কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
জীবনের শুরুতেই দারিদ্রতা আর নানা অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্য লড়াই যেন ওদের নিয়তি। । ভাল ফলাফলে দুচোখ ভরা উচ্ছাস থাকলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কিভাবে মিটবে সে দুশ্চিন্তা তাড়া করে ফিরছে তাদের। তবে কঠিন দারিদ্র্যতায় বাস করে কোনদিন আধাপেট খেয়ে না খেয়ে যারা মেধার পরিচয় রেখেছেন। এবারে এসএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ -৫ তাদের এখন অর্থাভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে রয়েছে শংকা।

রিয়া

দরিদ্র পিতামাতার সন্তান মেধাবী ছাত্রী রোমানা আক্তার রিয়া। নাগেশ^রী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেলেও মনের ভিতরে খুশি নেই এক বিন্দু। অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত তার।
রিয়া কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম সাপখাওয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বাবা পেশায় একজন রেডিও মেকানিক। জমি বলতে বাড়ির ভিটেটুকু। আগে রেডিও প্রচলন থাকলেও এখন নেই। এ পেশায় পেটের ভাত যোগানো দূরহ। তাই তাদের মাসের অধিকাংশ দিন দুবেলা ভাত জুটে না পাতে। অনাহারে অর্ধাহারে থেকেও থেমে যায়নি রিয়ার পড়ালেখা। তার অদম্য ইচ্ছে শক্তিই সাহস যুগিয়েছে তাকে। রিয়া স্বপ্ন দেখে ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্র্মকর্তা হয়ে বাবা মায়ের দুঃখ ঘোচাবে। তবে এ স্বপ্নের বাধা দারিদ্র্যতা। রিয়া বলেন, এত কষ্ট করে লেখাপড়া করে ভালো ফলাফল করেই বা কী লাভ? পড়াশোনার এত খরচ যোগানোর মতো সাধ্য নেই বাবার।
রায়গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম আব্দুল্যাহ আল ওয়ালিদ মাসুম বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি রিয়া মেধাবী ছাত্রী। আমি পরিষদের পক্ষ থেকে যতদুর পারি সহযোগিতা করব কিন্ত তার স্থায়ী সহযোগিতা দরকার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

রিপন

শ্রী রিপন চন্দ্র সেন। এবারে এসএসসি পরিক্ষায় ইন্দ্রগড় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে। ফলাফলে যেমন খুশি হয়েছে তার দরিদ্র্য পরিবার তেমনি হতাশায় তার পড়ালেখা নিয়ে। অর্থাভাবে আগামীদিনের লেখা পড়া নিয়ে দূ:শ্চিন্তায় রয়েছে রিপনও।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের কুমার পাড়ার দরিদ্র বর্গাচাষী অনীল চন্দ্র সেন ও গৃহিনী রীনা রানি সেনের সন্তান রিপন। শিশুকাল থেকেই দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে রিপন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বড় ভাই এবার এইচএসসি ২য় বর্ষে এবং ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। বাপের ভিটায় ১বিঘা জমি থাকলেও চাষের জমি নেই একটুকরো। অন্যের জমি চাষবাদ এবং দিনমুজুর করে চলে তাদের সংসার। রিপন লেখাপড়ার পাশাপাশি পিতার কাজে সাহায্য করতো প্রায়ঃশ। দারিদ্য্রতার কারণে কোনদিন স্কুলের লেখাপড়ার বাইরে টিউশনি কিংবা প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি তার।
তার পিতা অনিল চন্দ্র সেন জানান, অভাবের সংসারে সন্তানদের মুখে তিনবেলা ভাত জোটানো কষ্টসাধ্য সেখানে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরেও তাদের লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে তা বন্ধ করতে পারেননি। শত কষ্টের মাঝেও চালিয়ে গেছেন সন্তানদের লেখাপড়া। এখন খরচ বাড়ায় হতাশ তিনি। তাই ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন অধারাই থেকে যাচ্ছে রিপনের।

কৌশিক আহমেদ রাফিঃ

এবারের এস,এস,সি পরীক্ষায় ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার গ্রামের হত দরিদ্র ডাল সবজি বিক্রেতা মোঃ নাজিম উদ্দিন রঞ্জু ও গৃহিনী মোছাঃ রৌফন পারভীন কিরনের পুত্র সে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাফি বড়। তার ছোট ভাই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।কৌশিক আহমেদ রাফি ২০১৫ সালে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ ৫ এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এছাড়া পিএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছে। বাড়ির ভিটা ছাড়া কোন জমাজমি নেই। সামান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিবারের ৪ সদস্যের ভরনপোষন করতেই তার পিতার হিমশিম খেতে হয়। এদিকে কৌশিক আহমেদ রাফি বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে তার পিতামাতার অভাব ঘোচাবেন বলে জানান। কৌশিক আহমেদ রাফির উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার কেমন করে বহন করে তাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এই ভাবনায় তার পিতামাতা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। জাতীয় পার্টির মনোনীত সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ,কে,এম মাহমুদুর রহমান রোজেন বলেন,আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি রাফির পরিবার খুবই গরীব। আমার যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগীতা করবো। তবে তিনি সারাদেশের বিত্তবানদের প্রতি এসব হত দরিদ্র মেধাবীদের আর্থিক সহায়তার আহবান জানান। কৌশিক আহমেদ রাফি তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সমাজের বিত্তবানদের সার্বিক সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন