ঝালকাঠি প্রতিনিধি :
ঝালকাঠির রাজাপুরে গ্রাহকের প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র রাজাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলামের উধাও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আল-হেমায়েত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

খোজ নিয়ে জানাযায়, এই রফিকুল ইসলাম রাজাপুর-কাঁঠালিয়া সংসদীয় আসনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র নমিনেশন প্রত্যাশী আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী (পীর সাহেব কারীমপুর) সহ স্থানীয় কয়েকজন নিজ দলীয় নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে উপজেলার সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সুদ মুক্ত মুনাফার কথা বলে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় থাকা অন্যরা এখন এই দায় নিতে অনিহা প্রকাশ করছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সহ এর মাধ্যমে পরিচালিত সকল শাখা প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা। এরমধ্যে পালিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।

এদিকে আল-হেমায়েত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের পরিচালকের উধাও হওয়ার খবর শুনে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গ্রাহকরা উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পাকাপোল বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। এসময় এই প্রতিষ্ঠানে অধিক মুনাফার আশায় টাকা জমা রাখা গ্রাহক আলেয়া বেগম, মিজানুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, মো. হানিফ, মো. মহিউদ্দিন খান, মো. আলতাফ, মো. কামাল, হেলেনা সহ একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও মাওলানা হেলাল উদ্দিন নামের তিনজনে মিলে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে যার রেজিঃ নং- ০১২/ঝাল। এরপরে এই প্রতিষ্ঠানে আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী (পীর সাহেব কারীমপুর) কে প্রধান পৃষ্টপোষক রেখে মাওলানা রফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান থেকে, মুফতী হেদায়েত উল্লাহ আনসারীকে ভাইস চেয়ারম্যান, মুফতী সৈয়দ তাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক সহ অনেক নিজ দলের নেতাকে বিভিন্ন পদে রেখে একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি করে। প্রথমে মানুষকে আকৃষ্ট করতে মোটা অংকের মুনাফা প্রদান করা হলেও আস্তে আস্তে সব বন্ধ করে দিয়ে এখন কয়েকশত গ্রাহককে রাস্তায় নামিয়ে উধাও হয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটি চালুর পর থেকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক কারীমপুরের পীর সাহেব আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা হেলাল উদ্দীন সহ সবাই ওয়াজ মাহফিল সহ সব জায়গায় তাদের কাছে আসা ধর্মভীরু মানুষকে বলে বেড়াতেন “ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে সেটা সুদ হয় আর আলেম ওলামাদের প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখলে সেটা সুদ হয়না এবং এটাই ইসলামের আইন।” এইসব কথায় সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে অধিক মুনাফার আশার জীবনের কষ্টার্জিত সব টাকা এই প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দিয়ে আজ তারা নিঃস্ব।

এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, পলাতক চেয়ারম্যান সহ অনেককে বিভিন্ন সময় বারবার মোবাইলে কল দিয়ে না পাওয়া গেলেও ভাইস চেয়ারম্যান মুফতী হেদায়েত উল্লাহ আনছারীকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি নামে মাত্র ভাইস চেয়ারম্যান, টাকা পয়সার লেনদেন ও জমি জমা ক্রয় সহ সকল বিষয় মাওলানা রফিকুল ইসলাম একাই পরিচলনা করতেন। আমার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানে যে গ্রাহকরা টাকা জমা রেখেছেন আমি তাদের সাথে বিষয়টি সমাধান করে নিবো।

এবিষয়ে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *