মোঃ মাহিদুল হাসান (মাহি) নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
আজ ২৩ জুন, ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। উপমহাদেশের মানুষের জন্য ট্রাজেডির দিন। ২৬৩ বছর আগে ১৭৫৭ সালের এ দিনে পলাশীর আম বাগানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এক যুদ্ধে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় ঘটে। অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। মীর জাফর আলী খান গংদের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ এখনো দিনটিতে তাকে স্মরণ করে।

ইতিহাসবিদরা লিখেছেন, নবাবের সেনাবাহিনীর তুলনায় ইংরেজদের সেনা সংখ্যা ছিল অনেক কম। মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা না করলে নবাবের বিজয় ছিল সুনিশ্চিত। নবাব সিরাজের সঙ্গে সেদিন যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন পরবর্তীতে তাদের কারোই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।

ইতিহাসে দেখা যায়, ১৭১৯ সালে মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর ওই বছরই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে বসেন সুজাউদ্দিন খাঁ। অতঃপর আলীবর্দী খাঁ ক্ষমতায় বসেন। ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে আসীন হন। তরুণ নবাবের সাথে ইংরেজদের বিভিন্ন কারণে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ক্ষমতার দাবিদার ছিলেন নবাবের খালা ঘষেটি বেগম ও সেনাপতি মীর জাফর। তারাই ইংরেজদের সাথে নীলনকশা করে নবাবের পতন ঘটান। নবাব সিরাজের স্ত্রী-কন্যাকে ঢাকার জিঞ্জিরা কারাগারে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল।

ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ প্রথম ষড়যন্ত্রের জাল বোনেন রাজদরবারের অভিজাত সদস্য উমিচাঁদকে এজেন্ট নিযুক্ত করে। নেপথ্য নায়ক মীর জাফর তা আঁচ করতে পেরে নবাব তাকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অপসারণের উদ্যোগ নেন। কুটচালে পারদর্শী মীর জাফর পবিত্র কুরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ করায় নবাবের মন গলে যায় এবং মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতি পদে পুনর্বহাল করেন।

ইতিহাসবিদরা লিখেছেন, ইংরেজদের পূর্ণিয়ার শওকত জঙ্গকে সাহায্য করা, মীরজাফরের সিংহাসন লাভের বাসনা ও ইংরেজদের পুতুল নবাব বানানোর পরিকল্পনা, ঘষেটি বেগমের সাথে ইংরেজদের যোগাযোগ, ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ সংস্কার, কৃষ্ণ বল্লভকে কোর্ট উইলিয়ামে আশ্রয় দেয়া ইত্যাদির জন্যই ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে সকাল সাড়ে ১০টায় ইংরেজ ও নবাবের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মীর মদন ও মোহন লালের বীরত্ব সত্বেও জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, উর্মিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ কুচক্রী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে। সেই সাথে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য পৌঁনে দু’শ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।

মীর জাফরের মোনাফেকিতে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে উপমহাদেশের মানুষের কাছে ‘মীরজাফর’ বিশ্বাসঘাতক-মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হয়। অবশ্য ইংরেজরা দেশ শাসনের নামে ১৯০ বছর জুলুম নির্যাতনের পর উপমহাদেশের মানুষের আন্দোলনের মুখেই ১৯৪৭ সালের মাঝামাঝি সময় পাকিস্তান ও ভারত দু’টি দেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *