লালমনিরহাট থেকে ফিরে মোঃ রফিকুল ইসলাম ॥

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে নানান উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার। সরকারের গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশনায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন আধুনিক কৃষিযন্ত্র প্রদর্শন ও ব্যবহার করে প্রদর্শনী ক্ষেতে ফসল উৎপাদন করে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করছেন। সেই সাথে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও ভর্তুকির আওতায় উপজেলার কৃষকদের দেয়া হচ্ছে আধুনিক কৃষিযন্ত্র।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন কৃষক গ্রুপের মাঝে ১৪ টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ১৮ টি রিপার, ৭৬ টি পাওয়ার থ্রেসার এবং একই প্রকল্পের আওতায় ফুটপাম্প, উইডার, হ্যান্ড স্প্রেয়ার, উইনোয়ার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। কৃষিতে শ্রমিক নিভর্রতা কমাতে কৃষি ভর্তুকির আওতায় ০৯ ধরনের কৃষি যন্ত্র দেয়া হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা হলে বোরো মৌসুমে ধান কাটার কথা উল্লেখ করে তারা জানায়, একসঙ্গে অনেকের জমির ধান পাকায় শ্রমিক নিয়ে অনেকটা টানাটানি অবস্থা ছিল। তাছাড়া ধান কাটা, ক্ষেত থেকে ধান আনা এবং মাড়াই করার জন্য পৃথক পৃথক শ্রমিকের পিছু ছুটতে হত। কৃষি অফিসের পরামর্শে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে আমরা স্বল্প খরচ ও সময়ে সরাসরি ক্ষেত থেকে একেবারে বস্তাবন্দি প্রায় বাজারজাত করার উপযোগী ধান ঘরে তুলেছি। এতে ফসল উৎপাদনে খরচ কমার পাশাপাশি চাষাবাদে শ্রমিক নির্ভরতা কমেছে। চলতি রোপ আমন মৌসুমে চারা রোপণের জন্য সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার না করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষক। এসময় ধান চাষীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শ্রমিক দিয়ে চারা রোপণের অর্ধেক খরচে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। যন্ত্রের মাধ্যমে কম চারা দিয়ে সঠিক দূরত্বে জমিতে রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। সমানভাবে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণের ফলে ক্ষেতের পরিচর্যা করা সহজ হবে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে লাগানো ধানের চারা গাছগুলো সবুজ সতেজতায় দ্রুত বেড়ে ওঠছে। আমরা আশা করি যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কম খরচে এবারে আমরা বেশি ফলন পাব।

সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই মটরস এর লালমনিরহাট টেরিটরি ম্যানেজার হামিদুর ইসলাম জানায়, যেখানে ১ একর জমিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপন করতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হতো আর সময় লাগতো সারা দিন। কিন্তু আধুনিক ইয়ানমার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহারে ২ ঘন্টায় ১ একর জমিতে ধানের চারা রোপন করা যায়। একর প্রতি জ্বালানি খরচ ২ থেকে আড়াই লিটার। ইয়ানমার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহারে চারা রোপন করলে লাইন সোজা হয়। চারা থেকে চারার দুরুত্ব নির্দিষ্ট থাকে ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো ও এমনকি ধান কাটা সহজ হয়। কুশির সংখ্যাও অনেক বেশি হয়। ফলে অধিক খড় পাওয়া যায়।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হারুনর রশিদ জানায়, প্রথমবারের মত যান্ত্রিকভাবে রাইস ট্রান্সপ্লান্ট যন্ত্রের সাহায্যে চলতি রোপা আমন মৌসুমে আমন ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে খরচ ও সময় কম লাগায় স্থানীয় কৃষকরা এ যন্ত্রের সাহায্যে চারা লাগানোয় আগ্রহ বাড়ছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রকল্প ও ভর্তুকির আওতায় কৃষি যন্ত্র দিচ্ছি। কৃষিতে শ্রমিক নিভর্রতা কমিয়ে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কম খরচে ফসল উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন এখানকার কৃষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *