ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ১২.৪.১৯
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে অগ্নিকান্ড,ভুমিকম্প ও জলবায়ুর কারনে হতাহতের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুগপোযুগী প্রযৃক্তি ব্যবহার না করায় এমনটাই হচ্ছে বলে সুধীজনের ধারনা। আর অগ্নিকান্ড,ভুমিকম্প ও জলবায়ুর কারনে হতাহত রোধ করার জন্য স্বপ্ন দেখছেন এক যুবক। যুবকটির নাম সাখাওয়াত হোসেন। সাখাওয়াত হোসেন কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার এক প্রত্যন্ত মংলারকুটি গ্রামের বাসিন্দা। ২০১১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে লেখাপড়া করা অবস্থায় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অধীনে আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হিসাবে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন।তার কম্প্রেহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম-এর প্রশিক্ষক হিসাবে পূনরায় ফায়ার সার্ভিস থেকে ‘‘ট্রেইনিং অব ট্রেইনার্স”কোর্সে অংশ নেন এবং সফলতার সাথে কোর্স সম্পন্ন করে প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করছেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর সিডিএমপি সেলে।তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ডে আগুন নেভানো এবং উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের সাথে ছিলেন তিনি। রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের ভলান্টিয়ার লিডার হিসেবে উদ্ধার কাজেও ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন স্বপন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইউএনডিপির-চীন-এর অর্থায়নে চীনের বেইজিং-এ ‘‘কমিউনিটি বেজড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইন এশিয়া’’নামক ওয়ার্কশপ করে এসেছেন। সাম্প্রতিক তিনি ‘‘সেফটি স্কুল’’ নামে একটি সংগঠন চালু করেছেন। তার কথা অনুযায়ী সেফটি স্কুল এক ধরনের সামাজিক আন্দোলন,যার মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের মধ্যে অগ্নিকান্ড,ভূমিকম্প ও জলবায়ু বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চান। তিনি বলেন বাংলাদেশে অগ্নিকান্ড ও ভূমিকম্প নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে,যেখানে তাদের কাজ করতে হয় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে।এজন্য তাদের প্রতি সর্বদা দেশবাসীর সম্মান ও শ্রদ্ধা কামনা করেন তিনি। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকবল যথেষ্ট নয়। লোকবল বৃদ্ধি করে স্টেশন বৃদ্ধি করা এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের সুবিধা বাড়িয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবী। যেকোন স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়,পোশাক শিল্প অথবা অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন তাকে ডাকলেই চলে যান এবং কথা বলেন অগ্নিকান্ড,ভূমিকম্প ও জলবায়ু নিয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি,ক্রিটিক্যালিংক,ভূলতা সমবায় মার্কেট,বছিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়,মডেল লাইভ স্টক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি এসব বিষয়ে ওয়ার্কশপ করিয়েছেন।
নিজ জেলা কুড়িগ্রামের কয়েকটি স্কুল ও কলেজে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। গিয়েছিলেন বলদিয়া হাই স্কুল,বলদিয়া ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় এবং শাহীবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন অগ্নিকান্ডের কারণ,অগ্নিকান্ডে করণীয়,জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা নিয়ে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ ক্লাবে অগ্নিকান্ড,ভুমিকম্প ও জলবায়ু নিয়ে কথা বলেন। সাখাওয়াত হোসেন স্বপন জানান,জাইকা’র গবেষণা অনুযায়ী ঢাকায় ৭ মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হলে প্রায় ৭২ হাজার ভবণ ধ্বসে পড়বে। বিশ্ণেষক ও গবেষকদের মতে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূসিকম্প হবার সম্ভবনা রয়েছে। তাই দেশের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা খুবই জরুরী এবং এ লক্ষ্যে তার ‘‘সেফটি স্কুল’’ কাজ করে যাচ্ছে যার শ্লোগান হচ্ছে ংধভবঃু ভরৎংঃ, ংধভবঃু সঁংঃ যেখানে তার সঙ্গে কাজ করছে প্রায় ১৫ জন প্রশিক্ষিত যুবক-যুবতী। সরকারী ও বেসরকারী সুযোগ ও সহযোগীতা পেলে তিনি যেতে চান দেশের সব শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে,কথা বলতে চান অগ্নিকান্ড,ভূমিকম্প ও জলবায়ু নিয়ে। সাখাওয়াত হোসেন স্বপন স্বপ্ন দেখেন একটি নিরাপদ বাংলাদেশের।