ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চৌধুরী বাজার মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু আইয়ুব আনসারীর বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ও তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের প্রমান এরপর হঠাৎ করেই মাদ্রাসা থেকে সুপারের অব্যাহতি নেয়ায় বিষয়টি এখন “টক অব দ্যা কুলাউড়ায়’’ পরিণত হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন উঠছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা সুপার যদি আত্মসাত করেন তাহলে কেন টাকা আদায় না করেই তাকে অব্যাহতি দেয়া হলো। আর এত টাকার উৎস কি, মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কুতুব শাহ বাচ্চা পীর কোথায় পেলেন এত টাকা, মাদরাসায় কে কত টাকা অনুদান দিয়েছেন- এসব প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না কোথাও।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রায়ারি মাদ্রাসার অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌঃ মোঃ গোলাম রাব্বি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদস্য ও অডিটর উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার এবং উপজেলা কৃষি অফিসার স্বাক্ষরিত রিপোর্টে ৬৯ লাখ ১১ হাজার ৬৬৮ টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা সেকায়েপ প্রদত্ত। এদিকে বিগত দুই-তিনটি উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সকল ইউপি চেয়ারম্যানরা বিষটির সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করেন। তদন্তে প্রমানিত বিষয়ের সুষ্ঠ বিচার প্রদান করে তারা সুপারকে মাদ্রাসায় বহাল তবিয়তে রাখারও দাবী করেন।
অপরদিকে এসব বিষয় নিয়ে মাদরাসাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া রাজনীতিতে পৃষ্ট হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থী। আধিপত্য বিস্তার আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাতে গিয়ে শিক্ষক আর ম্যানিজিং কমিটির গ্র“পিংয়ে অতিষ্ট শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। দু-এক শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান না করে মাদরাসার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেন। এতে মারাত্মভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদাসহ শিক্ষার্থীদের মনযোগ। এমন নোংরা খেলা থেকে পরিত্রাণ চান সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকগণ। এদিকে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি নেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু আইয়ুব আনসারী। তার এই সহসাই পদত্যাগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তার পদত্যাগের পর পরই লোকমুখে চাউর হয়েছে তাকে পদত্যাগ করায় তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের টাকা মওকুফ করেছেন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, কুলাউড়া রেলওয়ে জামে মসজিদের ইমাম, উপজেলা আল-ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু আইয়ুব আনসারীকে মাদরাসা থেকে সরিয়ে দিতে কতিপয় ব্যাক্তি এসব অপতৎপরতা চালান। তাদের রোষানলে পড়ে অতীতেও দু’জন সুপার এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষককে চাকুরী ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রতিদিন মোট ৮টি ক্লাসের মধ্যে নিয়মিত ৩ থেকে ৪টি হয়। আর বাকিগুলো সরব থাকে অনান্য আলোচনায়। তাদের এমন আচরণে অতিষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ জানান, উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছিল। পরে আমি কাতার চলে যাওয়ার কারনে কি সিদ্ধান্ত হলো জানিনা। উপজেলা পরিষদের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান নারীনেত্রী নেহার বেগম জানান, উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে মাদ্রাসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম মাদ্রাসার সুপারকে মাদ্রাসায় বহাল তবিয়তে রেখে তদন্তে যে বিষয় প্রমান হবে তার শাস্তি দেয়া হবে। এবিষয়য়ে পরিষদের সকল সদস্যই একমত হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌঃ মোঃ গোলাম রাব্বি জানান, তদন্ত রিপোর্ট ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন সিদ্ধান্ত নিবেন কি করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন