মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন কুড়িগ্রাম সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের দুর্বিসহ দিনগুলির কথা আজও ভুলতে পারেননি। ১৯৭১ সালে অক্টোবরের শেষ দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা কুড়িগ্রাম জেলা সদরের পূর্ব দিকে পাঁচগাছী-যাত্রাপুর এলাকায় অর্থাৎ ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি পাশপাশের এলাকায় কয়েকটি অপারেশন চালায়। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন- রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সৈয়দ মনসুর আলী বীর বিক্রম। অপারেশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- কুড়িগ্রাম থেকে উলিপুরগামী ট্রেন ধ্বংস, কুড়িগ্রাম থেকে সড়ক ও রেলপথ মোগলবাসার উপর দিয়ে উলিপুর হয়ে চিলমারী পর্যন্ত বিস্তৃত মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার কারণে সড়কের চেয়ে রেলপথকেই বেশি নিরাপদ মনে করতো। তখন তারা নিজেদের যাতায়াত, রসদ ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের কাজ রেলপথেই সারতো। নভেম্বরের মাঝামাঝি মনসুর আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে মোগলবাসা ইউনিয়নের উপর দিকে যাওয়া রেলপথের অর্জুনমালায় রেল সেতুতে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। এতে ট্রেনের কয়েকটি বগি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পাকিস্তানী ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়। ২ নভেম্বর যাত্রাপুর বাজারে ৩ জন পাকিস্তানী সেনা ও ৯ জন রাজাকার এলে তাদের আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল।
তারা সবাই সংঘর্ষে নিহত হয়। এরপর ওই এলাকার সব রাজাকারকে জনগণের সহায়তায় ৯ নভেম্বর আত্মসমার্পণে বাধ্য করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিশেষ অবদান রাখা রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার বীর প্রতীক সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম টুকুর সার্বিক সহযোগিতায় পাঁচগাছী ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবশ এলাকায় মতিয়ার মেম্বারের বাড়িতে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সেখান থেকে নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে খবর নিয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাক হায়নাদের বিরুদ্ধে সস্ত্রযুদ্ধে অংশ নেয় এবং সম্মুখ যুদ্ধে পাক হায়নাদের পরাজিত করে। এই মুক্তিযোদ্ধা দলেরই একজন সক্রীয় সদস্য হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ওই সময় নিজ চোখে পাক হায়নাদের নির্মম নির্যাতনের ঘটনাগুলি প্রত্যক্ষ করে আজও তা স্মরণ করে কেঁদে উঠেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মোজাহিদ বাহিনীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন তার নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম শহরে প্রতিরক্ষাযুদ্ধে আহত মুক্তিসেনাদের গরুর গাড়িতে করে পাঁচগাছী-যাত্রাপুর হয়ে নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারীতে চিকিৎসার জন্য পৌছে দিয়েছেন।