মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
আমার হৃদয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে, চারদিকে শুধু ছোপ-ছোপ রক্ত। হায়নার দল আমার প্রজন্মকে ধ্বংস করতে চায়। দেশকে মেধাশূন্য করতে চায়। তাই তো এবার ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিশু ও কন্যা দিবস এমন সময় পালিত হলো যখন বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় শিশু ও নারী নির্যাতনের খবর দেশবাসীকে আহত ও বিষ্মিত করেছে। যদিও কিছু কিছু ফেইজবুক বন্ধুরা গত তিনদিন যাবৎ কন্যা দিবসে নিজের কন্যা সন্তানের ছবি দিয়ে ফেইজবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তারা একবারও ভেবেছেন, এই চবি তার কন্যার জন্য অভিশাপ হয়ে যেতে পারে। চারদিকে শকুনের আনাগোনা। রাক্ষসী ও নরপিশাচরা যেভাবে গণ ধর্ষনের উৎসব করছে আমরা যদি এর তীব্র প্রতিবাদ না করে আমদের নিজেদের কন্যার ছবি প্রকাশ করে দোয়া প্রার্থনা করেছি পথে প্রান্তরে আমার সেই কন্যার কতটুকু নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে পারবে?
সিলেটে এমসি কলেজে নব-বধু ঘুরতে গেলে স্বামীকে বেধে স্ত্রীকে গণ ধর্ষন যারা করেছে তাদের কে কেউ কেউ নিষ্পাপের সার্টিফিকেটও দিয়ে দিচ্ছেন। তখন জ্ঞানপাপীদের জ্ঞানগর্ব কথা শুনে কাঁদবো না হাসবো নাকি বেহুস হয়ে যাব মাঝে মাঝে ভাবি।
দেশটা কোথায় যাচ্ছে?
যেখানে আমার মা বোনের কোন নিরাপত্তা নেই। আমার সন্তান ঘরে ফেরা না পর্যন্ত অস্থীরতা ও দুঃচিন্তায় প্রতিটি মূহুর্ত কাটাতে হয়। উন্নয়নের মহাসাগরে আমরা যখন ভেসে চলেছি তখন লোক দেখানো পাপীয়া, মাফিয়া, সাহেদ, ক্যাসিনো সম্রাটদের ধরা পড়লেও তাদের পৃষ্টপোষক ও গডফাদাররা এখনও অধরা।
আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করছি যেকানে একজন সাধারণ গাড়ীচালক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। ছাত্র অবস্থায় কেউ কেউ দুই হাজার কোটি টাকাও ব্যাংকে জমা রেখে আলোচনায় চলে আসে।
যারা এদেরকে এই টাকার মালিক বানিয়েছে তাদের কে না খুজে এদেরকে নিয়েই আমরা মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। প্রতিদিন এত ইস্যু তৈরী হয় সময় গড়াতে না গড়াতেই সেই ইস্যু টিস্যুতে পরিণত হয়। ময়লার ভাগারে যেমন আর্বজনা জমা হচ্ছে আমাদের সংকটও তেমনি তলিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে নিজেকে ভাবতেও এখন কষ্ট হয়। চারপাশে অজস্র অমানুষের ভিড়ে নিজেই কখন তাদের তালিকায় চরে যাই সেই বোধটুকুও হারিয়ে গেছে।
সব দায় যেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর। তার চারপাশে যারা রয়েছেন তাদের কোন দায় নেই । আর এখন তো বিরোধী দল শাহবাগ জাদুঘরে নিজেদেরকে বন্দি করে চমৎকার ফ্রেমে আটকে রেখেছেন।
চলছে মুজিব বর্ষ, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হাজির হবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অর্থাৎ সুবর্ণ জয়ন্তী। করোনকালীন মহামারীতেও আমরা নিজেদেরকে সুধরাতে পারিনি। দুর্নীতির চাদরে আমরা নিজেদেরকে ঢেকে ফেলেছি। দুর্নীতিবাজদের পৃষ্টপোষকতায় আমাদের সকাল-সন্ধ্যা শুরু হয়। আর সেকারণেই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা ক্ষীণও স্বরে উচ্চারিত হয়। অনেক সময় নিজের কানও নিজের প্রতিবাদ শুনতে পাইনা। এভাবে আর কতদিন?
সংকীর্নতার রোগে আমরা সবাই আক্রান্ত। আগে রাতকানার কথা শুনতাম এখন দলকানার কথা শুনি। প্রতিটি দলের অজস্র প্রেমিক থাকলেও আজকাল দেশপ্রেমিক বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যায় না।
আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে একজন শেরে বাংলা, সরওয়ার্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধুকে চাই। যিনি আবারও তরুনদেরকে ডাক দেবেন দেশপ্রেমে জাগিয়ে তুলবেন, চেতনার বাতিঘরে প্রজ্বল্লিত করবেন মহান ভাষা আন্দেলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।আমাকে একজন তিতুমীর দাও? আমাকে একজন শরীয়তুল্লাহ দাও? আমাকে একজন নজরুল দাও? আমি তোমদের সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেব। সেদিন কন্যা দিবসে আমার প্রিয় কন্যার ছবি ফেইজবুকে আপলোড করে আতংকিত নয় বরং গর্বিত হবো।
জয় হোক মানবতার- জয় হোক জনতার।
লেখক, মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
চেয়ারম্যান,
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি।