রেজাউল করিম, রাজশাহীঃ
পুলিশ সদস্যদের অন্যায় কাজ আমরা বরদাস্ত করবো না। কোন পুলিশ সদস্যের অন্যায়ের দায়ভার বাহিনী নেবে না। পুলিশ ভাল কাজে পত্রিকার শিরোনাম হতে চায়, খারাপ কাজের শিরোনাম নয়। জনগণের কাছের মানুষ হতে চাই ও পাশের মানুষ হতে চাই।”
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৬৪ তম ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এসব কথা বলেন।
নবীন পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নত দেশের উপযোগী করে তোমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ৪০ বছর পর কনস্টেবল নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ‘বেস্ট অফ দি বেস্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে। তোমাদের কাছ থেকে দেশের জনগণ সর্বোচ্চ সেবা আশা করে। তোমাদেরকে সেবার মানসিকতা নিয়ে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে।’
পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ এই কর্তাব্যক্তি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যে কোন সমস্যায় তোমাদের কাছে ছুটে আসবে। তাদেরকে সেবা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনো বিশেষ কোন পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার না করে দায়িত্ব পালনের জন্য তোমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থ, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও সামাজিক স্বার্থকে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।’
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘পুলিশের প্রধান কাজ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃক্সক্ষলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন, মাদকের অপব্যবহার ও বিস্তার রোধ করা। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও সাফল্য ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ পুলিশ শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এক গৌরবের নাম।’
আইজিপি বলেন, ‘সমাজ পরিবর্তনশীল। সে কারণে অপরাধও পরিবর্তনশীল। নতুন অপরাধ ও কৌশল মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে পুলিশ। ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা, সাইবার ক্রাইম, ফিনান্সিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী ও শিশু ডেস্ক, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ সহ আরও অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।’
ভাষণ শেষে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিক তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এর আগে আইজিপি একটি সুদৃশ্য খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেন প্যারেড কমান্ডার হিসেবে এ বর্ণাঢ্য প্যারেড পরিচালনা করেন। পরে পুলিশ প্রধান একাডেমির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং একাডেমির পুকুরে মৎস্য অবমুক্ত করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত টিআরসি ব্যাচের প্রশিক্ষণ কুচকাওয়াজে অন্যদের মধ্যে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী বেগম জীশান মীর্জা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এ কে এম এমরান হোসেন ভূঞাসহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং রাজশাহী বিভাগের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ রাজশাহী ও নাটোর জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ড. বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। ৬ মাস মেয়াদী প্রশ্কিষণরত টিআরসিদের মধ্য থেকে আইন বিষয়ে শ্রেষ্ঠ টিআরসি নির্বাচিত হন বিশাল (টিআরসি নং-২৩৯৩৩৫) এবং মাঠ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ টিআরসি হন মো. সিয়াম সিদ্দিকী সাগর (টিআরসি নং-২৩৯০২৪)। প্যারেডে মোট ৪৫৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০৪১ সালের উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাংলাদেশ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদের বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে পরিবর্তন আনা হয়। ‘চাকরি নয়, সেবা’ এ স্লোগানে কনস্টেবল পদে শারীরিক ও মেধাগত দিক থেকে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে।