু’জন কর্মকর্তার পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিন মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে বেশকিছু গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
নৌবাহিনীর কমান্ডার শাহরিয়ার ও বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক সরদার মাসুদুর রহমান জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এনিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। উদ্ধার হওয়া ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন, মোরেলগেঞ্জর চিংড়াখালী গ্রামের তবিবুর রহমান তোতার স্ত্রী মুন্নি বেগম (৩৫), কালিাকাবাড়ি গ্রামের আব্দুস ছালাম শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম(৩৫), কাছিকাটা গ্রামের কাশেম শেখের ছেলে আব্দুল মজিদ শেখ (৭৫), কাছিকাটা গ্রামের নাসির শেখে পুত্র নাজমুল (৬), বুরুজবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গফুর হাওলাদরের ছেলে আনছার হাওলাদার (৫০), রায়েন্দা গ্রামের সামসুল হুদার ছেরে আল সামস্ আবির (১৬), বাশবাড়িয়া গ্রামের আলম চাপরাশির স্ত্রী সালমা (৩০) ও তার দুই বছরের শিশুপুত্র সাজ্জাদ, কাছিকাটা গ্রামের নাসির শেখের পুত্র নাজমুল (৬)। এছাড়া গত বুধবার ও মঙ্গলবার উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, মোরেলগঞ্জের পুটিখালী গ্রামের হালিম হাওলাদার কন্যা রিমা বেগম (২৫), মোরেলগঞ্জের কালিকাবাড়ি গ্রামের মহসিন হোসেনের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৮), গুয়াবাড়িয়া গ্রামের হাসেম হাওলাদারের স্ত্রী সিয়ার বানু (৫০), চিংড়াখালী গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৭৫) ও উত্তর ফুলহাতা গ্রামের মোয়াজ্জেম হাওলাদারের স্ত্রী নাদেরা বেগম (২০)। স্ত্রীর খোজে নদীর পাড়ে দাড়িয়ে থাকা পুলিশ কনেস্টবল জাহিদ হোসেন লিটন বলেন, ঘটনার দিন ডুবে যাওয়া ট্রলারে আমিসহ আমার ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী ছিল। ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় আমি ও আমার ছেলে-মেয়ে নদীর পাড়ে সাতরিয়ে উঠতে পারলেও আমার স্ত্রী নাসিমা বেগম নদীতে ভেসে যায়। এখন পর্যন্ত তার লাশ আমি পায়নি। মায়ের লাশ নিয়ে ফিরতে থাকা কালিকাবাড়ী গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও চিংড়াখালী গ্রামের লোকমান সরদার জানান, লাশ উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ ১৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়েছে। নৌবাহিনীর কমান্ডার শাহরিয়ার জানান, ট্রলার ডুবির ৩য় দিনে নিখোঁজের তালিকা অনুযায়ী ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি নিখোঁজদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে, ট্রলার ডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে মোরলগঞ্জ উপজেলা সভা কক্ষে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পানগুছি নদীতে খেয়াপারাপারে জন্য সরকারি ভাবে দুটি ট্রলার ও দুই পাড়ে দুটি যাত্রী ছাউনি নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া প্রতি ট্রলারে ২৫ জন করে যাত্রী ও একটি বাসের যাত্রী একটি ট্রলারে বহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে প্রায় ৮০ জন যাত্রী নিয়ে খেয়াপারাপার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *