mail.google
ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ঃ
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রোববার (৭ আগষ্ট) সকাল ১১টায় একযোগে ৯০টি ওয়ার্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে লাখো কন্ঠে শপথ বাক্য পাঠ ও জনসচেতনতামূলক সমাবেশের মাধ্যমে কমলগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের ৯০টি ওয়ার্ডে ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে সকাল ১১টায় লাখো কন্ঠে শপথ বাক্য পাঠ করেন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, পরিচালনা পরিষদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও নানা শ্রেণী পেশার মানুষজন। গতকাল ৭ আগষ্ট রোববার সরেজমিস বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জনপ্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষজন নির্ধারিত কেন্দ্রে এসে জড় হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টা শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের প্লে কার্ড, ব্যানার নিয়ে বিদ্যালয় মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায়। অনেক বিদ্যালয় থেকে সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রা বের করে আবার ১১টার পূর্বে বিদ্যালয়ে এসে সমবেত হয়। বেলা ঠিক ১১টা বাজলেই বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের উপর শপথ বাক্য পাঠ করান। অনেক বিদ্যালয়ে আবার মায়েদের নিয়ে সমাবেশ করে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। প্রচন্ড খরতাপের মাঝে রোববার সকাল ১১টায় পুরো কমলগঞ্জ উপজেলা যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল এক শপথ বাক্যের মাঝে। বাল্য বিবাহ মুক্ত করার শপথ বাক্যের সাথে আবার সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত সমাজ গড়ারও কথা বলা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমদ উপজেলা সদরের আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান কমলগঞ্জ গণ-মহাবিদ্যালয়, উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ পারভীন আক্তার লিলি শমশেরনগর এ এ টি এম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শপথ বাক্য পাঠে ও সমাবেশে অংশগ্রহন করেন। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন কেন্দ্রে যোগ দেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, এক দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কমলগঞ্জবাসীকে সাথে নিয়ে তিনি এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। তাই রোববারের (৭ আগষ্ট) এ আয়োজন সফল হয়েছে বলা যায়। এখন থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা কোন বাল্য বিবাহ অনুষ্ঠান করা সহজ হবে না। কোন পরিবার বাল্য বিবাহ করাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার ২নং পতনঊষার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শ্রীসূর্য্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও ২নং পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় শপথ বাক্য পাঠ ও জনসচেতনতামূলক সমাবেশ এর মাধ্যমে ৯নং ওয়ার্ডসহ কমলগঞ্জ উপজেলাকে একযোগে বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হয়। “লাখো কন্ঠে শপথ নিব, কমলগঞ্জকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করব” এই শ্লোগান নিয়ে আজ রোববার (৭ আগষ্ট) সকাল ১১টায় শপথ বাক্য পাঠ করান শ্রীসূর্য্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা: ফাতেমা আক্তার। এর আগে যুবনেতা বদরুল ইসলাম রুবেলের সঞ্চালনায় জনসচেতনতামূলক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আশিক আলী, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা নুরজাহান ইসলাম, পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. সিকান্দর আলী, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মানিক মিয়া, অভিভাবক সদস্য ডা. বিদ্যুৎ ভূষন দাস, শিক্ষানুরাগী সদস্যা খুশবা বেগম, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আমরু মিয়া, মাওলানা বশির আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রীসূর্য্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জ্যোৎ¯œা রানী দাস তালুকদার, চম্পা রানী নাথ, শ্রীবাস রঞ্জন দাস ও মো. মুহিবুর রহমান। বিভিন্ন সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাল্য বিবাহের মাধ্যমে নারীর জীবন বিপন্ন করে তোলা হয়। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুহার কমানোর লক্ষ্যে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা অপিরহার্য। সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ রোধ ও ছেলে-মেয়ের সম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ ৭ আগষ্ট রোববার কমলগঞ্জ উপজেলার ৯০টি ওয়ার্ডে ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে লাখো কন্ঠে শপথ বাক্য পাঠ ও জনসচেতনতামূলক সমাবেশ এর মাধ্যমে কমলগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিবাহমূক্ত ঘোষণা করা হয়। সিলেট বিভাগ তথা সারাদেশে একটি উপজেলায় এক সাথে সবকটি ইউনিয়নের সবকটি ওয়ার্ডে লক্ষ মানুষ-এর বাল্য বিবাহের প্রতিরোধে শপথ গ্রহণ ও জনসচেতনতামুলক সমাবেশ এই প্রথম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *