হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চারটি পরিবারের মন্দিরে হামলা চালিয়ে ৮টি প্রতিমূর্তি ভাংচুর করেছে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২ মে) সকালে মন্দিরে পুজা দিতে এসে বিষয়টি সকলের নজরে আসে। প্রতিমূর্তিগুলোর বিভিন্ন জায়গায় খোঁচা দিয়ে আঘাত করে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান। জানা যায়, উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল সীমান্তের আন্তজার্তিক মেইন পিলার ৯২৯ এর সাব পিলার ১ এস থেকে ৪শ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত রায়পাড়া গ্রামে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা ভবেশ চন্দ্র বর্মণের বাড়ির উঠানে হরিদেব মন্দির, বিনয় চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে মনসা মন্দির, থীরেন চন্দ্র বর্মণের বাড়ির উঠানে মহাদেব মন্দির ও বীরেন চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ভাঙচুর করে ৮টি মূর্তি বিনষ্ট করে। এসময় ভবেশ চন্দ্রের মন্দিরের মহাদেব ঠাকুরের নাক মুখে ক্ষত ও তিনটি হাতে ফাঁটল এবং হরি ঠাকুরের নাক মুখে ক্ষত ‍ও দুটি হাতে ফাঁটল ধরেছে। বিনয় চন্দ্র বর্মণের মনষা ঠাকুরের মাথার মুকুট, মহাদেব ঠাকুরের ডান হাতের ডান হাতের দুই আঙুল ও বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলেছে। বীরেন্দ্রনাথ বর্মণের পারিবারিক মন্দিরে রাধাকৃঞ্চ ঠাকুরের বাম হাতের কবজি ভেঙ্গে ফেলেছে। ধীরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্দিরে সিমেন্ট দিয়ে তৈরী করা মহাদেব ঠাকুরের নাক ও পেটে ক্ষত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন, ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিধি, গোরকমন্ডল ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা।
বীরেন চন্দ্র বর্মন জানান, আমার বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে গ্রামের মানুষ গেল তিনযুগ ধরে পূজার্চনা করে আসছেন। সোমবার সন্ধ্যায় সকলে মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন। মঙ্গলবার সকালে মন্দিরে পূজার জন্য এসে দেখতে পান মন্দিরের ভেতর মূর্তিগুলো ভাংচুর অবস্থায় পরে আছে। ধারণা করা হচ্ছে মঙ্গলবার ভোররাতে মন্দিরে মুর্তি ভাংচুরের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এর আগে এই গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি স্বীকার করেন।
ভবেশ চন্দ্র বর্মন ও ধীরেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, একই রাতে গ্রামে চারটি মন্দিরে হামলা করে মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় তারা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় তারা থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের ফুলবাড়ী উপজেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অনিল চন্দ্র রায় বলেন, হিন্দু জনগোষ্ঠির মাঝে আতংক ছড়াতে সংঘবদ্ধ দূর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার সৃষ্ঠ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সংঘবদ্ধ চক্রটি মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা অবশ্যই সরকার বিরোধী।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, হিন্দু জনগোষ্ঠির সাথে মতবিনিময় করে তাদেরকে আতংকিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাংচুরকারী দূর্বৃত্তদের অবশ্যই চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। তাদের দৃষ্টান্তুমুলক শাস্তি নিশ্চিত করাও হবে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জেলা প্রশাসক মহাদয়ের নিদের্শে আর্থিক অনুদান দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *