মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন উপাধীতে ভুষিত হলেও স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হয়েও মেলেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্বাস আলীর কোন খেতাব। তাই তার আক্ষেপ জীবন সায়াহ্নে এসেও যদি তাকে কোন খেতাবে ভুষিত করা হয় তাহলে তিনি মরেও মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ ভোগ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে এসব কথা ব্যক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মুক্তির জন্য তিনি অপারেশনে বলিষ্ঠ নের্তৃত্ব দিয়েছেন। শুধু তাই নয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিমূলক সাক্ষীসহ তার নের্তৃত্বে ভারতের দক্ষিন দিনাজপুরের বালুরঘাট কাঁঠলা ইউথ প্রশিক্ষন ক্যাম্পের ৪২৪৯ মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিংসহ সুবেদার মেজর পদবীর স্বীকৃতি পত্র লাভ করেছেন।
জানা যায়, পিতা-মৃত এম এম আমানুল্ল্যার ছেলে এম এম আব্বাস আলীর জন্ম ১৯৫০ সালের ৬ই মে। বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্রি ইউনিয়নের আমবাড়ী বাজারের বিশ্বনাথপুর গ্রামে ।

আব্বাস আলী স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বকাল ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পযন্ত পশ্চিম পাকিস্থানের শিয়াল কোটে ওয়ালেস অপারেটর হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের পূর্বকাল ১৯৬৮ সালে পাকিস্থানের শিয়ালকোটে পার্ক বাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের ব্যারাকে আটক করে পূর্ব বাংলায় আসতে বাধা দিতে পারে মুক্তিযুদ্ধের আবাস পেলে আব্বাস আলী তা বুঝতে পেরে ওই সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরে ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলে তিনি মজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে ১০ই মার্চ থেকে ১২ মার্চের দিকে পাক সেনারা মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করার জন্য আমবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান করা শুরু করলে তার নের্তৃত্বে আমবাড়ীকে পাক বাহিনী মুক্ত করতে তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন আমবাড়ী ব্রীজ । ভেঙে দেয়ার পরেও পাক বাহিনীরা সবজায়গায় ঘিরে নিলে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স-পরিবারে ২০ মার্চ ভারতের বালুরঘাটে পালিয়ে যান। এরপর সেনাবাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম আব্দুর রহিম তাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন কার্যক্রমে যোগদান করান। পরে আব্বাস আলী সোনাবাহিনীতে থাকায় ভারতের দক্ষিন দিনাজপুরের বালুরঘাট কাঁঠলা ইউথ প্রশিক্ষন ক্যাম্পের সুবেদার মেজর হিসাবে দায়িত্ব পান। এরপর তার নের্তৃত্বে কাঁঠলা ইউথ প্রশিক্ষন ক্যাম্পে ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি হাতে কলমে প্রশিক্ষন শুরু করলে ধীরে ধীরে তিনি ৪২৪৯ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষন প্রদান করেন। এছাড়া তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক বাহিনীকে ঘায়েল করতে ট্যাংক এর ভিতর অবস্থান করেছিলেন ২২ দিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পঁচাত্তরে পুনরায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে দেশ পরিচালিত হলে মুক্তিযুদ্ধাদের অবমূল্যায়ন দেখে অভিমানে মুক্তিযুদ্ধার প্রাপ্ত সন্মান পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন আব্বাস আলী। বর্তমানে দেশে আবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে আবারও তিনি এক বুক আসা নিয়ে বসে আছেন যেন তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার বড় কোন খেতাবে ভুষিত করা হয়।
এম এম আব্বাস আলীর স্ত্রী শহীদা আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি যে অবদান রেখেছিলেন তার তুলনায় তিনি কিছুই পাননি। সাধারন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে পাচ্ছেন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। আজ তিনি খ্বুই অসুস্থ কিন্তু দেখার কেউ নেই। নেই কোন সরকারি ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা।
আব্বাস আলীর মেয়ে রেবেকা সুলতানা বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও আমরা ৮ ভাই বোন লেখাপড়া শিখেও হয়নি কোন সরকারি চাকুরে। যুদ্ধের সময়ে তার সাথে থাকা মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন মোল্লা জানান, তিনি সাধারন কোন মুক্তিযোদ্ধা নন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি যে অবদান রেখেছেন সেই তুলনায় পাননি প্রাপ্ত সন্মান।
পুনট্রি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো:নুরে কামাল জানান,মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভুমিকা রেখেছেন তিনি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা তার কাছে তার অবদানের কথা অনেক শুনেছি।
এ বিষয়ে প্রশাসক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এর সাথে কথা হলে তিনি জানান , উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্য অনুযায়ী যে কোন সহযোগিতা চাইলে করা হবে। এবং তাদের পরিবারে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় সর্বক্ষনিত সহযোগিতা দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *