কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
স্বাধীনতার চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিলের সংগ্রহশালা কুড়িগ্রামের ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস এম আব্রাহাম লিংকনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১২ সালে এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু। শুধু ব্যক্তি উদ্যোগ নয়, নিজ বসতবাড়ির পুরোটা জুড়েই এই সংগ্রহশালার ব্যাপ্তি। নতুন ভবনের বরাদ্দ পেলেও এখনও তা নির্মাণাধীন। উত্তরের প্রত্যন্ত জেলায় বসতঘরে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে সমাজসেবায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ আব্রাহাম লিংকনকে ২০২২ সালের একুশে পদক দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান শাখার উপ-সচিব বাবুল মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে এ সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ওই তালিকার ১৭ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে এস এম আব্রাহাম লিংকনের নাম।

আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত। তার বাড়ি জেলা শহরের নাজিরা ব্যাপারি পাড়ায়। সেই বসতবাড়িতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। দোতলা বাসভবনের বসার ঘর, খাবারের ঘর, এমনকি শোবার ঘরেও সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দুই হাজারেরও বেশি প্রামাণ্য দলিল ও উপকরণ। অবশ্য লিংকনের বাসভবনের পাশে তারই দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জাদুঘরের চারতলা ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

পদক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘কোনও মানুষ পুরস্কারের জন্য কাজ করে না। কাজ মানুষকে সম্মান এনে দেয়। যারা আমাকে এই সম্মান দিয়েছেন আমি তাদের সম্মান জানাই।’

এই অনন্য প্রাপ্তিতে নিজের কোনও কৃতিত্ব নেই জানিয়ে লিংকন বলেন, ‘যারা ইতিহাস তৈরি করেছেন, আমাদের পূর্বপুরুষ, যারা একাত্তরে শহীদ হয়েছেন, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের আমি এই পদক উৎসর্গ করছি।’

‘আমি গ্রামে থাকা একজন মানুষ। আমাকে খুঁজে এটি দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচকদের কৃতজ্ঞতা জানাই’ যোগ করেন লিংকন।

আইন পেশা ও রাজনীতির বাইরে সমাজসেবায় আব্রাহাম লিংকনের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগান তার স্ত্রী নাজমুন নাহার সুইটি। স্বামীর এই অনন্য প্রাপ্তিতে নিজের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই প্রাপ্তিতে আমি খুবই খুশি। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রতি, যারা এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার স্ত্রী হিসেবে আমি গর্বিত।’

‘প্রত্যন্ত একটি এলাকায় একজন মানুষ নিভৃতে কাজ করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল যে- সেটা দেখেছেন এবং মূল্যায়ন করেছেন এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই স্বীকৃতিতে আমি অনেক খুশি।’ যোগ করেন সুইটি।

উত্তরবঙ্গ জাদুঘর শুরুর প্রসঙ্গে সুইটি বলেন, ‘আইন পেশার কাজ অল্প সময়ে শেষ করে লিংকন লেখালেখি ও সমাজসেবামূলক কাজেই বেশি সময় ব্যয় করেন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের কাজ নিয়ে বেশিরভাগ সময় পড়ে থাকে। তার স্বপ্ন ছিল যে, একটা জাদুঘর হবে। সেখানে যে স্মারকগুলো থাকবে সেগুলো দেখে পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানবে। মুক্তিযোদ্ধা আর দেশকে ভালোবাসবে। এভাবেই শুরু, বাড়ির ভেতর থেকে শুরু। প্রতিদিন রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীরা জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন এবং আমরা তা উপভোগ করি।’ নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বসতবাড়িতেই জাদুঘর থাকবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *