ফুলবাড়ি(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ

ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা ধরলা বেষ্টিত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা। এ উপজেলায় নেই কোন শিল্প কল-কারখানা। কৃষি কাজ করে এখানকার বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি ধান চাষের উপযোগী হওয়ায় বছরে রোপা আমন ও ইরি-বোরো চাষ করেই ব্যস্ত সময় পার করেন বেশিরভাগ কৃষক। আমন মৌসুমে খরা, বন্যাসহ নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে চাষাবাদ করেও শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন অনেক কৃষক। নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক আশায় বুক বেঁধে আবার শুরু করেন বোরো চাষাবাদ।

ইরি-বোরো মৌসুমে সেচের জন্য নির্বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার। কিন্তু বাঙালির বহুল শ্রুত ‘ কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ প্রবাদের সাথে অসাধারণ মিল বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। সরকার বিদ্যুতে ভর্তুকি দিলেও তার সুবিধা পাচ্ছেন শুধুমাত্র সেচ পাম্প মালিকরা।

কুড়িগ্রাম -লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলবাড়ী জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবছর গভীর ৮৬টি ও ১৪৮০টি অগভীর নলকূপ মিলে মোট ১৫৬৬ টি সেচ সংযোগ চালু রয়েছে। আর প্রতিটি নলকূপের মালিক বিদ্যুতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি পাচ্ছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানিয়েছেন, চলতি বোরো মৌসুমের প্রতি বিঘা জমিতে সেচের কৃষকদের গুনতে হচ্ছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। কৃষকদের দাবি বিদ্যুতে ভর্তুকি পাম্প মালিকরা পেলেও ভর্তুকির নুন্যতম সুবিধাও তারা পাচ্ছেন না। উপজেলার উত্তর বড়ভিটা গ্রামের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদের হোসেন বলেন, আমি এবারে ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দেয়ার জন্য আমাকে ২ হাজার করে টাকা দিতে হচ্ছে। সরকার যে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছে তা তো আমরা পাচ্ছি না। যদি সরাসরি আমাদেরকে ভর্তুকি দেয়া হত তাহলে আমাদের মত প্রান্তিক কৃষকের বেশি উপকার হত। সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, হাসান আলী ও সিরাজ আলী বলেন, বিদ্যুতে সরকারের দেয়া ভর্তুকির সুবিধা পাম্প মালিকেরাই পাচ্ছেন। ভর্তুকি পাওয়ার পরেও আমাদের তারা কোন ছাড় দিচ্ছেন না। সরকার যে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছে তাতে আমাদের লাভ কি?

পাম্প মালিকেরা কোন ছাড় না দেয়ায় অনেক কৃষক সেচে একটু সাশ্রয়ের আশায় আবাসিক মিটারে পার্শ্ব সংযোগ দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু কথায় বলে ‘কপালে নাই ঘি ঠকঠকালে হবে কি? এ ক্ষেত্রেও কৃষকের আশার পাঁতে ছাই। আবাসিক মিটারে পার্শ্ব সংযোগ লাগিয়ে জমিতে সেচ দেয়ার কারণে প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিলের সাথে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি (১হাজার ৫শ) জরিমানার টাকা। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা মারার মতোই অবস্থা।

আর সেচের ভাড়ার বিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাম্প মালিকেরা বলেন, আমরা প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে ২ হাজার কর টাকা নিচ্ছি। অনেকেই এর থেকেও কমও দেয়। বিদ্যুতে সরকারি ভর্তুকি নিয়ে তার সুবিধা প্রান্তিক কৃষকদের দিচ্ছেন কি না তা জানতে চাইলে তারা বলেন – আমরা তো সেচের জন্য আগের হিসেবেই টাকা নিচ্ছি। এখন টাকা কম নিতে হবে এমন কোন নির্দেশনা পাই নি।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক ১০ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে বেশির ভাগ কৃষক বিদ্যুৎ চালিত গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এ উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের বিদ্যুতে ভর্তুকির সুবিধা দিতে আমরা সেচ চার্জ নির্দিষ্ট করার বিষয়ে কাজ করছি। উপজেলায় সেচ কমিটি আছে তাদের সাথে আলোচনা করে সব কৃষকই যাতে বিদ্যুতের ভর্তুকি সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, সেচের জন্য সরকার প্রদত্ত সুবিধা প্রান্তিক কৃষকদের জন্য নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় অঞ্চল ভিত্তিক সেচের জন্য নির্দিষ্ট চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আমরা পর্যালোচনা করছি। কৃষকদের উপস্থিতিতে মিটিং করে সেচ চার্জ ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। প্রান্তিক কৃষকরা যাতে প্রদত্ত সুবিধার বিষয়ে অনিশ্চিত না থাকে সেজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *