বিজয় রায় রাণীশংকৈল থেকে ঃ বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর রাণীশংকৈল পাকহানাদার মুক্ত হয়। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা, মা-বোনের সম্ভ্রম, লাখো লাখো তাজা প্রাণ’র বিনিময়ে বাঙ্গালী জাতি পাক হায়েনাকে এদেশ থেকে মুক্ত করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। এলাকা শত্রুমুক্ত করে এই দিন রাণীশংকৈল থানা চত্বরে বাঙ্গালী জাতির গৌরবের লাল সবুজের পতাকা আকাশ পানে উঁচিয়ে ধরেন ভান্ডারা গ্রামের মজির উদ্দিনের ছেলে বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম।
সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক আলী আকবর এমপির উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তায় ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল ডাক বাংলোতে এলাকার যুবকদের যুদ্ধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পাক বাহিনী খবর পেয়ে সেখানে আক্রমন করার পরিকল্পনা হাতে নিলে প্রশিক্ষক আবু সুফিয়ান সহ প্রশিক্ষণ রত যোদ্ধারা সেখান থেকে সরে যান। ভারতে গিয়ে যোদ্ধারা উন্নত ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে এলাকা শত্রুমুক্ত করে। ১৬ই ডিসেম্বর ব্যাপক কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।
যুদ্ধকালিন সময়ে পাক হায়েনা বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীর উপর নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। সাধারণ নিরপরাধ মানুষদের ধরে রাণীশংকৈল থানায় এনে নির্মমভাবে নির্যাতন চালাত। কোন খাবার খেতে দিতনা। তিন চারদিন নির্যাতন চালানোর পর রাতের বেলা থানার অদুরে খুনিয়াদিঘিতে আনত। এখানেও নির্যাতন চালানোর পর চোখ বেঁধে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলত। মৃত, অর্ধজীবিত সবাইকে টেনে পুকুরের পানিতে ফেলে দিত। আবার গর্ত করে কয়েক জনকে এক সাথে মাটি চাপা দিয়ে দিত। সে সময় রাতের বেলা শিয়াল আর দিনের বেলায় কুকুর শকুনের লাশ খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। পুকুরের পানি সব সময় রক্তে রঞ্জিত হয়ে থাকত। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর স্যালো মেশিন দিয়ে পুকুরের লাল পানি সরিয়ে ফেলে স্বাভাবিক পানি ভর্তি করার পর পানির রঙ পরিবর্তন হয়।
যুদ্ধকালিন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আলী আকবর এমপির নেতৃত্বে ডাক বাংলোতে আবু সুফিয়ানের কাছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে ভারতে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে এসে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর এলাকা শত্রুমুক্ত করে রাণীশংকৈল থানায় বাংলাদেশের পাতাকা উত্তোলন করি।