(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়)

মানব জীবনের জন্য জমি বা ভূমি অথবা মাটি একমাত্র অবলম্বন। মাটি ছাড়া মানুষকে কল্পনা করা যায় না। কেননা, মাটি থেকেই মানুষের সৃষ্টি, মাটি থেকেই জীবিকা আবার মাটি মানুষের শেষ ঠিকানা। এই মাটি এখন ভূমিদস্যু, ভূমিসন্ত্রাসী, ভূমিখেকো বা অবৈধ দখলদারদের আগ্রাসনে পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যুরা জাল দলিল, ভূয়া মাঠপর্চা, ভূয়া রেকর্ড, নকল নামজারি, ভূয়া ওয়ারিশ ইত্যাদি নাম মাত্র কাগজপত্র সৃষ্টি করে পেশিশক্তি, রাজনৈতিক শক্তির প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক নিরীহ গরিব মানুষের জমি দখল করে চলছে। বৈধ মালিকের ৬০/৭০ বছরের কিংবা তারও অধিককালের বৈধ দখল ও বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ভূমিদস্যুরা মালিকের জমি জবর দখল করে চলছে। কেবল জবর দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং জমির মালিককে খুন পর্যন্ত করছে। জমি বিরোধে এ যাবৎ কত মানুষ খুন বা নিহত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত (সাড়ে ৯ বছরে) ১ হাজার ৫ শত ৮১ জন লোক ভূমি বিরোধে খুন বা নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই নিরীহ জমির মালিক। ভূমিদস্যু বা অবৈধ দখলদারের হাতে এসব নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে। কখনও জমির মালিক, কখনও জমির মালিকের ছেলে আবার কখনও জমির মালিকের স্ত্রীকে নির্দয়ভাবে খুন বা হত্যা করেছে। জমির মালিক একদিকে জমি হারিয়েছে অন্যদিকে আপনজনকে হারিয়েছে। জমির মালিকের কষ্টের জবনিকা এখানেই শেষ হয়নি। বিচারের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বাকিটা হারিয়ে সর্বশান্ত। স্বাধীনতা ৫০ বছর পরেও জমি বিরোধে খুনের এ নগ্ন অসভ্যতার চিত্র দেখতে থাকবো? বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ১৬নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্পত্তি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত। আরো উল্লেখ করা হয়েছে যেহেতু ভূমি জনগণের মৌলিক অধিকার তা সংরক্ষণসহ সামগ্রিকভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন ও জীবনমান উন্নয়ন তরান্বিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। সুতরাং ভূমি বিরোধ এখন চরমে। এমতাবস্থায়, কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ভূমিদস্যু দমন আইন পাশ করার জন্য মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর কাছে দেশবাসীর পক্ষে সবিনয়ে আবেদন জানাচ্ছি।

নিরীহ জমির মালিকের পক্ষে

মোঃ সিরাজুল হক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *